ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ দেখার জন্য কখন না আবার দাম বেঁধে দেয়া হয়

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

পেঁয়াজ দেখার জন্য কখন না আবার দাম বেঁধে দেয়া হয়

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড ছোঁয়ার পরে এ নিয়ে দেশটির বাসিন্দাদের মধ্যে যেমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। সেখানে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি রসিকতাও করতে শুরু করেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই মানুষের সামাজিক মাধ্যমে মানুষের করা মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়ার বড় অংশ জুড়েই রয়েছে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি। এই রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে, সেটাও উঠে এসেছে এসব প্রতিক্রিয়া। এ কাদের লিপু ফেসবুকে লিখেছেন, আজ দুঃসাহস দেখিয়ে ৬৫ টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম (১৭)টি পেঁয়াজ কিনেছি!!! সেখানে বেশ কয়েকজন মজা করে মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে শেখ মোঃ বিল্লাল হোসেন লিখেছেন, অভিনন্দন আপনাকে, এই যুগে আপনার মতো দুঃসাহসিক পুরুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। দুই মাস আগেও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০টাকা কেজিতে। সেই দাম বেড়ে প্রথমে একশো ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে আড়াইশো টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের এই চড়া দামের কারণে কুমিল্লায় বিয়ের অনুষ্ঠানে পেঁয়াজ উপহার দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মুক্তা খাতুন লিখেছেন, পেঁয়াজ দেখার জন্য কখন না আবার দাম বেঁধে দেয়া হয়। কাজী প্রকৃতি আহমেদ একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে লেখা, একটি মেয়ে তার ছেলে বন্ধুকে বলছে, 'বেবি, আমাকে কোন একটি দামী স্থানে নিয়ে যাও'। পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পেঁয়াজের বিশাল স্তূপের ওপর তারা বসে আছেন। বাংলাদেশে এর আগেও পেঁয়াজ শেষের মৌসুমে পেঁয়াজের দাম একশো পার হলেও, কখনোই দুইশো টাকার ঘর অতিক্রম করেনি। বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানির বড় উৎস ভারতেরও ফলনে মন্দা হওয়ায় দেশটির পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। বিকল্প উৎস হিসাবে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলেও তার সব চালান এখনো এসে পৌঁছায়নি। ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়তিই রয়ে গেছে। এর মধ্যেই পেঁয়াজ ছাড়া রান্না এবং পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করার আহবান জানানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই লিখেছেন, তারা এখন পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে শুরু করেছেন। বিপ্লব হান্নান একটি ছবি প্রকাশ করেছেন, রান্নায় এক পেঁয়াজের বেশি নয়, অর্ধেক হলে ভালো হয়! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার বাসভবনে শনিবার পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। বিপ্লব হান্নানের আরেকটি পোস্টে দেখা যাচ্ছে, যে পেঁয়াজ দিয়ে গলার নেকলেস তৈরি করা হচ্ছে, পেঁয়াজ আলমারিতে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা রসিকতা, ট্রলের অন্ত নেই। মাহবুব ইমরান লিখেছেন, যত ট্রল চলবে,তত দাম বাড়বে। ৮০ টাকা থেকে ১২০ এখন ২৫০। পেঁয়াজের দাম কমানোর ঘোষণার পরেই ২০০ ক্রস। পেঁয়াজ নিয়ে কথা বললেই বিপদ। শামিমা রহমান শাম্মি মজা করে লিখেছেন, একজন আঙ্গেল ২/৩ কেজি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, তার কি জীবনের ভয় নাই? সাংবাদিক জুলহাস আলম লিখেছেন, 'পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতায়, যেটাকে আমি নাম দিয়েছি পেঁয়াজমাতি, এটা বেস্ট হইছে'। সেখানে লেখা, 'দুদকের ভয়ে খবরটা গোপন রাখলাম-গতকাল বিকেলে আমার বউ পিয়াজু বানাইয়া খাইছে...' গোলাম সামদানি লিখেছেন, 'প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখন ২০০ টাকা বর্তমানে আমার বাসায় দুই কেজি সমপরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। ভাবছি সেগুলো রান্নাঘরে না রেখে আলমারিতে তালা দিয়ে রাখবো। কারণ পেঁয়াজে খোঁজে যদি আবার চোর ডাকাত বাসায় চলে আসে!' মোঃ মুনির হোসেইন লিখেছেন, 'ধন্যবাদ জানাচ্ছি রেস্টুরেন্ট মালিকদের। পেঁয়াজের দাম সার্কিট ব্রেকার ভাঙ্গার পরেও তারা সিঙ্গারার দাম বাড়াননি'। মুতাসিমবিল্লাহ নাসির একটি ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে, ডিমের বক্সে তিনি পেঁয়াজ সাজিয়ে রেখেছেন। লিখেছেন, 'অবশেষে যথাযোগ্য মর্যাদা পেল পেঁয়াজ'। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। তবে এর মধ্যেই দেশের কোন কোন স্থানে নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় সেসব স্থানে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আমদানি করা পেঁয়াজের সব চালান দেশে এসে পৌঁছলে আর নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে উঠে গেলে এই দাম কমে আসবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×