ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেরামতে বছরে শত শত কোটি টাকা গচ্চা বিমানের ;###;শাহজালালে নেই অত্যাধুনিক আলট্রা সাউন্ড প্রযুক্তি;###;মান্ধাতা আমলের বন্দুকেই ভরসা

বার্ড হিট আতঙ্ক ॥ হাজার কোটি টাকার বিমান অচল করে দিচ্ছে ছোট্ট পাখি

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

 বার্ড হিট আতঙ্ক ॥ হাজার কোটি টাকার বিমান অচল করে দিচ্ছে ছোট্ট পাখি

আজাদ সুলায়মান ॥ বার্ড হিট- আকাশপথে পাইলটদের চরম আতঙ্ক। নিরাপদ আকাশপথ বলতে পাইলটদের কাছে পাখিমুক্ত আকাশ ও সুন্দর আবহাওয়া বুঝায়। প্রতি বছর পাখির আঘাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এ দুটি কারণেই বিশ্বে ঘটছে ভয়ঙ্কর সব বিমান দুর্ঘটনা। হাজার কোটি টাকার একটি বোয়িং ৭৪৭ ডাবল ডেকার উড়োজাহাজ চোখের নিমিষেই অনায়াসে অচল করে দিচ্ছে ছোট্ট একটি পাখি। একটি সংস্থা ৯১ দেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছে- ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এক লাখ দুর্ঘটনা ঘটেছে শুধু বার্ড হিটের কারণে। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। গত মাসে পর পর দুটি বিমান জরুরী অবতরণ করেছে বার্ড হিটের কারণে। চলতি বছরের শুরুতে জরুরী অবতরণ করেছে আরও দুটি। মূলত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর পাখির ঝুঁকিতে। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বার্ড হিটের শিকার হয়ে উড়োজাহাজ অচল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিমান সূত্র জানিয়েছে, শুধু বার্ড হিটের কারণে প্রতিবছর উড়োজাহাজ মেরামত খাতে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। তছনছ করে দিচ্ছে বিমানের সিডিউল। অথচ পরিস্থিতি এত উদ্বেগজনক হলেও এখনও পর্যন্ত পাখির আঘাত থেকে রক্ষার তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সিভিল এভিয়েশন কয়েক বছর আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বার্ড প্রতিরোধে একটি মেশিন বসালেও তা কদিনের মাথায় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর ওই মেশিনের যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তারপর আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রচলিত পদ্ধতিতে মান্ধাতার আমলে শূটার গান দিয়ে গুলি করে মারা হচ্ছে। তাও নামকাওয়াস্তে। যে কারণে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির আগ্রাসন বেড়েছে আতঙ্কজনক হারে। জানতে চাইলে সচিব মহিবুল হক বলেছেন, পাখির আঘাত শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক। সেজন্য আমরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পাখি নিয়ন্ত্রণে পরিবেশবান্ধব মেশিন বসানোর বিষয়ে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ গুলি করে পাখি মারা হচ্ছে। এর পাশাপাশি যদি মেশিনও বসানো হয় তখন এ সমস্যা আর থাকবে না। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত দিনের বেলায় এবং শীত মৌসুমে পাখি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বিমান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনা ঘটে প্রধানত বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়। এ সময় পাইলটরা ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। দুনিয়াব্যাপী বার্ড হিট থেকে রক্ষা পেতে প্রচলিত পদ্ধতি বন্দুক দিয়ে গুলি করা ও লেজার মেশিন দিয়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশে প্রধানত বন্দুক দিয়েই পাখি তাড়ানো ও মারা হয়। এর পাশাপাশি কয়েক বছর আগে একটি লেজার মেশিন বসানো হয়। কিন্তু সেটা অল্প কদিন পরই অকেজো হয়ে যায়। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওই মেশিন এখনও সেভাবেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের একজন পরিচালক বলেন, বিশ্বের বড় ও ব্যস্ততম বিমানবন্দরে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে পাখি না মেরে শুধু তাড়িয়ে দিয়ে বিমান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখা হচ্ছে। এজন্য শুধু একটি লেজার লাইট এবং প্রশিক্ষিত টিম দরকার। এ ছাড়া আরেক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিমানবন্দরের আকাশে বিশেষ শব্দ তৈরির মাধ্যমে পাখি চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হবে, যাতে পাখিগুলো শব্দের কারণে ওই এলাকা এড়িয়ে চলে। কিন্তু আমরা সেটা ঢাকায় ও অন্যান্য বিমানবন্দরে চালু করতে পারিনি। যে কারণে মাসুল দিতে হচ্ছে চরম। সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর সোমবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন