ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিকের নোটিস আমলে নিচ্ছে না ভবন মালিকরা

কুমিল্লায় নক্সা বহির্ভূত ভবনের সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

কুমিল্লায় নক্সা বহির্ভূত ভবনের সংখ্যা বাড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৮ নবেম্বর ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় নক্সাবিহীন ও অনুমোদিত নক্সা বহির্ভূত ভবনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দফায় দফায় নোটিস দিয়েও এ ধরনের ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে পারছে না কুসিক কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ ভবন মালিক নক্সা অনুমোদন নিয়ে তাদের ইচ্ছামআে ভবনের উচ্চতা ও তলা বৃদ্ধি করেছেন। কেউবা পুকুর-জলাধার ভরাটের মাধ্যমে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে ও সরু রাস্তা নক্সায় প্রশস্ত দেখিয়ে অনুমোদন নিয়ে চারপাশে জায়গা না রেখে প্রতিবেশীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। নগরীর উত্তর আশ্রাফপুর এলাকায় আইন অমান্য করে এমনই একটি ভবন নির্মাণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে কুসিক কর্তৃপক্ষ ওই ভবনের কাজ বন্ধসহ নক্সা বহির্ভূত অংশ ভেঙ্গে অপসারণের জন্য তিন দফা নোটিস দিলেও ভবন মালিক তা মানছেন না এবং গত দেড় মাসেও কুসিক কর্তৃপক্ষ নোটিস অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কোন কোন ভবনের মালিক চার-পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে ছয়-সাততলা করেছেন। কেউ ভবন নির্মাণের সময় কোন জায়গা ছাড় দেননি। নগরীর উত্তর আশ্রাফপুর (হালুয়াপাড়া) এলাকার ইউছুফ মিয়া (৮০), ইউনুছ (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, সীমানা দেয়াল থেকে ৪ ফুট ছাড় দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি, কিন্তু জয়নাল আবেদীন নামে এক ব্যক্তি চারপাশে কোনরূপ জায়গা ছাড় না দিয়ে তিনি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এছাড়া তিনি যে প্লটে ভবন নির্মাণ করছেন সেখানে প্রবেশের পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। অন্যদের দুইটি ভবনের ফাঁকা জায়গা দিয়ে সেখানে যেতে হয়। কিন্তু নক্সায় ১০ ফুটেরও বেশি প্রশস্তের রাস্তা দেখিয়ে এবং বিএস খতিয়ানে ভূমিটি পুকুর শ্রেণীভুক্ত হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না করে তথ্য গোপন রেখে সিটি কর্পোরেশনে কাগজপত্র দাখিল করে সেখানে ৫তলা ভবন নির্মাণের নক্সা অনুমোদন নেন। পরবর্তীতে তিনি নানাভাবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নক্সা অনুমোদনের ছাড়পত্রের শর্তাবলী আমলে না নিয়ে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি ইমারত আইনের কোনরূপ তোয়াক্কা করছেন না। এতে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ওই ভবনের লাগোয়া বাসিন্দা ছাড়াও ইবনে তাইমিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নির্মাণাধীন ওই ভবন শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে তারা মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দাখিল করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। তারা আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে জয়নাল আবেদীন বরাবরে চূড়ান্ত নোটিস প্রেরণের প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি ভবনের নক্সাবহির্ভূত অংশ ভেঙ্গে অপসারণ না করে কাজ করছেন। সিটি কর্পোরেশন থেকেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগ দাখিল করে এখন নানাভাবে হুমকির মুখে পড়েছি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সামান্যতম জায়গাও ছাড় না দিয়ে ভবনটি করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তারা নির্মাণাধীন ওই বাড়িটি একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে কুসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মোঃ নুরুল্লাহ বলেন, উত্তর আশ্রাফপুর এলাকার জয়নাল আবেদীন অনুমোদিত নক্সাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ কাজ করছেন এমন অভিযোগ পেয়ে নির্মাণাধীন বাড়িটি পরিদর্শন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে পর পর ৩টি নোটিস দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৩দিনের মধ্যে নক্সাবহির্ভূত ভবনের অংশ নিজ দায়িত্বে ভেঙ্গে অপসারণের জন্য গত ৩ অক্টোবর চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হয়েছে, কিন্তু সে তা করেনি। সহসা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর বর্ণিত ধারামতে নক্সার অনুমোদন বাতিলসহ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অবৈধ নির্মাণ কাজ বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভেঙ্গে অপসারণ করা হবে।
×