ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান

ভ্যাকসিন হিরো শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৩ নভেম্বর ২০১৯

ভ্যাকসিন হিরো শেখ হাসিনা

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৭৪তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতায় পোলিও এবং রুবেলার মতো মরনব্যাধি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি ও হেপাটাইটিস ‘বি’র মতো ঘাতক রোগ নির্মূল করা হয়েছে টিকাদানের মাধ্যমে। আর এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দফতরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (এঅঠও)-এর বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা এ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। ড. এনগোজি পুরস্কার হস্তান্তরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ পুরস্কার তাদেরকেই প্রদান করা হয় যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরী টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে শুধু টিকাদান কর্মসূচী নয়, শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও অভিষিক্ত করা হয়। শিশুদের জীবন রক্ষায় বিশ^ব্যাপী কাজ করছে এঅঠও । সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলেন, টিকাদান কর্মসূচীতে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি একজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন পরিস্থিতি ভাল ছিল না। তিনি নিজে টিকার সাফল্য ও গুণাগুন নিয়ে মানুষের কাছে যান। নিজ হাতে শিশুদের ভ্যাকসিন খাওয়াতে শুরু করেন। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে আস্তে আস্তে দেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা গ্রহণ করেছে। এখন সবাই বিশেষ করে শিশুর মায়েরা এই কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচী এখন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে সাফল্যগাথা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্কুল এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দেয়া হয়ে থাকে। শেখ হাসিনা সরকার পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১’র মাধ্যমে দেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান যেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি নিশ্চিত হবে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ডিটিপিÑ৩ বিশেষ করে ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও হুপিংকাশি কাভারেজ ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এমসিসিÑ১ কাভারেজ ৭৭ থেকে বেড়ে ৯৭ শতাংশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চান এবং সে লক্ষ্যে তার সরকার পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। তিনি মনে করেন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের ৮০ ভাগ কাজ প্রাথমিক স্তরেই পূরণ করা সম্ভব। তাই শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা গেলে তা সংক্রামক ও অসংক্রামক রোধ প্রতিরোধে প্রথম প্রাচীর হিসেবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক বিশে^র কাছে একটি বড় উদাহরণ। সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন স্বাস্থ্যসেবা নেয় এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুধু প্রতিমাসে গড়ে এক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (টহরাবৎংধষ ঐবধষঃয ঈড়াবৎধমব) কর্মসূচী পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করেছে। গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (এঅঠও) সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । বিশে^র দরিদ্র শিশুদের কিভাবে সম্পূর্ণভাবে ইমিউনাইজেশনের আওতায় আনা যায়; এমনি একটি লক্ষ্য নিয়ে সংস্থাটি সরকারীÑবেসরকারী (চধনষরপ থ চৎরাধঃব) সমম্বয়ের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু করে। এঅঠও গঠনের পরপরই ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে এঅঠও এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় । ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইমিউনাইজেশন কর্মসূচীর সফলতার জন্য এঅঠও পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর জন্য জাতিসংঘের এমডিজিÑ৪ পুরস্কার গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচীর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের এঅঠও পুরস্কার গ্রহণ করে। জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইযুথ’ সম্মাননা দিয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ইউনিসেফ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সন্ধ্যা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা কোর শেখ হাসিনার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দেন। ইতোমধ্যে দেশে ৪টি মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে কার্যক্রম চলছে এবং ১টি খুলনায় বাস্তবায়নাধীন। দেশে ১৪,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক তৃণমূলে সফলতার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচীসহ চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী মিলে ১১১টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। নার্সিং শিক্ষা গ্র্যাজুয়েট কোর্সসহ সম্প্রসারিত হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শিক্ষকÑচিকিৎসক নিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও ওষুধ নীতি হাল নাগাদ করা হয়েছে। অটিজম ও ¯œায়ু বিকাশজনিত সমস্যার চিকিৎসা ও সচেতনতামূলক কর্মকা- বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতাল ও মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগÑসুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বেসরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মেডিক্যাল শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মোতাবেক অগ্রগতি হচ্ছে। এখন প্রয়োজন মান নিয়ন্ত্রণকে আরও জোরদার করা। বঙ্গবন্ধু কন্যার চারবার দেশ পরিচালনার মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মেডিক্যাল শিক্ষায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এ ধারা বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে অব্যাহত থাকলে অবশ্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোন কঠিন বিষয় হবে না। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×