ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

বলিউডের পুলিশ অফিসার

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 বলিউডের পুলিশ অফিসার

সালমান খান আবার ভন্ড পুলিশ অফিসার, চুলবুল পান্ডে হয়ে দর্শকদের সামনে আসছেন। আগামী ডিসেম্বরে মুক্তি পাচ্ছে ‘দাবাং থ্রি’। ২০১০ সালে একজন অসৎ ভন্ড পুলিশ অফিসার চুলবুল পান্ডের ভূমিকায় ‘দাবাং’ ছবিতে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়ে রীতিমতো ক্রেজ সৃষ্টি করেন। বাহ্যিকভাবে চুলবুলকে একজন ভন্ড অসৎ পুলিশ মনে হলেও ভেতরে ভেতরে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের অনেকটাই সচেতন ও সিরিয়াস। গত কয়েক বছর ধরে অনেকবার প্রস্তুতি নিলেও অন্যান্য সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সালমান খান চুলবুক পান্ডে হয়ে ‘দাবাঙ থ্রি’ ছবির জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারেননি। যদিও এ চরিত্রে দর্শক তাকে সাদরে গ্রহণ করে, তবুও সালমান ছবিটির শূটিং শুরু করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ‘দাবাঙ থ্রি’র কাজ শেষ করেছেন জনপ্রিয় এই সুপারস্টার। চুলবুল পান্ডের নতুন কর্মকান্ড দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন অগণিত দর্শক। বলিউডের সিনেমায় পুলিশ চরিত্রটি ঘুরে ফিরে আসছে বহুদিন থেকে। সমাজে ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ নীতি পরিপালনে দায়িত্ববান পুলিশ চরিত্রগুলো এক সময়ে হিন্দী সিনেমায় গল্পের অনুষঙ্গ হিসেবে এলেও ধীরে ধীরে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে চিত্রনাট্যে। কখনও কঠিন নীতিবান শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের পুলিশ আবার কখনও হালকা খোশ মেজাজের মানুষ হিসেবে এই চরিত্রগুলো দর্শকদের অলোড়িত করে গেছে। পুলিশ চরিত্রগুলো রুপালি পর্দায় যথাযথ রূপায়ণ যে কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর জন্য কোনকালেই সহজ ছিল না। অভিনীত চরিত্রটিকে যথাযথভাবে রূপায়ণ করে দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা এবং দর্শকদের মনে আলাদাভাবে প্রভাব বিস্তার করাটা তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও হিন্দী সিনেমার বেশ কিছু সাড়া জাগানো শক্তিশালী পুলিশ চরিত্র দর্শকমনে এখনও বেশ ভালভাবে জায়গা করে আছে। এ প্রসঙ্গে ‘শোলে’ ছবির অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার ঠাকুর বলদেব সিংয়ের চরিত্রটির কথা বলা যায়। সঞ্জীব কুমার, অভিনীত দুর্দান্ত এই চরিত্রটি আজও দর্শকদের আলোড়িত করে। দায়িত্ববান, সৎ, নির্ভীক, দুর্ধর্ষ পুলিশ অফিসার ঠাকুর বলদেব সিং কুখ্যাত ডাকাত গব্বর সিংয়ের বিরুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ শুরু করে, শেষ পর্যন্ত নিজের পুরো পরিবারকে হারায়। তার দু’হাত কেটে ফেলে গব্বর কিন্তু তারপরও অবসরপ্রাপ্ত এই বয়স্ক পুলিশ কর্মকর্তা তার কর্তব্যকর্মে অটল, অনড় থাকে। ‘দিওয়ার’ ছবিতে অপরাধী আপন সহদোরের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরতে দ্বিধাহীন ভাই পুলিশ অফিসার রবি ভার্মার কথা দর্শক খুব সহজে ভুলতে পারে না। রবি চরিত্রটি রূপায়ণ করেছিলেন শর্শী