ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ

আমি নিজেও যেহেতু একজন নারী, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কলমের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব। কেননা, নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়, না কর্মস্থলে, না শিক্ষাঙ্গনে আর না ঘরে। সর্বত্রই তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত জাহান রাফি নামে এক মাদ্রাসাছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা তা যেমনি নিষ্ঠুর-নৃশংস, তেমনি হৃদয়বিদারক। অজ্ঞতার যুগেও মনে হয় এমনটি করা হতো না যা আজ নারীদের সঙ্গে করা হচ্ছে। সুন্দরভাবে বাঁচার ইচ্ছা কার না রয়েছে। সবাই চায় এ সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে। আমাদের দেশে আড়াই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ, হত্যাসহ নারী নির্যাতনের সংবাদে ভরপুর। নারী নির্যাতনের এ চিত্র শুধু ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে। অথবা ধর্ষিতা পরিবার সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করছে। তদুপরি তথাকথিত ফতোয়া বা সামাজিক বিচারের রায়ে ধর্ষকের পরিবর্তে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ধর্ষিতাকে। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকরা এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে একটু বেশিই যেন জড়িয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়াজগুলোতে সমাজের চাহিদার দিকে লক্ষ্য না রেখে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতেই যেন হুজুররা ব্যস্ত থাকেন। একের পর এক নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে অথচ আমাদের হুজুররা এসব বিষয় নিয়ে কোন চিন্তা করেন না, তারা শুধু আছেন কাকে কাফের ফতোয়া দেয়া যায় আর কে মুসলমান আর কে নয়। আলেমদের ওয়াজ নসিহতে যদি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক কোন বিষয় থাকত তাহলে মনে হয় কিছুটা হলেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কমত। প্রত্যেহ কতই না এমন খবর প্রকাশিত হয় যে, শিশু ধর্ষিত, ধর্ষণের পর হত্যা, গ্রামের পাটের ক্ষেতে, ভুট্টার ক্ষেতে বা ডোবা-নালায় ধর্ষিতা নারীর লাশ পাওয়া গেছে বা দুই বছরের শিশুকে পা দিয়ে গলায় টিপে ধরে গৃহবধূকে ধর্ষণ এ ধরনের খবর পত্রিকার নিয়মিত বিষয়। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে আর অপরাধীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার পেয়েও যাচ্ছে। তবে নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দিয়ে বর্তমান সরকার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা প্রশংসাযোগ্য। নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে বাংলাদেশের নারী সমাজ বিশ্বে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এগিয়ে থাকলেও নারী নির্যাতনের মাত্রা কমছে না। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবিও উঠেছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আছে বিস্তর। প্রশ্ন হল আর কত দিন এভাবে নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হতে থাকবে? নারী এবং শিশুদের ওপর নির্যাতনকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় যত দিন না আনা হবে ততদিন সম্ভব নয়Ñ এদেশ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা। একই সঙ্গে প্রত্যেক পরিবারকেও হতে হবে সচেতন। অপরাধী যেই হোক তাকে কোনভাবে ছাড় দেয়া যাবে না। বকশী বাজার, ঢাকা থেকে
×