ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হেমন্তেই গ্রামবাংলায় শীতের আমেজ

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

  হেমন্তেই গ্রামবাংলায় শীতের আমেজ

শাহীন রহমান ॥ প্রকৃতির হিসাব অনুযায়ী শীত ঋতু আসতে এখনও একমাস বাকি। তবে পৌষ মাস আসার আগেই উত্তরের জেলাগুলোতে হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত নিকটেই। দিনের তাপমাত্রা এখন আর আগের মতো নেই। প্রতিদিনই তাপমাত্রার পারদ নিচে নেমে আসছে। বাতাসে কমছে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি। সেই সঙ্গে কমছে আর্দ্রতাও। ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু আর খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি জানান দিচ্ছে উত্তরে শীতের আগমনী বার্তা। দিনেরবেলা গরম থাকলেও মাঝরাত ও ভোরে অনুভূত হয় হাল্কা শীত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রী কমে আসবে। তখন শীতের অনুভূতি আরও বেড়ে যাবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিমা বায়ু দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এই বায়ু প্রবাহের কারণে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলাগুলোতে সকাল এবং সন্ধ্যায় শীতের অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। শীত আসার আগ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। মধ্য ডিসেম্বরে শীত জেঁকে বসতে পারে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, শীত ঋতু আসতে এখনও প্রায় একমাস বাকি আছে। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীতের হাওয়া বইতে শুরু করবে। তিনি জানান, দেশের ওপর উত্তর-পশ্চিমা বায়ু বিরাজ করছে। এ কারণে উত্তরের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত আসার আগ পর্যন্ত শীতের এই অনুভূতি অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান দু-একদিনের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রী কমে আসবে। তাপমাত্রা কমে এলে এখন শীতের যে অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে তা আরও বেড়ে যাবে। গত ২ সপ্তাহ ধরেই দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। পঞ্চগড়ে শীত পড়তে শুরু করেছে। এই জেলায় শীতের অনুভূতি বেশ। বলতে গেলে পুরোদমে শীত শুরু হয়েছে সেখানে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, উত্তরে এই যে শীতের অনুভূতি তা শীত আসার আগ পর্যন্ত থাকবে। এখন প্রকৃতিতে চলছে হেমন্তকাল। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে এই ঋতু। ইতোমধ্যে কার্তিক পেরিয়ে এখন অগ্রহায়ণ শুরু হয়েছে। এই অগ্রহায়ণে দেশে শুরু হবে নবান্ন অর্থাৎ ফসল ওঠার মৌসুম। অনেক স্থানে ধানকাটা শুরু হয়েছে। নবান্নের এই ধান কাটতে কাটতেই শীতের আগমনী হাওয়া প্রকৃতিতে পুরোদমে চলে আসবে। ইতোমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও এখন থেকেই শীতের শিরশিরে ভাব শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী দেশে সর্বোচ তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এসেছে। আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১৫ থেকে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মধ্য নবেম্বরের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় শীতের অনুভূতি স্পষ্ট হতে শুরু করবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অনেক জেলায় শীতের আবহ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সকাল ও রাতে গ্রামবাংলায় শিশু ও বৃদ্ধরা ইতোমধ্যে গরম কাপড় গায়ে জড়াতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রাজশাহীতে শীতের ভাব আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ার কারণে এই এলাকায় আগেই শীতের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরের এই জনপদে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসও বইছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এসব এলাকায় শীত জেঁকে বসতে পারে। তবে গ্রামবাংলায় সকাল-সন্ধ্যায় শীতের অনূভূতি শুরু হলেও রাজধানী ঢাকায় এখনও শীতের ছোঁয়া লাগেনি। তাপমাত্রা আগের চেয়ে কমে আসার কারণে গরমের অনুভূতি অনেক কমেছে। মূলত রাজধানীতে আবহাওয়া এখন অনেকটাই নাতিশীতোষ্ণভাব। রাতের শেষদিকে হালকা শীত ভাব জানান দিচ্ছে শীত আসছে। দিনেরবেলায় রোদের তাপ থাকলে শেষরাতে শীতের শিরশিরে ভাব শুরু হয়েছে। ভোরের দিকে প্রয়োজন হচ্ছে না পাখা চালানোর। দিনে বেলা বাড়লে কিছুটা বাড়ছে রোদের তেজ।তবে সন্ধ্যের দিকেই সেই তেজ কমে সৃষ্টি হচ্ছে আরামদায়ক পরিস্থিতির। রাতের দিক থেকেই ঠান্ডার আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্র এখন ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে। তবে নবেম্বরের ২০ তারিখের পর তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। নবেম্বরের শেষ নাগাদ রাজধানীতে শীত নামবে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের হিমেল অনুভূতি গ্রামবাংলায় শুরু হলেও এখনই জেঁকে শীত পড়ছে না। লোকজন শীতের ঠান্ডা আমেজ উপভোগ করলেও জেঁকে ঠান্ডা পড়তে এখনও বেশ সময় লাগবে। যদিও ইতোমধ্যে ভোরের দিকে ঠান্ডা হাওয়া কাবু করতে শুরু করেছে শিশু ও বৃদ্ধদের। তাদের মতে, পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল হলেও মূলত বাংলায় শীতের আগমন ঘটে অনেক আগেই। এবারও এ নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হতে পারে। তাদের মতে, জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পর্বাঞ্চলে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০ ডিগ্রী থেকে ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে। গত মাসের ১৪ অক্টোবর দেশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা মৌসুম) বিদায় নিয়েছে। এরপর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কয়েক দফায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এক সপ্তাহ বিরতির পরেই উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এতে উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। আবহাওয়া অফিস এখন জানাচ্ছে, শীত আসার আগে সাগরে আর কোন ধরনের নিম্নচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দিন ও রাতের আবহাওয়া এখন বেশ পরিষ্কার। তবে দিনে সূর্যের তেজ থাকলে রাতে তাপমাত্রা কমে আসছে। এ কারণে রাজধানীতে ছোঁয়া না লাগলেও গ্রামবাংলায় হেমন্তে শীতল হাওয়ার আমেজও শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে নবেম্বরে রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। মাসের শেষ সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে থাকবে। এ সময় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে। ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মৃদু (বাতাসে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা শেষ হতে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা ও ভারি বাতাস আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরের দিকে ছুটে আসে। পরে তা বয়ে যায় উত্তর ভারত, নেপাল হয়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করে। এ কারণেই শরৎ শেষে হেমন্তের শুরুতেই শীতের আগমনী বার্তা জানান দেয়।
×