ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাত-পা নেই, মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে লিতুন জিরা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

হাত-পা নেই, মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে লিতুন জিরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরা মুখে ভর দিয়ে লিখেই এবার পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। লিতুন জিরা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। সে এবার উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। লিতুন জিরা পরনির্ভর হয়ে সমাজের বোঝা হতে চায় না। লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে আরো দশজন মানুষের মতো আত্মনির্ভশীল হতে চায় জন্ম থেকে দুই হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া লিতুন জিরা। মুখ দিয়ে লিখেই মেধার স্বাক্ষর রাখছে এই শিক্ষার্থী। কয়েকদিন আগে প্রিয় দাদু ভাই মারা যাওয়ায় লিতুন জিরা মনে কষ্ট নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহী লিতুন জিরা প্রখর মেধাবী। হুইল চেয়ারে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতো। বর্তমানে হুইল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে। তার বাবা উপজেলার এ.আর মহিলা কলেজের প্রভাষক। তিনি গত ১৭ বছর ধরে ওই কলেজে চাকরি করলেও আজও কলেজটি এমপিওভূক্তি হয়নি। তার বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার উপর বেতন না হওয়ায় নতুন হুইল চেয়ারও কেনার জন্য বাবাকে বলতে পারছে না লিতুন জিরা। বছর সাতেক আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুইল চেয়ারটি দেয়া হয়। বর্তমানে তার একটি হুইল চেয়ার খুব দরকার। লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম বলেন, জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে তারা নানান চিন্তা করতেন। এখন মেয়ের মেধা তাদের আশার সঞ্চার করেছে। লিতুন জিরা আর দশ জন শিশুর মতো খাওয়া-দাওয়া, গোছল সব কিছুই করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার হাতের লেখা যে কারো দৃষ্টি কাড়বে। এসময় কথা হয় তার সাথে। লিতুনের একটাই ইচ্ছা, পরনির্ভর না হয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চায়। লিতুন জিরার প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, ‘শিক্ষকতা জীবনে লিতুন জিরার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর দেখা পাননি। এক কথায় সে অসম্ভব মেধাবী। শুধু লেখাপড়ায় না, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও অন্যদের থেকে অনেক ভাল। মডেল টেস্টেও কেন্দ্রে প্রথম হয়েছে সে।’
×