ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগে বাধা

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

বিনিয়োগে বাধা

বর্তমান সরকার গত কয়েক বছর ধরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ছাড়া হয়েছে বাংলা বন্ড। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দিল্লী ইকোনমিক সামিট, জাতিসংঘসহ বিশ্বের যেখানে যখনই রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন, একদল ব্যবসায়ী তথা বিনিয়োগকারীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিদেশে সফরকালীন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী চেম্বার সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তবু বাস্তবতা এই যে, সরকারের বহুমুখী আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। দেশীয় বিনিয়োগও হচ্ছে না তেমন। শনিবার ঢাকা চেম্বারের আলোচনায় মূলত এসবই উঠে এসেছে এবং বিনিয়োগের বাধা তথা অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ। ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়া এবং উচ্চ করকে বিনিয়োগের অন্যতম বাধা মনে করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদের হার। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বার বার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা ১১ থেকে ১৫ শতাংশ। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি। এর জন্য অবশ্য খেলাপী ঋণও কম দায়ী নয় কোন অংশে, মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামো ব্যয়, কাঁচামালের অভাব, বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার অভাব, কোম্পানির করের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হার নির্ধারণ ইত্যাদি। যে কারণে গত ছয় বছরে জিডিপিতে সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারী বিনিয়োগ রয়ে গেছে একই স্থানে ২২-২৩ শতাংশ। অর্থাৎ, দেশে এখন বিদেশী বিনিয়োগ জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা এশিয়ায় সর্বনিম্ন। অথচ সরকার সহজে ব্যবসা করার সূচক বর্তমানের ১৬৮তম অবস্থান থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০তম করতে ইচ্ছুক। অর্থমন্ত্রী বার বার জোর দিয়ে বলেছেন, খুব শীঘ্রই ব্যাংকগুলোতে সিঙ্গেল ডিজিট এবং সরল সুদহার কার্যকর করা হবে। যে ব্যাংক তা কার্যকর করবে না তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে ব্যবস্থা। এটি সরকার তথা সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত। এর বাইরেও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থা-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন, যা সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ব্যাংকগুলো আসলেই উচ্চহারে সুদ নেয়। এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করা দুরূহ। আর সে কারণেই সিঙ্গেল ডিজিট ও সরল সুদহার কার্যকর করা এখন সময়ের দাবি। দেশে তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান বাড়বে। এর পাশাপাশি কমে আসবে ঋণ খেলাপীর সংখ্যাও। সরকার এটি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পঋণের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের বর্তমানে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া ঋণ নেয়ার সময় প্রক্রিয়াকরণ ফিসসহ আরও অন্য যেসব ফি নেয়া হয়। তাতে এ হার ২০-২২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদ বা বিনিয়োগের মুনাফার হার নমনীয়-সহনীয় হওয়া মানেই তা ব্যবসাবান্ধব হবে। আমাদের দেশে ঘটেছে উল্টো। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার কমানো সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষেই সম্ভব হবে। ব্যাংকিং খাতে সুবাতাস বয়ে যাক, এটাই প্রত্যাশা। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা ও কর্মতৎপরতা জরুরী।
×