প্রজন্মের একটি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৩৭-৮০০) ময়ূরপঙ্খী আকাশে ওড়ার পরই পাখির আঘাতের (বার্ড হিট) শিকার হয়। ওই ফ্লাইটের দক্ষ পাইলট বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত গন্তব্যে না গিয়ে টাওয়ারের সহায়তায় ঢাকায় জরুরী অবতরণ করান। এরপর মেরামতের জন্য এয়ারক্রাফটটি হ্যাংগারে নেয়া হয়। শুধু একদিন নয়, প্রায় সময়ই বিমানবন্দরে উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় ছোট-বড় এয়ারক্রাফট পাখির আঘাতের শিকার হচ্ছে। তবে বিমানবন্দর থেকে পাখি তাড়ানোর জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন পালা করে বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে বার্ড শূটাররা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশ সময় কর্তব্যরত বার্ড শূটাররা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় রানওয়ের আকাশে ও আশপাশে চিল, পেঁচাসহ নানা জাতের পাখির উৎপাত দিন দিন বাড়ছে। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের মুহূর্তে এগুলোতে কখনও কখনও পাখি ঢুকে পড়ছে। তবে গত কয়েক মাসে পাখির আঘাতে যে কটি এয়ারক্রাফট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো উড্ডয়নের মুহূর্তে ঘটেছে। এ ঘটনার পর পরই চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে পাখির আঘাতে দেশীয় বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিমানে থাকা ৬৩ যাত্রীর সবাই অলৌকিকভাবে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন। এর পর থেকে বিমানবন্দরে বার্ড শূটার না থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারোয়ার ই জামান বলেন, আমরা বিমানবাহিনীর সহায়তায় সার্বক্ষণিক পাখি মারছি। শীতকালে বিমানবন্দরের আকাশে পাখির চলাচল বেশি থাকে বলে আমরা বাড়তি সতর্কতা নেই। আমাদের কাছে পাখি মারার নিজস্ব প্রযুক্তি নেই বলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সেই সহায়তা দিচ্ছে। সপ্তাহে সাতদিন বিমানবাহিনীর নিজস্ব বার্ড শূটার দিয়ে পাখি মেরে বিমান চলাচল নির্বিঘœ করার কাজ করছে। নতুন প্রযুক্তি না আসা পর্যন্ত বিমানবাহিনীর সহায়তা নিয়ে কাজ চালাব। একইসঙ্গে ‘আলট্রাসাউন্ড বার্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ প্রযুক্তি কেনার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই প্রযুক্তি চালুর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। আমাদের কাছে বার্ড শূটার বা বন্দুক কোনটা নেই। অনেক আগে এই পদ্ধতি চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও অনুমোদন মেলেনি। তবে নতুন অর্গানোগ্রাম হয়ে গেলে জনবল, বন্দুুক ও আলট্রাসাউন্ড পেয়ে যাব বলে বেবিচক চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী ফ্লাইট গড়ে ৮০টি এবং সামরিক বাহিনীর ফ্লাইট ৫০টি। ফলে আকাশকে নিয়মিত নিরাপদ রাখতে বার্ড শূটার অপরিহার্য। কারণ সামান্য পাখির আঘাতে একটি উড়োজাহাজের সব যাত্রীর প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি হয়। এ বিষয়ে দীর্ঘ তিরিশ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞ বৈমানিক ও বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, বার্ড হিট শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা গ্লোবাল। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন এবং অবতরণের যে কোন মুহূর্তেই এই বার্ড হিট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন। পাইলট উপায় না দেখে দ্রুত আশপাশের বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণ নতুবা আগের স্থানে ফিরে আসতে বাধ্য হন। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় উড়োজাহাজগুলো প্রায়ই বার্ড হিটের শিকার হচ্ছে। ফলে বার্ড শূটারদের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ নাসির বলেন, তবে দুনিয়ার অন্যান্য দেশে অত্যাধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি এ সমস্যা মোকাবেলা করা হয়। কারণ আমরা আকাশের বিভিন্ন স্তরেই বার্ড স্ট্রাইক বা পাখির কবলে পড়ি। একেবারে ওপরের স্তরের ঈগল বা চিল, মধ্য স্তরে অতিথি পাখি, একেবারে নিচের স্তরের বকসহ অন্য বড় পাখিগুলো। দু’একটি পাখি থাকলে খুব বেশি সমস্যা হয় না। একঝাঁক পাখি থাকলেই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। আকাশের ১০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে পাখি চলাচল বেশি থাকে বলে আমরা ঝুঁকি এড়াতে বিমানের গতি কমিয়ে দিই। সেজন্য বলা চলে পাখির উৎপাত বিমান চলাচলে চরম ঝুঁকির কারণ। