ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে সিজারের পর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

রংপুরে সিজারের পর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুরে সিজারের পর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই দেয়ায় নাছিমা বেগম (২৬) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহত নাছিমা নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের তালুক তামপাট তেলীপাড়া এলাকার রাশেদুলের স্ত্রী। এর আগে গত ৫ নভেম্বর নগরীর ধাপ এলাকার রোজ হাসপাতালে ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন সেখানকার কর্তব্যরত সার্জন। নাছিমার স্বজনদের অভিযোগ, গত ৫ নভেম্বর সদর উপজেলার ধাপ এলাকায় অবস্থিত রোজ হাসপাতালে প্রসূতি নাছিমা বেগমকে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন নাছিমা। অপারেশনের পর নাসিমার পেটের ভেতরে গজ ও ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর থেকে তার পেট ফুলে যায় এবং তিনি তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট শুরু করেন। পেটে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে পরে ১২ নভেম্বর রোজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে ভর্তি না করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়। বাসায় চলে আসার পর নাসিমা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ১৫ নভেম্বর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করার পর পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ ধরা পড়ে। রবিবার দুপুরে তার পেটে অপারেশন করে গজ-ব্যান্ডেজ বের করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে মারা যান নাসিমা বেগম। তবে প্রসূতির পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রোজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোজ হাসপাতালের ম্যানেজার মোবারক হোসেন মিলন বলেন, রোগীর পেটে গজ রাখা হয়নি। ‘রোগীর পেটে ইনফেকশন হয়ে পুঁজ হয়েছিল।’ এর চেয়ে আর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. স্বপন জানান, ‘অপারেশন করে ওই নারীর পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ পাওয়া গেছে। রোগীর অবস্থা এমনিতেই গুরুতর ছিল। তার পেট ফুলে গিয়েছিল। ভেতরে রক্তক্ষরণ হওয়ায় রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’ নাসিমা বেগমের স্বজনরা জানান, মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর রোজ প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। তবে ব্যর্থ হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়। নাসিমার স্বামী রাশেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রোজ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের দায়িত্বহীনতার কারণেই তার স্ত্রী মারা গেছেন। তিনি দায়ী ডাক্তার ও নার্সসহ রোজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরন্ময় বর্মণ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নেওয়া হবে।
×