কাপুর। অপরাধী ভাই বিজয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ওদিকে ‘জানজির’ ছবিতে অমিতাভ একজন নীতিবান পুলিশ অফিসার ইন্সপেক্টর বিজয় খান্না চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়েছিলেন। বলিউডের সাড়া জাগানো পুলিশ চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘জানজির’র ছবিতে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত বিজয় খান্না চরিত্রটির কথা এসে যায় খুব সহজেই। ‘শক্তি’ ছবিতে নীতিবান পুলিশ কমিশনার বাবা অশ্বিনী কুমার এবং তার অপরাধী সন্তান বিজয় কুমারের দ্বন্দ্বের নাটকীয় গল্পের কথা দর্শক সহজে ভুলতে পারে না। দোর্দ- দাপুটে সৎ এবং দায়িত্বশীল পুলিশ কমিশনার বাবার ভূমিকায় দিলীপ কুমার এবং অপরাধী সন্তানের চরিত্রে অভিতাভ বচ্চনের দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের আবিষ্ট করে রেখেছিল। এভাবে যুগে যুগে বলিউডের সিনেমায় পুলিশ চরিত্রগুলো এসেছে আদর্শ, নীতিবোধ, দায়িত্বশীলতা, সাহসী, দেশপ্রেমিক ইত্যাদির সংমিশ্রণে দুর্দান্ত এক একটি ব্যক্তিত্বের স্বরূপ নিয়ে। দর্শক পর্দায় তাদের দুঃসাহসী কর্মকান্ড দেখে চমকে উঠেছে। আদর্শের জন্য নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে দ্বিধা সংকোচ ভয় না করা মানুষগুলো কিভাবে চরম আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকে বলিউডের পুলিশ চরিত্রগুলো বিভিন্ন সময়ে দর্শকদের তথা জনমনে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সমাজ জীবনে দুর্নীতি ক্রমেই বাড়ছে। প্রশাসনে দুর্নীতি ও অনিয়ম বাসা বেঁধেছে। পুলিশি কর্মকান্ডের বাস্তব চালচিত্র নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে বলিউডি চিত্রপরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকাররা সেলুলয়েডে পুলিশ চরিত্রগুলো উপস্থাপনে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। সৎ, নির্ভীক, নীতিবান পুলিশের পাশাপাশি অসৎ, দুর্নীতিবাজ, অপরাধী চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে চলা খারাপ পুলিশের চরিত্রেও এসেছে বলিউডের সিনেমায়। ছবির গল্পের শেষে অসত্য, দুর্নীতি, অনিয়ম, অপরাধী চক্রের ধ্বংস এবং সততা, নীতিবোধ, মূল্যবোধ, শুদ্ধাচারের জয় দেখানো হলেও নানাভাবে অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রগুলো এসেছে। এর মাধ্যমে সৎ দায়িত্ববান নীতিপরায়ন দেশপ্রেমিক পুলিশের জয়গান তুলে ধরা হয়েছে বলিউডের অনেক সিনেমায়। এ প্রসঙ্গে ‘খাকি’, আব তক ছাপ্পান, শূন্স, আন্দর বাহার, থানেদার, পুলিশ অফিসার, সারফারোশ, দৃশ্যম’, ‘সত্যমের জয়তে, রাওডি রাঠোর, সিংহাম, সিম্বা, গঙ্গাজল, জয় গঙ্গাজল, এ ওয়েডনেসডে ‘তালাশ’, ‘মদানি’, ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন মুম্বাই, আন্ধা কানুন’, ‘খলনায়ক, ‘ফুলবানে অঙ্গারে’, ‘জখমি আওরাত’, ‘স্পেশাল ছাব্বিশ, ওয়ান্টেড প্রভৃতি বলিউডি সিনেমার কথা এসে যায়। যেখানে বলিউডের ডাকসাইটে সব অভিনেতা অভিনেত্রীরা পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে সব শ্রেণীর দর্শকদের আলোড়িত করেছেন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও রূপালি পর্দার স্মরণীয় পুলিশ চরিত্রগুলো