ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের বাঘারপাড়ায় কচুর লতি চাষে ভাগ্য বদল কৃষকদের

প্রকাশিত: ০২:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

যশোরের বাঘারপাড়ায় কচুর লতি চাষে ভাগ্য বদল কৃষকদের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কচুর লতি চাষে সাফল্য পেয়েছে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের ৮ গ্রামের কৃষক। লাভ ভালো হওয়ায় এই ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক এখন কচুর লতি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধানের দরপতনে লোকসানের মুখে পড়ে এখানকার কৃষকরা। এ জন্য এ ইউনিয়নের হিংগারপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আশরাফ আলী বছর তিনেক আগে পরিক্ষামূলকভাবে সামান্য পরিসরে কচুর লতি চাষ শুরু করেন। এতে তিনি সাফল্যও পান। তিন বছর ধরে কচুর লতি চাষ করে পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছেন কৃষক আশরাফ আলী। তাঁর দেখাদেখি কচুর লতি চাষ শুরু করেন এখানকার শতাধিক কৃষক। বর্তমান এ অঞ্চলের কচুর লতি যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সম্প্রতি বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, হিংগারপাড়া, আটকী, শ্বশাড়পাড়া, গরীবপুর, বেতালপাড়া, হলদা, জহুরপুর ও চাঁদপুরে গ্রামে প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হচ্ছে। ক্ষেত পরিচর্যায় কৃষকদের সাথে কাজ করছেন কৃষানীরাও। এখানকার শতাধিক কৃষক কচুর লতি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশই বর্গা চাষী। আটকী গ্রামের কৃষক সাধন সরকার জানান, এ বছর তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কচুর লতি চাষ করছেন। লতি উঠা পর্যন্ত আনুমানিক খরচ হবে ২০ হাজার টাকার মতো। প্রতি সপ্তাহে সার, কীটনাশক ও লতি তোলা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকা। গেল বছর এক বিঘা জমিতে লতি চাষ করে এক লাখ টাকার কচুর লতি বিক্রি করেছেন তিনি। এতে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা । হিংগারপাড়ার চাষী সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর প্রথম দিকে কচুর লতি কেজি প্রতি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছি। বর্তমানে আশানুরুপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে। বেতালপাড়া গ্রামের চাষী মোক্তার হোসেন জানান, আগে ধান চাষ করতাম। গত দু’বছর যাবত কচুর লতি চাষ করছেন তিনি। এ চাষে কষ্ট বেশি হলেও দাম ভাল পাওয়া যায়। যে কারণে এখানকার অধিকাংশ কৃষক কিছু না কিছু জমিতে লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় চাষীরা ক্ষেত থেকে কচুর লতি তুলে বিক্রি করেন পাশ^বর্তী খাজুরা বাজারে। সেখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কচুর লতি কিনে নিয়ে যান। খাজুরা হাট ইজারাদার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা জানান, সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার এ হাটে প্রায় হাজার মণ কচুর লতি ওঠে। এখানকার লতি সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফরিদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যাপারিরা আসেন কচুর লতি কিনতে। বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, যশোর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কচুর লতি চাষ হচ্ছে জহুরপুর ইউনিয়নে। তিনি আরও জানান, বাঘারপাড়া উপজেলায় মোট ২৬ হেক্টর জমিতে এ বছর কচুর লতি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জহুরপুর ইউনিয়নেই ২২ হেক্টর।
×