ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাগো নারী বহ্নিশিখা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 জাগো নারী বহ্নিশিখা

নারীর প্রতি নিপীড়ন-নির্যাতন বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা-সমালোচনা হলেও এমন কোন দিন নেই যেদিন সমাজের কোথাও না কোথাও কোন না কোন পর্যায়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে না। কন্যাশিশুসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছেই। জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২৫ নবেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা শুরু হয় এবং শেষ হয় ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে। ‘নারীরা আজ অগ্রসর, চায় সমতা জীবনভর’- অগ্রসর হয়েও নারীরা শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি নানা ধরনের মানসিক নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। জেন্ডার-ইকুয়ালিটি কোথাও নেই। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে একদম স্কুল পর্যায়ের পাঠক্রম থেকে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারীদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনি সেবাদান নিশ্চিত করতে হবে। নারীর চলাফেরা এবং কর্মক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা, নারীর প্রতি চলমান সহিংসতা, নির্যাতন রোধে যেসব চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে সরকারের কাছে তার সবিশেষ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অনস্বীকার্য। নারীর প্রতি চলমান নির্যাতন, সহিংসতা চলতে থাকলে জাতি হিসেবে আমরা কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আশা করাও দুরূহ। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ শুধু মেয়ে জাতির কল্যাণে প্রয়োজন ভাবলে কম ভাবা হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্যও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নারী-পুরুষের সমতার বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর উইমেন্স এ্যান্ড চিলড্রেনস ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদে সই ও অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট নারীবান্ধব হয়। জাতীয় সংসদের ২০? প্রতিনিধিত্ব করছেন নারী। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে অবস্থান অষ্টম। এতসব অর্জন সত্ত্বে¡ও সমাজে ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে, যৌতুক, নারী নির্যাতনের মতন ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণ অহরহ ঘটছেই। সীমিত বিচার ব্যবস্থা, নারীবান্ধব অবকাঠামোর অভাব, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বিচারের জটিল প্রক্রিয়া, ব্যয়বহুলতা প্রভৃতি কারণে নির্যাতনের শিকার নারীরা বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে সুফল পেতে হলে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সকলের সামগ্রিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। আন্দোললের মাধ্যমে সমাজে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত থাকার বিকল্প নেই। বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। নারীপাচার প্রতিরোধ ও দমন করতে হবে। যে কোন বয়সের নারী ঘরে বাইরে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, যৌন নিপীড়ন রোধে আমাদের সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মহামান্য হাইকোর্টের যে উত্ত্যক্তকরণ ও ফতোয়া বন্ধ করার জন্য ২০১১ সালে রুল প্রদান করা হয়েছে তা প্রণয়নে এগিয়ে আসতে হবে। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কার্যক্রমে গতি আনতে হবে। প্রতিটি কন্যাশিশু এবং নারীকে যথাযথ মূল্যায়ন করার মাধ্যমে পরিবারে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শুধু একজন সুস্থ মা-ই একজন সুস্থ ভবিষ্যত নাগরিকের জন্ম দিতে পারে কথাটি মনে রাখা আবশ্যক। নারীকে সর্বপ্রথমে শিক্ষিত হতে হবে, বিভিন্ন শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নিজেকে তৎপর হতে হবে। নিজের অধিকার আদায়ে নারীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। নারীর প্রতি চলমান নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেগে উঠুক সকল নারী-পুরুষ। টিএ রোড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
×