ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাদপড়া করিমের নেতৃত্বে নতুন কমিটি

জামায়াতের সঙ্গে অলির সখ্যে আরেক দফা ভাঙল এলডিপি

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

জামায়াতের সঙ্গে অলির সখ্যে আরেক দফা ভাঙল এলডিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) করে পাপ করেছি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম। গত মাসে অলি আহমদের ঘোষিত এলডিপির কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মূলত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতের সঙ্গে অলির সখ্যে দলে আরেক দফা ভাঙ্গন দেখা দিল। সোমবার সকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাদ পড়া আরেক নেতা আবদুল করীম আব্বাসীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই এককভাবে দল পরিচালনা করায় অলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় অনেক নেতারই বনিবনা হচ্ছিল না। এদিকে এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অলি বলেছেন, দলের প্রকৃত দাবিদার তিনি নিজেই। এলডিপিকে অন্য কারও নেয়ার সুযোগ নেই, কারও অধিকারও নেই। সেলিম বলেন, কর্নেল অলির সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। সেজন্য আমরা আবদুল করীম আব্বাসীকে সভাপতি করে সাত সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করছি। কমিটিতে সাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব হিসেবে এবং আবদুল গনি, এম এ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার ও কাজী মতিউর রহমান সদস্য হিসেবে থাকবেন। সমন্বয় কমিটি সারাদেশে এলডিপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচী নেবে বলে সেলিম জানান। তিনি বলেন, এই সমন্বয়ক কমিটির মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকবে এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে থাকবে। এই দুই নেতার নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গঠিত এলডিপি দ্বিতীয় বারের মতো ভাঙল। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক হুইপ আবদুল করীম আব্বাসী বলেন, অলি আহমদ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কোন কিছু চিন্তা করেন না। উনি একবার ছাতা এদিকে ধরেন, আরেকবার ছাতা ওদিকে ধরেন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কেউ জানে না। এই বিএনপি ছাড়লাম, এবার এলডিপি ছাড়তে চলেছি, বলতে পারেন ছেড়েই দিয়েছি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অলির সঙ্গে একজন (রেদোয়ান আহমদ) ছাড়া আর কেউ নেই। তার কমিটি অকার্যর, তাতে ২০/২৫ জন সক্রিয় নেতা-কর্মী আছে। আপনারা কি এলডিপিতে আছেন প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেন, আমরাই এলডিপি, আমরা এলডিপি নিয়েই আছি। আমাদের এলডিপির সভাপতি পদ রয়েছে। সেই পদে এখন সভাপতি হচ্ছেন আবদুল করীম আব্বাসী। তার সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না অলির বিষয়ে এলডিপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তার সঙ্গে এখন আমাদের রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। উনার প্রতি আমাদের অনাস্থা বলেই তাকে বাদ দিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি। তবে তাকে বহিষ্কার করা হবে কিনা তা আমরা বর্ধিত সভা আহ্ববান করে এ বিষয়ে পরে আপনাদের জানাব। অলি আহমদের সঙ্গে বিভেদ নিয়ে জানতে চাইলে সেলিম বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যেভাবে অকুণ্ঠভাবে জামায়াতে ইসলামিকে সমর্থন দিচ্ছেন, যেভাবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, তা তিনি দিতে পারেন না- এটা উনাকে আমরা মুখের উপরে বলেছি। এজন্য আমাদের সঙ্গে তার বিভেদ তৈরি হয়েছে। একে পুঁজি করে উনি (অলি আহমদ) কোন দলীয় মিটিং বা সভা ছাড়া একটা কমিটি গঠন করেছেন- এটা হতে পারে না। তিনি এলডিপিকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছেন। একটা রাজনৈতিক দল চলবে সাংগঠনিক নিয়মে, কারও পৈত্রিক সম্পত্তি হতে পারে না। সেজন্য আমরাই এলডিপির বৈধ দাবিদার। এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ গত ৯ অক্টোবর ২০৩ সদস্যের যে কমিটি ঘোষণা করেন, তাতে আগের কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্বাসী ও যুগ্ম মহাসচিব সেলিমকে বাদ দেয়া হয়। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু কিছুদিন পরেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে মতভিন্নতা সৃষ্টি হলে তাকে রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়তে হয়। ২০০৪ সালে তিনি বিকল্পধারা নামে রাজনৈতিক দল দল গঠন করেন। ২০০৬ সালে ২৬ মার্চ তিনি নিজের দল বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বিলুপ্ত করে অলি আহমেদসহ বিএনপি ছেড়ে আসা একদল নেতাকে গিয়ে এলডিপি গঠন করেছিলেন। বি চৌধুরীকে সভাপতি, অলিকে নির্বাহী সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ মান্নানকে মহাসচিব করে গঠিত ওই দলে কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদকে নিয়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী যোগ দিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরের বছর ২৬ জুন অলি ও রাজ্জাকসহ ১৩ সদস্যকে বাদ দিয়ে বি চৌধুরী এলডিপির সভাপতিম-লী পুনর্গঠনের ঘোষণা দিলে পরের মাসেই অলিকে সভাপতি, রাজ্জাককে নির্বাহী সভাপতি ও অধ্যাপিকা জাহানারা বেগমকে মহাসচিব করে এলডিপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই বছরই ১ অক্টোবর বিলুপ্ত করা ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ পুনরুজ্জীবিত করে নিজের নেতৃত্বাধীন এলডিপির নাম বদলে ফেলেন বি চৌধুরী। তারপর ২০০৮ সালে অলি ও রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বাধীন একমাত্র এলডিপি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। সেলিম বলেন, ২০০৬ সালে আমরা এলডিপি গঠন করে যে অন্যায় করেছি, যে পাপ করেছি বিএনপি আমাদের সেই অন্যায় ও পাপকে প্রায়শ্চিত্ত করার একটা সুযোগ দেবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলে এই সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ এলডিপির সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির গত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আলম আনোয়ার এবং দফতর সম্পাদক কাজী মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এলডিপিকে অন্য কারও নেয়ার সুযোগ নেই- অলি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল অলি অহমদ (অব.) বীর বিক্রম বলেছেন, এলডিপি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত এক নম্বর রাজনৈতিক দল। গত ১২ বছর ধরে আমি এই দলের সভাপতি। সুতরাং এই রাজনৈতিক দলকে অন্য কারও নেয়ার আইনগত সুযোগ নেই; এমনকি কোন অধিকারও নেই। এলডিপির নিবন্ধন আমার নামে। ফলে আমার দলই মূল দল। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক অলি আহমদ বলেন, এলডিপি কোন ত্যাগী নেতাকে বঞ্চিত করেনি। বরং এলডিপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম সব সময় নিজেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলে পরিচয় দিতেন। অথচ আমার দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের কোন পদ নেই। পদ আছে যুগ্ম মহাসচিব। তাকে নিষেধ করার পরও সব সময় এই পদটি ব্যবহার করত। তাই তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, তাদের ২০ দলীয় জোটে নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। সেটা ২০ দল সিদ্ধান্ত নেবে। তারা দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিংবা দল থেকে বহিষ্কার করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। আরেকটি দল হলো। তারা প্রেসক্লাবে, ফুটপাথে বসে নানা কর্মসূচী পালন করবে। এতে অনেকের সুবিধা হবে। অসুবিধা কি?
×