কার্তিকের এই শেষ সন্ধ্যায়
সোহরাব পাশা
শূন্যতার খুব নিচে কার্তিকের সন্ধ্যে নিভে আসা
বুনো কুয়াশার অন্ধকারে অজস্র পাতার ভিড়ে
দূরের দিগন্তে তার জ্যোতির্ময় স্বপ্নভাষা ফোটে
প্রবীণ হাওয়ায় ওড়ে ফিতেখোলা চুল;
নিবিড় গহিনে বিষাদের ওপারে তোমার বাড়ি
সেই কবে উঠে গেছে ব্যস্ত খেয়াঘাট
কারা যেনো বদলে দিয়েছে তোমার পা’ফেলা পথ
মুছে গেছে সোনার রোদ্দুরে ভেজা স্মৃতি পদচিহ্ন
নিঃশব্দ নির্জন শূন্যতার সবুজ মার্জিন নেই
বিশ্বাসের মৃত্যু হলে শূন্যতার অহংকার বাড়ে
মহাবিশ্বে স্বপ্নজলের নিঝুম ছোট ছোট নদী
জ্যোৎ¯œার বিস্রস্ত ঢেউ তুলে নদী বড়ো অন্ধ যায়;
ঢেউ ভাঙে আত্মমগ্ন আলোর ভুবনে
কাঁপে জন্মান্ধ রাত্রির গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ
মাঝে মাঝে বৃষ্টি এলে ভিজে যায় স্মৃতির বারান্দা
এক নীল সন্ধ্যায় তোমার কথায় অজস্র ফুল ফুটেছিলো
সেই ফুল নেই, পাতা নেই ওড়াউড়ি নেই প্রজাপতিদের
‘সব ফেলে গেলেও ভুলো মনে নিয়ে গেছো তুমি আমার সকল’
কার্তিকের এই শেষ সন্ধ্যায় তোমার জানালায়
কুয়াশায় বিলি কেটে খোঁজ কি পুরনো সেই চাঁদ!
** অজিত কাকার জন্য
চঞ্চল শাহরিয়ার
নিমগাছের ছায়ায় কাজে ব্যস্ত অজিত কাকার
হাসি মুখ দেখে দাঁড়ালাম। কাজ ফেলে কাকা দ্রুত
চেয়ার এগিয়ে দিলেন বসার জন্য। ঘাড়ের গামছা
দিয়ে চেয়ারটা মুছে বললেন, বসো বাবা। কতোদিন হয়ে গেল। আসো না যে!
অজিত কাকার আন্তরিকতায় আমার মুগ্ধতা
চিরকাল। পুকুরের জল, নারকেল গাছ, লাল শাড়ি পরা বৌদির দারুণ উচ্ছলতা, কিশোরী চৈতালীর
পুতুলের জন্য মালা গাঁথায় বিশেষ মনোযোগ
দূর থেকে ভেসে আসা লালনের গান আমাদের
মোহাচ্ছন্ন করে।
ঘোষ পাড়ায় ঢোকার সময় পাইনে। অবসরে আসি
অজিত কাকার জন্য। কাকা মানে আব্বা,
কাকা মানে মা, কাঞ্চন ভাই, ছেলেবেলার রোদ্দুর
পত্রিকার পাতায় মোড়ানো গরম জিলিপি।
অজিত কাকার জন্য আজো ভালো হয়
আমার রাতের নিদ্রা।
** শেষ পৃষ্ঠায়
মো. আরিফুল হাসান
শেষ পৃষ্ঠায় আমরা আমাদের জমানো কান্নাগুলোকে জড়ো করি
ছড়িয়ে দেই তোমার নামে। তুমি অলক্ষে থেকে হাসো। হাসো
আমি জন্ম দেই ভালোবাসা আর তোমার গর্ভে জমে থাকে ঘৃণা
এ হলো সংসার বৎস, একদিন তুমি দেউলিয়া হবেই হবে নিশ্চিত
আর জেনে রেখোÑ ফুল, পাখি আর ঘাসেদের দেশ নেই, নেই
অতএব তুমিও পাখিমন উড়-উড়-সন্ধ্যাবাতাসের লালরÑ শোকে
** শূন্য অনুভবে
কৌশিক সূত্রধর
শুনেছি সময় ডাকঘরে চিঠি আসে আজও,
নীল খামে তালাবন্ধ কথা খুলে পড়ার কেউ নেই।
অচেনা রানার আজও মিলিয়ে মিশিয়ে পথ হাঁটে;
ঝন ঝন শব্দে বিভোর, কদর করার কেউ নেই।
দেয়ালিকা বর্ণিল শিরোনামে হাতে লেখা প্রত্যয়;
কচিকাঁচার স্বপ্ন ছবি অনুভবের কেউ নেই, থাকেও না।
** মুদ্রারাক্ষস
শাহীন মাহমুদ
জলের জঙ্গলে ভেসে উঠে বিরল আধুলি
ঝিনুক জঠরে নির্জীব পরে থাকে শুদ্ধাচার
মধ্যবিত্ত বদলে যায় চন্দ্রবিন্দু বড়শিতে
খলখল হেসে উঠে বাঁকা মেরুদণ্ড।
প্রেমিকার গালে চোট
প্রেমিক ভাবেনি বাইটের পরিণাম
জ্যাম চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে
তাকিয়ে থাকে ওসি তদন্ত ও ট্রাফিক পুলিশ
ফের ফুলে উঠে জঙ্গলজল কুকুরের ঘেউ ঘেউ।
জীবনের ট্রাফিক আমি মানি না
হলে হোক ছাইপাশ
মুদ্রারাক্ষস হয়ে ভেসে যাক যা ভাসার
আমি বলছি আমি বলবো
আমি লিখছি আমি লিখবো।
** সরষেচিহ্ন
মাসুদ চয়ন
সূর্য উঠেছে সময়ের নিয়ম রুটিন মেনে
সোনালি আলোয় দিগন্ত বিস্তৃতির উপচয়ে আরেকটি নতুন দিনের আগমন
একটু আগেও সারা আকাশ জুড়ে আঁধারের শূন্যতা লেপ্টে ছিলো
ঘন কুয়াশায় নদী আর স্থল এক বৃত্তে সাব্যস্ত হয়েছিলো ভোরের কোমল রঙে
মনের কুয়াশা কাটছে না একটুও আজ
সারাক্ষণ অদৃশ্য এক অন্ধকার উন্মুক্ত ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়ছে নরম বুকের উঠোনে
আহ জীবন!
কত রহস্যময় দুঃখের আবাদ তোমার নীলশৈলী উঠোনেথ
অযন্তে সাদা কালো মেরুণ বিষাক্ত ছোপ জমে যাপন পাতায়
সেই পাতার মতো অবহেলিত পঞ্চচূড়া সেজেছি আজ
জল নেই আনন্দ নেই শূন্যধ্যান এ জীবনে
গ্রামীণ সাঁকোর মতো যখন তখন ভেঙ্গে পড়ছি
মন ভালো নেই বলে দু’চোখের আল ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝাপশা সরষে চিহ্নথ
শীর্ষ সংবাদ: