ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড জয়ী কামাল

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১২ নভেম্বর ২০১৯

ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড জয়ী কামাল

সংগঠনের শুরুর গল্প আনোয়ারা উপজেলার মালঘর গ্রামের ১০ জন স্বপ্নবাজের হাত ধরে যাত্রা হয় এই সংগঠনের। যাত্রা ১ এপ্রিল ২০১৬। একটি ব্লাড ক্যাম্পেইন দিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেন, সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ফরিদ, নাইম, ইমন, এহসান, সাজ্জাদ, হেলাল, নাজিম, গিয়াস অন্যতম। এরপর এক বছর এই গ্রামে এলাকা লাইটিং, শীতবস্ত্র, ঈদবস্ত্র, ফিতার সামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ, রিক্সাওয়ালাদের মাঝে রেইনকোট এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে সক্ষম হই। সামাজিক এই দায়বদ্ধতা জেগে উঠল যেভাবে ছোট বেলার একটি ঘটনা আমার মনে দাগ কাটে। আমার আম্মু যখন ভিক্ষুককে কিছু দিতেন আমার হাত দিয়ে দিতেন। তখন থেকে অন্যের জন্য কিছু করার প্রেরণা ছিল সবসময। কিন্তু আমার ক্ষমতা ছিল না দেয়ার তেমন। আশপাশে যেদিকে তাকাই দেখি বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, গরিবরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তখন থেকে চিন্তা করলাম আমি হয়ত একা কিছু করতে পারব না, কিন্তু মানবিক বন্ধুদের নিয়ে যদি একটি টিম করি তাহলে হয়ত কাজটি সহজ। অনলাইনে কত সময় অকারণে নষ্ট করি, সে সময়টা যদি ভাল কাজে ব্যয় করি তাহলে অসহায়দের যেমন উপকার হবে তেমনি যুবসমাজ নষ্ট হবে না, প্রযুক্তির স্বাদ পাবে। ধনীদের থেকে কিছু টাকা যদি গরিবদের মাঝে বণ্টন করে দিতে পারি তবে সমাজে ধনী-দরিদ্র কোন বৈষম্য থাকবে না, থাকবে না অসহায়দের হাহাকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই ধনীদের কোন সহযোগিতা আদৌ পাইনি প্রতিবন্ধকতা জয় করার গল্প শুরুটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাদের থেকে সহযোগিতার আশায় সংগঠন শুরু করেছি তারা শুধু অসহযোগিতা করেননি বরং প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় এবং রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাঁকা চোখে তাকানো শুরু করেন। ওনারা মনে করেন এসব ওদের কাজ, সবাই ওদের ভাল বলবে, আমাদের ভাল কেন বলবে? ওনারা আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো শুরু করেন। যে ছেলেগুলোর বিপক্ষে কখনও কোন অভিযোগ ছিল না তাদের পরিববারে জমা হচ্ছে অনেক অভিযোগ। এরই প্রেক্ষিতে অনেকে পরিবারের চাপে বা হতাশ হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান। এরপর চিন্তা করি আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে যাব। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মানবতার কাজ ছড়িয়ে দিলাম। সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং প্রাবসীরা। স্বপ্নযাত্রীর বর্তমান কার্যক্রমগুলো আমাদের স্কুলে বর্তমানে ৫০ জন শিক্ষার্থী আছে যাদের শিক্ষার সমস্ত দায়িত্ব নেয়া হয়েছে। এর বাইরে অসচ্ছল, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিচ্ছি। ২০১৭ সালে ১০০ শিক্ষার্থীকে খাতা, কলম, ব্যাগ দিয়েছি। পরের বছর প্রায় ২০০ জনকে। ন্যূনতম এক বছর ব্যবহার করতে পারবে। ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। পড়াশোনায় উৎসাহিত, নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা, মানবসেবায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এখন পর্যন্ত ৩০০০ জনের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। দুস্থ কয়েকজনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সঙ্গে রক্তদান বৃক্ষরোপণের কর্মসূচী আছে। স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যদের মাঝে বর্তমানে স্বপ্ন যাত্রীর সদস্য সংখ্যা ৭০ জন। স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ১০০ জন, ফুড ব্যাংকের সদস্য ৬৫ জন এবং ব্লাড ডোনারসের সদস্য ৬৫ জন। শুরু হয়েছিল মোট ৩০ জন নিয়ে। সেই সংখ্যা এসে এখন পৌঁছেছে ৩০০ জনে। আগামী দিনের স্বপ্ন : মানবতার কোন সীমা পরিসীমা নেই। মানবতার ডাককে কোন গণ্ডিতে বাঁধা যায় না। সীমা পরিসীমাহীন মানবতার সেবা করে যাওয়াই আগামীর লক্ষ্য। যাত্রা রাঙ্গামাটি থেকে শুরু হয়েছিল, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি দুটি করে সব জেলাতে নিজেদের কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চাই। বৈষম্যহীন সমাজ আগামীর প্রত্যাশা।
×