ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছরে তিন শতাধিক রেল দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০১৯

দশ বছরে তিন শতাধিক রেল দুর্ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। বেড়েছে প্রযুক্তিগত উন্নত সুবিধা। তবুও সবচেয়ে নিরাপদ যাত্রা হিসেবে পরিচিত রেলপথেও দুর্ঘটনা থামছেনা। গত ৩০ বছর আগেও রেল দুর্ঘটনা যেসব কারণে ঘটেছে এতদিন পরও এর পরিবর্তন হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেল দুর্ঘটনা এড়াতে তিনটি বিষয় সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যে অন্যতম হলো ডাবল লাইন নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ লেবেল ক্রসিংগুলোতে লোকবল নিয়োগ দেয়া ও ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের সচেতন হয়ে কাজ করা। মূলত এই তিন কারণেই রেলপথে বড় বড় সব দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, ছয় কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু সংস্কার বা পুণনির্মাণেরও তাগিদ দিয়েছেন তারা। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারী সংগঠনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় বছরে রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে দুই হাজার ২২২জন। ছোট বড় মিলিয়ে মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৯৭টি। তাই নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করতে সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ১৬জন নিহত হয়েছে। শতাধিক আহত। চিকিৎসকরা বলছেন হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এ দুর্ঘটনায় বিকাল পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে আর উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার জন্য সাধারণত দুটি কারণকে দায়ী করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা মনে করছেন, দুর্ঘটনার পেছনে বড় যে দুটি কারণ থাকতে পারে তার একটি হচ্ছে হয় তৃর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসকে সিগন্যাল দেয়া হয়নি বা পরে দেয়া হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক হয়তো ঘুমিয়ে ছিলেন তাই সিগন্যাল দেখেননি। এই দুটির কোনো একটির কারণেই মন্দবাগ স্টেশনের কাছে উদয়নকে ধাক্কা দেয় তূর্ণা নিশীথা। তবে মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সতর্ক সংকেত) দেয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি করছেন তিনি। প্রশ্ন হলো কেন এই ভুল বা দুর্ঘটনা। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমোটিভ মাস্টার সিগন্যাল ভঙ্গ করেছেন। এ কারণেই ভয়াবহ এই দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। আমরা বিস্তারিত জানার জন্য জেলা প্রশাসন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এ ব্যাপারে আমাদের রেলের যারা কাজ করেন তাদের সতর্ক করা উচিত। সেই সাথে সাথে যারা রেলের চালক তাদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক জানিনা কেন এই শীত মৌসুম আসলেই কিন্তু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই রেলের দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। রেল যোগাযোগ নিরাপদ সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রেল যোগাযোগ সবচেয়ে নিরাপদ এবং আমরাও এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা নতুন রেল সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি। পণ্য পরিবহন, মানুষ পরিবহন সবক্ষেত্রেই রেল নিরাপদ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জুন সিলেটের কুলাউড়ার বরমচাল রেল স্টেশনের অদূরে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস একটি সেতু ভেঙ্গে খালে পড়ে গেলে পাঁচ জন নিহত হয়। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। দীর্ঘদিন সেতুটি মেরামত না করার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে স্থানীয় মানুষের ধারনা। ২৪ জুনের পর সবচেয়ে বড় রকমের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল মঙ্গলবার রাতে। ছয় কারণে রেল দুর্ঘটনা ॥ যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বেসরকারী সংগঠন নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে এসব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পেছনে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো: ১. মোবাইল ফোনে আলাপরত অবস্থায় রেলপথ পারাপার ২. রেলপথ সংলগ্ন এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীদের সচেতনতার অভাব ৩. রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই অপরিকল্পিত ও অবৈধ লেবেল ক্রসিং (রেলক্রসিং) নির্মাণ ৪. রেলপথ ক্রসিংগুলোর (সড়ক ও রেলপথের সংযোগ স্থল) কর্মচারিদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ৫. কিছুসংখ্যক রেলসেতুসহ অনেক স্থানে রেলপথ দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ৬. দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর চালকদের অসতর্কতা। জানতে চাইলে সংগঠনের সাধ:ারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, কিছু কিছু ত্রুটি বিদ্যুতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে রেল হবে সবচেয়ে নিরাপদ পথ। তাছাড়া দেশের মানুষ এখনও রেলপথকে সবচেয়ে নিরাপদ ভেবে যাতায়াত করেন। যে কোন মূল্যে রেল দুর্ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক না কাটলে রেলে দিন দিন লস বাড়বে। রেলপথে বড় বড় যত দুর্ঘটনা ॥ এর আগে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে টঙ্গীতে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ১৭০ জন। আহত হয়েছিল চার শতাধিক মানুষ। ৩০ বছর আগে সেই দুর্ঘটনাও ছিল দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে। এরপর চট্টগ্রাম লাইনে বেশ কয়েকটি মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ গেছে শতাধিক যাত্রীর। যাত্রীকল্যাণ সমিতি ও রেল নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা বলছেন, সিগন্যালের দুর্বলতায় মুখোমুখি সংঘর্ষে ও লাইনচ্যুতির কারণে প্রাণ গেছে যে সহ¯্রাধিক মানুষের চাইলেই তা এড়ানো সম্ভব ছিল। আর স্প্যান ভেঙে পড়ে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৩ সালের ২২ মার্চ ঈশ্বরদীতে। সেতুর স্প্যান ভেঙে কয়েকটি বগি নিচে শুকনা জায়গায় পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৬০ জন যাত্রী নিহত হন। হিসাব বলছে, চট্টগ্রাম রেললাইনে গত ৩০ বছরে বেশ কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কাছাকাছি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৩ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হন। এই একই লাইনে ২০১০ সালে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘মহানগর গোধূলি’ ও ঢাকাগামী মেইল ‘চট্টলা’র মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় চট্টলা ট্রেনের একটি বগি মহানগর ট্রেনের ইঞ্জিনের ওপরে উঠে যায়। সেই দুর্ঘটনায় চালকসহ মোট ১২ জন নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া, উত্তরবঙ্গেও বেশকিছু ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ‘হিলি ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটির দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় পার্বতীপুরগামী ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের এক নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী আরেকটি আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এসময় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটলে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয় ট্রেনকে। সড়কের চেয়ে রেলপথে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা কম। তবে ট্রেন দুর্ঘটনায় যারা আহত হন তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। তাদের খোঁজও আমরা রাখি না। ১১ নবেম্বরের দুর্ঘটনাকে ভয়াবহতার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরচেয়ে প্রাণের ক্ষতি অন্য দুর্ঘটনায় বেশি ঘটলেও ভয়াবহতার দিক দিয়ে এটি অনেক এগিয়ে। মোজাম্মেল হক বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা বেশিরভাগই হয় লাইনচ্যুত হয়ে বা মুখোমুখি সংঘর্ষে। রেলের গাফিলতি নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বললেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। রেলে অনেক বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, সেটায় মনোযোগ তাদের নেই। রেল গবেষক ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান তার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, ট্রেন চালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও তারা বয়স্ক হওয়ায় এধরনের দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। লোকবল সংকটের কারণে এদেরকে গ্রেড দিয়ে উন্নীত করার মতো বিষয়গুলো এজন্য দায়ী। সিগন্যাল ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সিগন্যালিং ব্যবস্থায় সমস্যা রয়ে গেছে। এধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসল কারণ আড়ালে চলে যায়। ট্রাফিকিং বিভাগ, মেকানিক্যাল, সিগন্যালিং ও মেইনটেনেন্স বিভাগ একে অপরকে দোষ দিতে থাকে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পরের যে প্রস্তুতি সেটি আমাদের একেবারেই নেই। দুর্ঘটনায় যদি আগুন ধরার মতো ঘটনা ঘটতো, সেক্ষেত্রে ট্রেনের মধ্যে আগুন নির্বাপণের সক্ষমতা কি আমরা রাখি? দুর্ঘটনার পর ট্রেনটিকে সরিয়ে নেয়াটাই একমাত্র পরিত্রাণ হয়ে দাঁড়ায়। সার্বিকভাবে আমরা রেল বিভাগের গাফিলতি দেখতে পাই। আট বছরে এক হাজার চারশ দুর্ঘটনা ॥ ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জাতীয় সংসদে গত ৮ বছরে রেল দুর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন। তার দেয়া তথ্য মতে, ২০০৯-১০ থেকে ১৬-১৭ সাল পর্যন্ত ৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫৮৬ জন । সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৩টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৪ টাকা। দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জানান, সমগ্র বাংলাদেশে রেলওয়েতে লাইনচ্যুতিসহ মেইন লাইন ও শাখা লাইনে ২০০৯-১০ সালে ৩০৮টি, ২০১০-১১ সালে ২২৪টি, ২০১১-১২ সালে ১৮২টি, ২০১২-১৩ সালে ১৭৬টি এবং ২০১৩-১৪ সালে মোট ২০৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৮৬ জন। এসব দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৪ টাকা। সেতু কেন্দ্রীক দুর্ঘটনা ॥ আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৩ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে রেলসেতু কেন্দ্রিক। ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে গত দেড় বছরে ৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে; যার মধ্যে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ-কুশিয়ারার মধ্যস্থলের রেলসেতু ভেঙে দুই দিন ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। একই পথে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ মাধবপুরের ইটাখলা রেলব্রিজ ভেঙে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ৫টি বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। ১৯৭২ সালের ২ জুন যশোর ট্রেন দুর্ঘটনায় ৭৬ যাত্রী মারা যায় এবং ৫০০ যাত্রী আহত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার কাছে একটা ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ৭০ যাত্রী মারা যায় এবং ৩০০ যাত্রী আহত হয় । ১৯৮৫ সালের ১৩ জানুয়ারি খুলনা থেকে পার্বতীপুর গামী সীমান্ত এক্সপ্রেসের কোচে আগুন ধরে যায়। এতে ২৭ জন যাত্রী মারা যায় এবং ২৭ জন আহত হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ মার্চ সর্বহারার নাশকতায় ভেড়ামারার কাছে ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এবং নদীতে পড়ে যায়। ২৫ জন যাত্রী মারা যায় এবং ৪৫ জন আহত হয় । বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ২০১৮ সালে সড়ক-রেল-নৌপথ ও আকাশপথে ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। একই সঙ্গে এ দুর্ঘটনায় আরো ১৫ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৮ সালে রেলপথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত এবং ২৪৮ জন আহত হয়। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মোজাম্মেল হক চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের দ্রুত উদ্ধার ও বিনামূল্যে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবী জানান। একই সাথে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে পদে পদে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও দায়িত্ব পালনে গাফেলতির মহোৎসব চলছে। এখানে দুর্নীতিবাজরা পুরস্কৃত হচ্ছে, সৎ অফিসাররা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। যাত্রী সেবার মান ও ট্রেনের গতি গাণিতিক হারে নি¤œমুখী হচ্ছে। অথচ সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে গতিশীল করতে প্রায় অর্ধশত যাত্রীবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন করে এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিবৃতিতে দাবী জানানো হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরো বলেন, এই রেল দুর্ঘটনায় দায়িত্ব পালনে গাফিলতিকারী অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং ত্রুটি, ঠিকাদারের দুর্নীতি যারা দায়ী হোক না কেন, জড়িত তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হোক। অন্যথায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সামনে আরো বড় বড় বিপদ আসন্ন বলে বিবৃতিতে সতর্ক করেন তিনি।
×