ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এয়ার এরারিয়ার ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনা হয়

সৌদিতে চরম নির্যাতিত সুমিকে ফিরিয়ে এনে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

  সৌদিতে চরম নির্যাতিত সুমিকে ফিরিয়ে এনে বাবা-মার কাছে হস্তান্তর

আজাদ সুলায়মান ॥ অবশেষে ফিরে এলেন সুমি। সৌদিতে চরম নির্যাতনের করুণ কাহিনী ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে সুমিকে। প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিতে বাধ্য হয়েই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। বিমানের একটি ফ্লাইটে শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন সুমি। শুক্রবার সকাল সাতটা ১৫ মিনিটে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এ সময় ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পরিচালক ও উপসচিব মোঃ জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। সুমির মুখে শোনা যায়, সৌদিতে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের চরম করুণ কাহিনী। আরব দেশে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের চেয়েও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মুখে এখনও শত শত বাংলাদেশী দেশে ফেরার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সেখানে প্রবাসী নারীদের খোঁজখবর নেয়ার কেউ নেই। মিডিয়ায় কিছু না ঘটা পর্যন্ত সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলে না। সুমির ভাষ্যমতে, তার মতো এমন শত শত তরুণী এখনও সৌদি আরবে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে অবরুদ্ধ জীবন কাটাচ্ছে। তাদের কান্না কেউ শোনে না। সুমি বলেন, ভাগ্যের জোরে দেশে ফিরেছি কিন্তু চোখের সামনে দেখে এসেছি অন্যদের নির্যাতন সেটা মনে হলে আঁতকে উঠতে হয়। আমি যে ফিরে আসতে পারব এমনটি এখনও যেন দুঃস্বপ্ন। শুক্রবার সুমি ফেরার পর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে সহযোগিতা করেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুমকে ভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের করে আনা হয়। এরপর বোর্ডের নিজস্ব গাড়িতে সুমির পঞ্চগড়ে পাঠানো হয়। তার স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকলেও তার কাছে সুমিকে হস্তান্তর করা হয়নি। এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ২-এ গণমাধ্যম কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন, তারাও কেউ সুমির সাক্ষাত পাননি। এদিকে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট সূত্রে জানা যায়, দেশে ফেরার আগে কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে সুমিকে দেশের ফেরার দিন-তারিখ জানানো হয়। এও উল্লেখ করা হয়, ‘সুমি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হলো। ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সুমিকে আমরা বোর্ডের গাড়িতে করে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ির উদ্দেশে পঞ্চগড়ে পাঠিয়েছি। তার সঙ্গে আমাদের দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী যাচ্ছেন। ওখানে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাকে তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বোদার ইউএনও সৈয়দ মাহামুদ হাসানের মাধ্যমে তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এদিকে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে না দিয়ে সুমিকে অন্যপথ দিয়ে কেন বের করা হলো, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে বিষয়টি এমন নয়। সুমি দেশে ফেরার আগে আমাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর পেছনে কারণ কী আমি ঠিক তা জানি না। আমি সকালে সুমির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। তাকে ভীষণ অসুস্থ মনে হয়েছে। তাই আমরা তাকে আমাদের গাড়িতে করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। গত ৩০ মে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স রূপসী বাংলা ওভারসিজের মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান সুমি। সেখানে নির্যাতনের শিকার হলে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিওপোস্ট করেন। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার স্বামী নুরুল ইসলাম পল্টন থানায় একটি জিডি করেন। ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছুদিন থাকলে আমি মরে যাব।’ পল্টন থানায় জিডি করার পর ২২ অক্টোবর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে লিখিত অভিযোগ করেন নুুরুল ইসলাম। কোন সমাধান না পেয়ে সুমিকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনতে ২৭ অক্টোবর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্র্যাকের সহায়তায় ২৯ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। শুরুতে সুমির নিয়োগকর্তার দাবি করা ২২ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে ফাইনাল এক্সিট- অর্থাৎ দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জানালেও পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। শুক্রবার সুমির ওপর নির্যাতনের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কিনা প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে কোন সদুত্তর মেলেনি।
×