ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বললেন নতুন এমডি

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রির দিকেই যেতে হবে বিটিসিএলকে

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

 ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রির দিকেই যেতে  হবে বিটিসিএলকে

ফিরোজ মান্না ॥ ল্যান্ডফোন দিয়ে এখন আর বিটিসিএল চালানো সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে সারাদেশে বিটিসিএল ক্যাবল নেটওয়ার্ক (ব্যাকবোন) তৈরি করতে হবে। এই ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে বিটিসিএলকে লাভজনক করা সম্ভব। বর্তমানে জেলা পর্যায়ে এক জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডইউথ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে আরও অনেক কম ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদা রয়েছে ১০ জিবিপিএস। উপজেলা পর্যায়ে ২ জিবিপিএস। বিটিসিএলকে এখন ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বিক্রির দিকেই যেতে হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন বিটিসিএল’র নবনিযুক্ত এমডি রফিকুল মতিন। বিটিসিএল’র এমডি জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে সারাদেশে বিটিসিএলর ক্যাবল রয়েছে ২৫ হাজার কিলোমিটার। আগামী বছরের মধ্যে এর পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। তাহলে আমাদের নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি তৈরি হবে। নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। ল্যান্ডফোনে বছরে আয় হচ্ছে মাত্র এক শ’ ৮০ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে বিটিসিএল’র মতো এত বড় প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিটিসিএল ইন্টারনেট বিক্রি করছে। বিকল্প হিসেবে আরও কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। ট্রান্সমিশন মিডিয়া তৈরি করা হবে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ আসছে তার চেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ লাগছে। রফিকুল মতিন বলেন, বর্তমানে দেশে এক হাজার তিন শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। আগামী বছরে দুই হাজার এক শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। দেশে ডাটার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুয়াকাটা থেকে ব্যান্ডউইথ বাড়াতে পারবে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি। তারা সেখান থেকে দেড় হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পেতে পারে। আমরা বিটিসিএলকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল আধুনিকায়নের চিন্তাভাবনা চলেছে। জেলায় গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একইভাবে উপজেলা পর্যায়েও ইন্টারনেটের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমরা জেলায় ১০ জিবিপিএস ও উপজেলায় ২ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। বিভাগীয় পর্যায়ে আরও বেশি ব্যান্ডউইথ দেয়া হবে। বিটিসিএল জানিয়েছে, এর আগে এমন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। সারাদেশে অপটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করার জন্য। নেটওয়ার্ক অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রসহ কারিগরি প্রশিক্ষণও থাকবে প্রকল্পে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বল্প খরচে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন বিটিসিএল দেশজুড়ে গড়ে তুলছে আধুনিক ও শক্তিশালী আইপি নেটওয়ার্ক। বিটিসিএল তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এই প্রথম এত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পাশাপাশি বিটিসিএল সেবা দিলে জনসাধারণ সহজেই তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারবেন। কারণ বিটিসিএল’র নেটওয়ার্ক আগে থেকেই সারাদেশে রয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নিতে বেশ খরচ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তখন খুব কম মূল্যে জনসাধারণ সেবা পাবেন। দেশের ৮ বিভাগের জেলা, উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারে স্থাপিত টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলো নতুন করে স্থাপন করা হবে। এসব এক্সচেঞ্জ পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর। আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ছাড়া সেবা দেয়া যাবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে বিটিসিএল’র একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। এরপরও কেন যেন প্রকল্পের কাজের গতি নেই। বিদেশী ঋণের টাকাও কিছু পাওয়া গেছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৩০ কিলোমিটার ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্ত মাত্র ৫ হাজার কিলোমিটার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষ করেই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ স্থাপিত হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। তখন শহর ও গ্রামের বৈষম্য অনেকাংশে কমে যাবে। গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা না দিলে শহরের মানুষের চেয়ে তারা পিছিয়েই থাকবেন। ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অধিকারের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করছে। তাই এই সেবা সবার জন্য সমানভাবে হতে হবে। প্রকল্পের আওতায় ছিল ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলার ৬৭ উপজেলায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৫৯ উপজেলা, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৩৮ উপজেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৩৭ উপজেলা, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৪২ উপজেলায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ২৬ উপজেলা এবং বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২১ উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এক হাজার ইউনিয়ন সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামপর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা এমনিতেই পৌঁছে যেত। বর্তমানে ইউনিয়ন প্রকল্পটি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে চলে গেছে। এখন আর এই প্রকল্প ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের হাতে নেই। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিটিসিএল’র হাতে কাজটি থাকাকালীন ৫ হাজার কিলোমিটার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
×