ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে একই বাসায় থাকাটা যুক্তরাজ্যে একটি সাধারণ ঘটনা

প্রকাশিত: ০১:১৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে একই বাসায় থাকাটা যুক্তরাজ্যে একটি সাধারণ ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ''আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি একটা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছি। আমার সঙ্গে দুইবার এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে।'' ২৬ বছরের লুসির সঙ্গে যখন তার তৎকালীন ছেলে বন্ধুর সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, তিনি নিজেকে যুক্তরাজ্যের অন্যতম 'লুকায়িত আবাসন' ব্যবস্থার মধ্যে আটকে পড়েছেন বলে দেখতে পান। এটি হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার যে, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একজন তার বাসা বদলাতে পারেন না। লুসি যখন তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে লন্ডনের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন, তখন তাকে ছয়মাসের জন্য চুক্তি করতে হয়েছিল। সে সময় তাদের বেশকিছু পাউন্ড ডিপোজিট দিতে হয়। সেই ডিপোজিটের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও আরো তিন মাস ধরে দুজনকে সেই বাসাতেই থাকতে হয়েছে। বাসায় সোফা-কাম-বিছানা ছিল একটি, যেটি তাদের দুজনকেই শেয়ার করতে হতো। লুসির জীবনে এরকম ঘটনা আরো একবার ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের বাসা সংক্রান্ত একটি দাতব্য সংস্থা বলছে, সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে একই বাসায় আটকে পড়ার ঘটনা যুক্তরাজ্যে একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেল্টার নামের ওই সংস্থাটি বিবিসি থ্রিকে জানিয়েছে, তারা অনেক সময়েই ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে শুনতে পান যে, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পরে মানসিক কষ্টের মধ্যেও আইন ও অর্থনৈতিক কারণে তারা বাসা ছাড়তে পারেন না। ''অনেক মানুষ সামর্থ্যের কারণে যেমন নিজেদের জন্য নতুন বাসা খুঁজে নিতে পারেন না, আবার মেয়াদি চুক্তির কারণেও তাদের পক্ষে নতুন ঠিকানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না,'' বলছেন দাতব্য সংস্থা শেল্টারের প্রথম নির্বাহী পল নিয়েট। ন্যাশনাল হাউজিং ফেডারেশনের সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে লুসির মতো প্রায় ২৫ লাখ ব্রিটিশ এরকম লুকায়িত আবাসনের মধ্যে রয়েছে, যারা তাদের শেয়ার করা বাড়ি ছাড়তে পারছে না, বা অভিভাবকদের কাছে যেতে পারছে না অথবা সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আঠারো বছর আগে তরুণরা যতটা সম্পদশালী ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক দরিদ্র হয়েছে। লুসির কাহিনী : পরিবারের সঙ্গে বর্নমাউথে বসবাস করতেন লুসি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হওয়ার পরে ছেলে বন্ধুর সঙ্গে একটি বাসায় একত্রে বসবাস করতে শুরু করেন। সে সময় লন্ডনের ফ্যাশন শিল্পে তিনি চাকরি খুঁজছিলেন। ''আমি তার সঙ্গে একত্রে থাকতে শুরু করি কারণ আমিও সেটা চাইছিলাম-কিন্তু এর বাইরে অর্থনৈতিক ব্যাপারও ছিল যে, খরচগুলো তার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়া। কারণ লন্ডনে আমি তখন কম বেতনে চাকরি শুরু করতে যাচ্ছিলাম।'' লুসির সে সময়ে মাসিক আয় ছিল ১৮০০ পাউন্ডের কিছু বেশি আর তিনি বাসা ভাড়া ও বিল বাবদ দিতেন ৮০০ পাউন্ড। কিন্তু সেই সময়েই তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি সম্পর্কের অবসান চাইছেন। ''প্রথমবারের মতো আমরা দুইজন একত্রে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলাম। যখন আলাদাভাবে থাকা হয়, তখন আসলে সম্পর্কের জটিলতাগুলো বোঝা যায় না।'' কিন্তু সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও আরো তিনমাস তাদের দুজনকে একত্রে এক বাসায় থাকতে হয়। সেখানে এমনকি তাদের একই বিছানায় ঘুমাতে হয়, যা ছিল দুজনের জন্যই একটি কঠিন ব্যাপার। ''আমাদের একটা সোফা ছিল, যেটা আবার বড় করে নিলে বিছানা হিসাবেও ব্যবহার করা হতো। আমরা পালাক্রমে সেখানে ঘুমাতাম। কিন্তু কখনো কখনো এমন সময় আসতো যে, দুজনেরই ঘুম দরকার। তখন আমাদের একসঙ্গে ঘুমাতে হতো। তবে খানিকটা স্বাধীনতার জন্য আমরা মাঝে একটা বালিশ দিয়ে রাখতাম।'' ''যতদিন আমাকে বাসা ভাড়া দিতে হবে, ততদিন আমি সেখানে থাকবো। আমার সেখানে থাকার সব অধিকার আছে।'' যদিও বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের কাছে যাওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু এই বাসাটি তার কর্মক্ষেত্রের কাছে এবং সেখানে তার নিজের মাল-সামানও ছিল। ''আমি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতাম। হয়তো জোর করে সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতাম, বাসায় অ্যালকোহল পান করতাম না, সাবেক সঙ্গীর সঙ্গে হয়তো একত্রে টিভি দেখতাম। আমরা দুজনেই ছিলাম যেন হেটে চলে বেড়ানো মৃত মানুষের মতো।'' এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর লুসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি আর কখনোই কারো সঙ্গে থাকতে যাবেন না। ''একবারের অভিজ্ঞতাই এতটা ভয়াবহ ছিল যে, আমি নিজেকে বললাম, আর কোন সঙ্গীর সঙ্গে আর একত্রে থাকতে যাবো না।'' কিন্তু ২০১৮ সালে নতুন ছেলে বন্ধুর সঙ্গে একত্রে থাকতে শুরু করার পর আবার প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখতে পান লুসি। ''আমার মধ্যে অস্বস্তি থাকলেও, তার সঙ্গে একত্রে থাকাটা বেশ সুবিধাজনক এবং কম খরচের বলে মনে হলো। বিশেষ করে আমাদের অন্য মানুষজনের সঙ্গে থাকতে হবে না, যাদের কারণে আমাদের জীবন কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আমি নতুন ছেলে বন্ধুর সঙ্গে থাকতে শুরু করলাম।'' কিন্তু এই সম্পর্ক যখন শেষ হয়ে গেল, এই যুগল অবশ্য ডিপোজিটের মায়া না করে তাদের সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। লুসি বর্নমাউথে তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করলেন। লুসি বলছিলেন, আবাসন খাতের এই পরিস্থিতি তার 'মানসিক, শারীরিক আর অর্থনৈতিকভাবে' ভোগান্তির কারণ হয়েছে। ''আমি মনে করি, পুরো ব্যাপারটি অস্বস্তি আর লজ্জার। আবাসনের এরকম পরিস্থিতিতে পড়ার পরেও একজন তরুণীর কোথাও যাবার সুযোগ থাকে না আর ভেঙ্গে পড়া একটি সম্পর্কের মধ্যে থাকলে যেন সেই ব্যর্থতাকেই মেনে নেয়া হয়,'' লুসি বলছিলেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×