ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যত্র ৪

পঞ্চগড়ে বাস অটো সংঘর্ষে নবদম্পতিসহ নিহত ৭

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ৯ নভেম্বর ২০১৯

 পঞ্চগড়ে বাস অটো সংঘর্ষে নবদম্পতিসহ নিহত ৭

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পঞ্চগড়ে যাত্রীবাহী মিনিবাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে নব-দম্পতিসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই পাঁচ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুজন মারা যান। শুক্রবার দুপুরে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রায় চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা ও ছেলে, লালমনিরহাটে মোটরসাইকেল আরোহী এবং চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক সিএনজিযাত্রী রয়েছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। পঞ্চগড়ে যাত্রীবাহী মিনিবাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়ে-মুচড়ে মিনিবাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে এক নবদম্পতিও রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কের আমতলী এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পরে বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। অটোরিক্সার চালকসহ সকল যাত্রী নিহত হলেও মিনিবাসের কোন যাত্রী হতাহত হয়নি বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন পঞ্চগড় সদরের সুরিভিটা গ্রামের আকবর আলী (৭০) ও তার স্ত্রী নুরিমা বেগম (৫৫), তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকার লাবু ইসলাম (২৯) তার নববধূ মুক্তি (১৯), সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চেকরমাড়ি এলাকার অটোরিক্সা চালক রফিক (২৮), রায়পাড়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন মাকুদ (৪৫) ও সাতমেড়া ইউনিয়নের সাহেবজোত এলাকার আকবর আলীর স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৪২)। জানা যায়, পঞ্চগড় থেকে কাজী ব্রাদার্সের একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস তেঁতুলিয়া যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে পঞ্চগড়ে আসা একটি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দিলে অটোরিক্সাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই দম্পতিসহ পাঁচজন নিহত হন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রায় চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আটকে দেয়। বিক্ষুব্ধ লোকজন এই দুর্ঘটনার জন্য হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি ও ব্যর্থতাকে দায়ী করে বিক্ষোভ করে। পরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পুলিশ সুপার মোঃ ইউসুফ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। কমিটিকে তিন কর্ম-দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মাগুরমারী এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাসটি একটি ছাগলকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অটোরিক্সাটিকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় অটোরিক্সাটি বাসের সঙ্গে আটকে যায়। এ অবস্থায় বাসটি প্রায় একশ’ মিটার গিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছে ধাক্কা খায় এবং আটকে যায়। সহিদুল ইসলাম নামে ওই এলাকার এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কের ওই স্থানটিতে হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে প্রতিদিনই চাঁদাবাজি করে। বাসসহ অন্য যানবাহন পুলিশকে দেখে দ্রুতগতিতে পালানোর চেষ্টা করে। যে কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে তিনি জানান। কেরানীগঞ্জে বাবা ছেলে নিহত কেরানীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল যাত্রী বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আসাদুল হক ইপু (৪০) ও তার সন্তান সোহান (৬)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আসাদুলের স্ত্রী রেশমা আক্তার। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা নবাবগঞ্জ সড়কের রোহিতপুর পোড়াহাটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর পথচারীরা তিনজনকেই আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে আসাদুল ও সোহানকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঢামেকে ভর্তি রেশমা আক্তার জানান, রাজধানীর সায়েদাবাদ করাতিটোলা এলাকায় তারা থাকেন। তার স্বামী বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। শুক্রবার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে নবাবগঞ্জের বাগমারা এলাকায় শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। তাদের মোটরসাইকেলটি রোহিতপুর পোড়াহাটি এলাকায় পৌঁছলে একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনজনই ছিটকে পাকা সড়কে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। লালমনিরহাটে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হাতীবান্ধা ট্রাকচাপায় খায়রুল ইসলাম (৩৫) এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের সিঙ্গিমারী শস্যগুদাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত খায়রুল ইসলাম পাটগ্রামে জোংড়া ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের আমির আলীর ছেলে। স্থানীয়রা জানান, রংপুর থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন খায়রুল ইসলাম। সিঙ্গিমারী শস্যগুদাম এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা লালমনিরহাটগামী পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তার পরিবারের লোকজন পরিচয় শনাক্ত করেন। ঘাতক ট্রাকটি পালিয়ে গেছে। পটিয়ায় প্রাণ গেল সিএনজি যাত্রীর মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তা কোনভাবে বন্ধ হচ্ছে না। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কে গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি চেয়ারকোচের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক সিএনজি যাত্রী। নিহতের নাম রনজিত বড়ুয়া (৫৫)। তিনি রাঙ্গুনিয়ার মৃত জতিন্দ্র লাল বড়ুয়ার পুত্র। পটিয়া উপজেলার নাইখাইন এলাকায় এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম ছেড়ে আসা কক্সবাজারমুখী গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী চেয়ারকোচ পটিয়া নাইখাইন এলাকায় পৌঁছলে শহরমুখী একটি সিএনজির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রনজিত বড়ুয়া নামের এক সিএনজি যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে গ্রীনলাইন পরিবহনের চেয়ারকোচ ও সিএনজি ট্যাক্সি পুলিশ উদ্ধার করেছে।
×