ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সৃষ্টির মাঝে আনন্দ আছে

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৯ নভেম্বর ২০১৯

 রবীন্দ্রনাথ বলেছেন  সৃষ্টির মাঝে  আনন্দ আছে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ বাঙালীর দ্রোহে, নান্দনিক উচ্ছ্বাসে রবীন্দ্রনাথ অপরিহার্য মানব। শ্রীহট্ট তথা সিলেটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সম্পর্কের গভীরতা অতলস্পর্শী। শতবর্ষ পূর্বে বিশ্বকবি এসেছিলেন শ্রীভূমে। শতাব্দীর কালপটে দাঁড়িয়ে তাই আয়োজন করা হয় ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষ স্মরণোৎসব’। সিলেটে রবীন্দ্রনাথের আগমনের শতবর্ষ পূর্তি স্মরণোৎসবের ৪ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন শুক্রবার রাতে সিলেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন বলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন সৃষ্টির মাঝে আনন্দ আছে, আর সেই সৃষ্টি যদি দান করা যায়, তা হবে জনকল্যাণকর। আজ থেকে শত বছর পূর্বে সিলেটে কবি গুরু রবীন্দনাথ ঠাকুরকে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খীস্টান সবাই মিলে সংবর্ধনা দিয়েছিল, এই সিলেটের মাটিতে তাকে স্বাগত জানিয়ে তাকে আতিথেয়তা দেয়া হয়েছিল। তখন সুরমা নদীতে ব্রিজ ছিল না। ডিঙ্গি নৌকায় করে তাকে নদী পাড়ি দিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। সিলেটবাসীর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে কবি সেদিন সিলেট এসেছিলেন। আর আজ শত বছর পরে একইভাবে দলমত নির্বিশেষে সিলেটে রবীন্দ্রনাথের আগমনের শত বর্ষ পূর্তি স্মরণোৎসব পালন করে নিজেদের সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির উদাহরণ সৃষ্টি হলো। যা আমাকে অভিভূত করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন সর্বত্র হিংসা হানাহানি থাকলেও তা থেকে আমরা ভাল আছি, আমাদের মধ্যে এখনও শ্রদ্ধাবোধ, সম্মানবোধ রয়েছে। ১৪০৮ খ্রিস্টাব্দে কবি লিখেছেন সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এই সত্যটি আমাদের মধ্যে ধারণ করতে হবে। রবীন্দনাথ সিলেটবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তৎসময়ে সিলেটকে আসামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সিলেটবাসী এতে আপত্তি জানায়। সিলেটবাসীর দুঃখবোধ নিয়ে সেসময় কবি রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় সেটা ব্যক্ত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের আগমনের শতবর্ষ পূর্তি পালনের এই অনুষ্ঠান আমাদের আরও বহুদুর এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা আগামীতে আরও বড় অনুষ্ঠান করে সবাইকে দেখিয়ে দেব আমারও পারি। সভাপতির বক্তব্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সৃষ্টির আলো ছড়িয়ে রয়েছে। সিলেটে রবীন্দ্রনাথের এই অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সিলেটের আলাদা একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব। তিনি বলেন রবীন্দ্রনাথের আগমনের শতবর্ষ পূর্র্তি পালন অনুষ্ঠান আমার কাছে অত্যন্ত মধুর ও তৃপ্তির। সমাপনী সভায় বক্তব্য রাখেন স্মরণোৎসবের সদস্য সচিব সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক, লেখক ঊষা রঞ্জন ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য এনাম আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। সভার শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে বরণ করে নেন স্মরণোৎসবের সভাপতি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন এই অনুষ্ঠানের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও সহযোগিতা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় তিনি বক্তব্য রাখতে পারননি। সিলেটে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ : শতবর্ষ স্মরণোৎসব’ এর সমাপনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মনোভাব পোষণ করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সিলেটে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি কেন্দ্র করার দাবি উঠেছে। এতে আমাদের দ্বিমত নেই। সিলেটের মেয়র যদি একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠান, তবে তা অনুমোদন পেতে পারে। যেহেতু সিলেট থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, তারা এ বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখবেন। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিলেট আসবেন বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়েছিল। সর্বশেষ সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় নেত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। বিকেল ৪টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এরপর ছিল একক ও সম্মেলক আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও আলোচনা প্রভৃতি। রাতে সমাপনী সভা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×