ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস মামলার স্থগিতাদেশ দাখিল ১২ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

  ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস মামলার স্থগিতাদেশ দাখিল ১২ জানুয়ারি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নির্ধারিত রবিবার দাখিল করা যায়নি। আসামি পক্ষের আবেদনের পক্ষে পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হাছিনা রৌশন জাহান স্থগিতাদেশ দাখিলের দিন আগামী ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করেন। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে কোম্পানিটি মূলত অসৎ উদ্দেশে, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস। কোম্পানিটি তাদের শেয়ার বিক্রি জোরদার করার লক্ষ্যে এ পন্থা বেছে নেয়, যা বিএসইসি’র তদন্তে উঠে আসে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের (বিএসইসি) আইনজীবী মোঃ মাসুদ রানা খান বলেন, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের মামলাটি হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১২ জানুয়ারি তা দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। সে অনুযায়ী ওইদিন আসামিপক্ষ ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোঃ মোজিবুর রহমান বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। তবে তিনি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আদালতে দাখিল করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সেজন্য তিনি স্থগিতাদেশটি দাখিলের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে আদালতে আবেদন করেন। একইসঙ্গে তিনি মামলাটির অন্যতম আসামি ও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুন নেছার অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিতির সময় চেয়ে আবেদন জানান। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। পরে মামলাটি দায়রা জজ আদালত থেকে গত ১২ জুন ২০১৫ তারিখে পুঁজিবাজার বিশেষ টাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মামলার নম্বর দেয়া হয় ১৫-১৫। পরে ওই মাসেই মামলাটি চার্জ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মামলাটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এরপর থেকেই মামলাটি হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। চলতিবছরের ১৩ অক্টোবর ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের মামলাটির সর্বশেষ ছয় মাসের স্থগিতাদেশ শেষ হয়েছে। তাই নতুন করে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ নেয়ার জন্য তারা হাইকোর্টে আবেদনের জন্য সময় চেয়েছে কোম্পানিটি। ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার মোট ১১ জন আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র একজন আসামি (প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি কামরুন নেছা) জামিনে আছেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। আসামিরা হলেন- ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি কামরুন নেছা, মোঃ মুকতাদুল হক হায়দারী, এএ ভাসওনী, মনোনীত পরিচালক, ফাঙ্কায় চেন, ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কনসাল্টেড লিমিটেড, পরিচালক খান মোহাম্মদ একরামুল্ল্যা, শাহজাহান কবির, সৈয়দ শফিকুল হক, হাবিবুল ইসলাম হক ও মোস্তফা বিল্লাহ খান। মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস অসৎ উদ্দেশে, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রসপেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করেছে। মূলত কোম্পানিটি তাদের শেয়ার বিক্রি জোরদার করার লক্ষ্যে এ পন্থা বেছে নিয়েছে, যা বিএসইসি’র তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। নথিতে বিএসইসি’র তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস লিমিটেড কোম্পানি আইন, ১৯৯৩ এর অধীন নিবন্ধিত জয়েন্ট ভেঞ্চারে পরিচালিত একটি কোম্পানি, যা ১৯৯৬ সালের আগস্টে ৫ কোটি টাকার পুঁজি সংগ্রহের জন্য প্রতিটি শেয়ার ১০০ টাকা করে মোট ৫ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যুর জন্য প্রসপেক্টাস প্রকাশ করে। ওই প্রসপেক্টাসে উল্লখিত কোম্পানির প্রোজেক্ট ডিজাইনে ১০০ ভাগ রফতানিমুখী প্লাস্টিক বডি ইলেক্ট্রনিক (যান্ত্রিক ও ব্যাটারিচালিত) খেলনা ও মাইক্রোমটর (ম্যানুফ্যাকচারিং কাম এসেমব্লিং) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা প্রসপেক্টাস বিএসইসিকে প্রদর্শন করে পুঁজি সংগ্রহের জন্য সম্মতি গ্রহণ করে। এদিকে ১৯৯৫ সালের ১৬ জুন ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস মেশিনারিজ আমদানি করা লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক-এর প্রধান শাখার মাধ্যমে মেসার্স এসির‌্যাঙ্ক ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের অনুকূলে মোট ১৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের একটি এলসি খোলে। ওই এলসি’র বিপরীতে পাঁচটি শিপমেন্ট হয়েছে বলে জানায়। এর মধ্যে সর্বশেষ শিপমেন্টটি ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৬০ মার্কিন ডলারের করা হয়েছে, যা সিঙ্গাপুরের মেসার্স সিটার লাইনস প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে বিল অব লেডিং ইস্যু করা হয়েছে। বিল অব লেডিং অনুযায়ী ওই শিপমেন্টের মেশিনারিজগুলো ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের অনুকূলে বাংলার মনি ভয়েজ ৫৮ ডব্লিউ ভ্যাসেলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংককে অরিজিনাল শিপিং ডকুমেন্ট হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানায়। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করে জানায় যে, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসের আমদানিকৃত মেশিনারিজগুলো ১০০ ভাগ রাফতানিমুখী খেলনা প্রস্তুত শিল্পে ব্যবহার হবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রসপেক্টাসের তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি।
×