আজও দর্শক স্মৃতি অম্লান। এ প্রসঙ্গে ‘খাকি’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের দুর্দান্ত অভিনয়ের কথা আজও ভুলতে পারে না কেউ। ‘থানেদার’ ছবিতে সঞ্জয় দত্ত অভিনয় করেছিলেন মজার এক পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। ‘সত্যমের জয়তে’ নামে দুটি পুলিশী কাহিনীনির্ভর সিনেমা তৈরি হয়েছে বলিউডে। আশির দশকে নির্মিত সত্যমের জয়তে ছবিতে একজন দুর্ধর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সেজেছিলেন বিনোদখান্না, অনবদ্য অভিনয়গুণে সেই ছবিতে তার অভিনীত চরিত্রটিকে উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন। গত বছর আরেকটি নতুন ‘সত্যমের জয়তে’ ছবি মুক্তি পেয়েছে। এখানে সৎ নির্ভীক সাহসী পুলিশ অফিসার হয়েছেন জন আব্রাহাম। পুলিশ অফিসার বাবার দুই সন্তানের গল্প নিয়ে আবর্তিত ছবিটিতে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইরত দুই পুলিশ অফিসার ভাই জন আব্রাহাম ও মনোজ বাজপেয়ীর অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ‘তালাশ’ এবং সারাফারোশ’ ছবি দুটিতে অনুসন্ধানী ত্যাগী সাহসী পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আমির খানের ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয়ের কথা দর্শক সহজে ভুলতে পারবে না। অজয় দেবগন দুঃসাহসী, নির্ভীক, সৎ, নীতিবান পুলিশ চরিত্রে কোনভাবেই কম যান না। এটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন সিংহাম, গঙ্গাজল, ছবিতে। ছবিগুলো এখনও টিভিতে দেখানো হলে দর্শক বেশ আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করেন। ‘এ ওয়েডনেসডে’ ছবিতে নাসির উদ্দিন শাহ, ‘অর্ধসত্য’ ছবিতে ওমপুরি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে গতানুগতিকতার বাইরে অসাধারণ পারফর্মেন্স করে বাজিমাত করেছিলেন ‘শূল’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ি, ‘খলনায়ক’, ‘পুলিশ অফিসার ছবিতে জ্যাকি¯্রফ চমৎকার অভিনয় করেন। পুলিশ হিসেবে নারীরাও কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। বলিউডে নারী পুলিশদের বীরত্বগাথা, দুঃসাহসী কর্মকা- অনেকবার ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সিনেমায়। ‘আন্ধা কানুন’ ছবিতে হেমা মালিনী, জখমি আওরাত ছবিতে ডিম্পল কাপাডিয়া, ‘ফুল বানে অঙ্গারে’ ছবিতে রেখা, ‘দৃশ্যম’ ছবিতে টাবু, ‘জয় গঙ্গাজল’ ছবিতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ‘মর্দানি’ ছবিতে রানী মুখার্জিদের চ্যালেঞ্জিং অভিনয় নারী পুলিশের ইমেজকে অনেকটাই মহিমান্বিত করেছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে রানী মুখার্জির নতুন পুলিশী এ্যাকশন সিনেমা ‘মদানি টু’। বলিউডে গত এক দশকে পুলিশী এ্যাকশন সিনেমা নির্মাণে রীতিমতো নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন পরিচালক রোহিত শেঠি। ২০১১ সালে সিংহাম’ ২০১৪ সালে ‘সিংহাম রিটার্নস’, ২০১৮ সালে ‘সিম্বা’ তার ধারাবাহিক পুলিশী এ্যাকশন ছবিগুলো বক্স অফিসে দুর্দান্ত সাফল্যের রেকর্ড সৃষ্টির পাশাপাশি দুঃসাহসী অদম্য নীতিবান পুলিশ চরিত্রের মডেলও সৃষ্টি করেছে। যেখানে অজয় দেবগন রণবীর সিং সফল অভিনয়ের প্রমাণ দিয়েছেন।
×