ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাত নতুন ও ২৩ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচী উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

মুজিববর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুত

প্রকাশিত: ১০:১১, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

  মুজিববর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তাঁর সরকার ২০২১ সাল নাগাদ সকল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে সারাদেশের ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। ইনশাল্লাহ, মুজিববর্ষ উদ্যাপনের মধ্যে আমরা শতভাগ বিদ্যুত দিতে সক্ষম হব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অন্ধকারে থাকবে না, সব ঘরেই আলো জ্বলবে।’ প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাতটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র এবং ২৩ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে একথা বলেন। খবর বাসসর। বিদ্যুত বিভাগের তথ্য মতে, এই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন এবং উপজেলাগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা এখন হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। পাশাপাশি দেশের ৪৬১ উপজেলার মধ্যে ২৩৪ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হলো। আরও ১২৭ উপজেলায় শীঘ্রই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে, যেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, বাকি এক শ’ উপজেলায় আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদ্যাপনকালে বিদ্যুতায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি লক্ষ্য স্থির করেছি- ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদ্যাপন করব। জাতির পিতার জন্মদিন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে এই কর্মসূচী পালন শুরু করে পরবর্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত এক বছর এই কর্মসূচী চলবে। তখন আর একটি ঘরেও অন্ধকার থাকবে না। তিনি বলেন, আলোকিত করাই আমাদের কাজ এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন পৌঁছেনি সেসব প্রত্যন্ত পাহাড়ী, হাওড় এবং চরাঞ্চলে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করে সারাদেশে এই বিদ্যুতায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, বলেন তিনি। তিনি বিদ্যুত ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার তাঁর পরামর্শ পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুত উৎপাদনে আমাদের যে খরচ হয় এর চাইতে অনেক কম অর্থে আমরা তা সরবরাহ করে যাচ্ছি।’ তিনি এ সময় বিএনপি আমলে দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কথা স্মরণ করিয়ে বিদ্যুত ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার দেশে বিদ্যুত পেয়েছিল মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট। পরবর্তী পাঁচ বছরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করে রেখে গেলেও ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন এক মেগাওয়াটও বাড়াতে পারেনি। উপরন্তু, তা কমিয়ে ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের সরকার গঠনের পর থেকে বিদ্যুতকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়াসহ একের পর এক বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে তার সরকার বিদ্যুতকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব এই বিদ্যুত ব্যবহারে আপনারা সাশ্রয়ী হবেন। বিদ্যুত অপচয় যেন না হয়। বিদ্যুত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে আপনাদের বিদ্যুতের বিলটাও কম আসবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশ আমাদের এবং এই দেশের প্রতিটি সম্পদ জনগণের। কাজেই এই সম্পদকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আসুন সকলে মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার গণভবনের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, বেলপথমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। এখন খাদ্য পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। অর্থাৎ একটা মানুষের জীবনে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ যে মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন হয় সে চাহিদাগুলো সম্পূর্ণভাবে পূরণের কর্মসূচীই আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যার সুফলটা পাচ্ছে দেশের জনগণ। তিনি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই কারণে যে, তারা আমাদের বার বার ভোট দিয়েছেন এবং সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আর সে কারণেই আজকে দেশের উন্নয়নটা আমরা করতে পারছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক শ’ শিল্পাঞ্চল (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) আমরা গড়ে তুলছি। যেখানে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, দেশের চাহিদাও মিটবে এবং বিদেশেও আমরা রফতানি করতে পারব। ফলে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার জন্য চাষের জমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘চাষের জমি আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে কারণ আমাদের যে জনসংখ্যা তাদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে চাই। ভিক্ষা চেয়ে, হাত পেতে চলতে চাই না, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে আমরা সরবরাহ করতে চাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। যেটা আমাদের জাতির পিতা শিখিয়ে গেছেন। ৭টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের অংশ হিসেবে সাতটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র এবং ২৩ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। সাতটি বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে- শিকলবাহা ১০৫ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র, আনোয়ারা ৩শ’ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী ১১০ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র, পটিয়া ৫৪ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র, রংপুর ১১৩ মে.ও, তেঁতুলিয়া ৮ মে.ও. সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র এবং গাজীপুর ১শ’ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র। বিদ্যুত বিভাগ জানায়, এই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উদ্বোধনের ফলে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা এখন হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট এবং একইসঙ্গে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় এসেছে। পাশাপাশি দেশের ৪৬১ উপজেলার মধ্যে ২৩৪ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হলো। আরও ১২৭ উপজেলায় শীঘ্রই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে, যেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, বাকি এক শ’ উপজেলায় আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদ্যাপনকালে বিদ্যুতায়ন করা হবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা। শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হচ্ছে- বগুড়া জেলার গাবতলী, শেরপুর, শিবগঞ্জ, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা, ফরিদপুর জেলার মধুখালী, নগরকান্দা, সালসা উপজেলা, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর এবং পলাশবাড়ি উপজেলা, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এবং হবিগঞ্জ সদর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এবং মহেশপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা, নাটোর জেলার বরাইড়গঞ্জ, লালপুর ও সিংড়া উপজেলা, নেত্রকোনার বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ এবং পিরোজপুরের ভা-ারিয়া, কাউখালী এবং ইন্দুরকানি। অনুষ্ঠানের মঞ্চে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, রেলপথমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর, নাটোর, পিরোজপুর এবং খুলনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে একটি পৃথক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে খুলনার ‘শেখ রাসেল ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব কাপ টেনিস টুর্নামেন্ট-২০১৯’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
×