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করা, বছরের কোন সময়ে কয়টি বার্ড স্ট্রাইক ঘটে। এর পর সমাধানের আধুনিক পদ্ধতি চালু করার পদক্ষেপ নেয়া। কারণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনেক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সেগুলোতে বড় বিপর্যয় ঘটেনি। প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল নির্বিঘœ করতে ‘বার্ড শূটার’ থাকার নিয়ম আছে। এই শূটার সপ্তাহে সাতদিন বিমানবন্দরের আকাশে নিয়মিত পাখি শিকার বা তাড়িয়ে বিমান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত রাখে। তবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বার্ড শূটার বা এর চেয়ে আধুনিক কোন পদ্ধতি নেই। ফলে পাখির আঘাতের কারণে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলে ব্যঘাত ঘটছে, শীত মৌসুমে পাখি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বড় ঝুঁকির শঙ্কা বাড়ছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, উড়োজাহাজে যে পাখি ঢুকে পড়ছে তার মধ্যে চিল, পেঁচাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি রয়েছে। শূটাররা কোন দিন দুটি, কোন দিন তিন-চারটি আবার কোন দিন ১০-১২টি পাখিও মারছে। বার্ড হিটের সমস্যা কতটা প্রকট সেটার পরিসংখ্যানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বিমান একটি ফ্লাইট (ড্যাশ-৮) চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার পরই বার্ড হিট করে। পরে পাইলট সেটি দ্রুত ঢাকায় অবতরণ করান। একইভাবে ৫ অক্টোবর বিমানের নিজস্ব বোয়িং ৭৩৭ কুয়ালালামপুর যাওয়ার উদ্দেশে উড্ডয়নের পরই পাখির আঘাতের শিকার হয়। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর একটি বোয়িং ৭৩৭ সিঙ্গাপুরগামী উড়োজাহাজ বার্ড হিটের শিকার হয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে পাইলট উড়োজাহাজ ঢাকায় জরুরী অবতরণ করান। এ ঘটনায় জানমালের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও যাত্রীদের সবাই ছিলেন উৎকণ্ঠায়। অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৩৭-৮০০) ময়ূরপঙ্খীতে ১৫৬ জন যাত্রী, পাইলট ক্রুসহ মোট ১৬৩ জন ছিলেন। এরপর একই ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে। জানতে চাইলে বিমান প্রকৌশল শাখার একজন সাবেক পরিচালক বলেন, এভিয়েশন সেক্টরের বড় আতঙ্ক হচ্ছে পাখির আঘাত বা বার্ড হিট। উড়োজাহাজ যখন আকাশে ওড়ে তখন বিপরীত দিক থেকে পাখি আঘাত করে। তখন পাখি এয়ারক্রাফটের ডানায় থাকা ইঞ্জিনের ভেতরে কখনও কখনও ঢুকে পড়ে। এতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আবার ইঞ্জিনে আগুনও ধরে যেতে পারে। পাখি হিট করার কারণে এয়ারক্রাফট মেরামতে কমপক্ষে এক দিন আবার কখনও দুই দিনও সময় লেগে যায়। এতে এক দিকে এয়ারক্রাফট অচল হয়ে সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে, অপর দিকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হচ্ছে। এ ঘটনা শুধু বিমানে বা দেশীয় এয়ারক্রাফটে হচ্ছে না, বিদেশী উড়োজাহাজেও ঘটছে। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, পাখির উৎপাতের দরুন সারাক্ষণ বিমানবন্দর কন্ট্রোল টাওয়ারের দায়িত্বশীলদের টেনশনে থাকতে হয়। জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে কোন ধরনের লেজার মেশিন না থাকায় শুধু গুলি করে পাখি মারা হয়। তাও খুবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় বন্দুুক গুলি ও শিকারীর অভাব। যে কারণে পাখির উৎপাত থামানো যাচ্ছে না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখির উৎপাত চরম আকার ধারণ করেছে। উল্লেখ্য, একজন ভুক্তভোগী শিকারী বলেন, এটা এখন পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশের ঘন বন জঙ্গল ও ঝোপঝাপ পাখির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণের জলাশয়ে লিজের মাধ্যমে মাছ চাষ করায় দূরের পাখি ছুটে আসে। আর যে পাখি আছে- সেগুলো এখানে যেন ঘাপটি মেরে থাকে। মূলত জলাশয়ে মাছ চাষ বন্ধ ও বন জঙ্গল পরিষ্কার না করা হলে এ সঙ্কট থেকেই যাবে। এ প্রসঙ্গে এটিএম শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, সিভিল এভিয়েশনে বর্তমানে জনবল, বন্দুক ও গুলির প্রচ- সঙ্কট। এখানে মাত্র দুজন বার্ড শূটার কাজ করছে। বন্দুক আছে আটটি, নষ্ট পাঁচটি। কাজ কতটুকু কি হয় সহজেই অনুমেয়। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, বর্তমানে সর্বক্ষণিক বার্ড শূটার পাখি মারার কাজ করছে। এর পাশাপাশি আমরা পরিবেশবান্ধব লেজার মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েই আমরা এ বিষয়ে সক্রিয় রয়েছি।
×