ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশরাফুল, নাফিস, এবাদত, রাজ্জাক, লিখনসহ দল পাননি অনেক তারকা ক্রিকেটার

মুজিব-নবির চেয়েও মূল্য কম মাশরাফি-মুশফিকদের

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

মুজিব-নবির চেয়েও মূল্য কম মাশরাফি-মুশফিকদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আসন্ন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিবিপিএল) টি২০ আসরের প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে রবিবার স্কোয়াড গুছিয়েছে অংশগ্রহণকারী ৭ দল। ড্রাফটের শুরুর দিকে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে দামী চার ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল খান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দল পেয়ে গেলেও একেবারে শেষদিকে দল পেয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ড্রাফটে বেঁধে দেয়া গ্রেড অনুসারে দেশের সেরা এই চার ক্রিকেটার যে পারিশ্রমিক পাবেন তা আফগানিস্তানের দুই ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবি, মুজিব উর রহমানসহ শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজদের চেয়েও কম। মাশরাফি-মুশফিকরা ‘এ+’ গ্রেডে থাকার কারণে পাবেন ৫০ লাখ টাকা আর বিদেশীদের জন্য নির্ধারিত একই গ্রেডের মূল্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকা, এমনকি বিদেশীদের ‘এ’ গ্রেডে থাকা ক্রিকেটারদের মূল্যও প্রায় ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি। দেশী ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিদেশীদের পারিশ্রমিকের এই তারতম্য নিয়ে অনেক আগে থেকেই নাখোশ স্থানীয়রা। তবে এবারও বিরাট বৈষম্যটা কাটেনি। অথচ দেশের কয়েকজন ক্রিকেটার দলই পাননি যার মধ্যে টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী অন্যতম। এছাড়া শাহরিয়ার নাফিস, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আশরাফুল, জুবায়ের হোসেন লিখন, জিয়াউর রহমান, ইলিয়াস সানি, গত বিপিএলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া পেসার খালেদ আহমেদ, তুষার ইমরান, মার্শাল আইয়ুব, নাঈম ইসলামদের মতো ক্রিকেটাররা দল পাননি। গত বছর অবশ্য ড্রাফট থেকে দল না পেলেও পরবর্তীতে আশরাফুল ও নাফিস দল পেয়েছিলেন। এবারও সুযোগ আছে তাদের একই পদ্ধতিতে। ড্রাফট তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের থেকে নিয়ম ছিল প্রতিদলে সর্বোচ্চ ১১ দেশী ও ৮ বিদেশী ক্রিকেটার নেয়া যাবে। প্রতি দলে ন্যূনতম ৯ দেশী ও ৬ বিদেশীকে নিতেই হবে। তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে অবিক্রিতদের মধ্যে থেকে পরবর্তীতে বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে পছন্দমতো খেলোয়াড় নিতে পারবে দলগুলো। এই প্রক্রিয়ায় এখনও অবিক্রিত দেশী খেলোয়াড়দের দল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ অংশগ্রহণকারী কোন দলই ক্রিকেটার নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেনি। দেশী খেলোয়াড় নেয়ার ক্ষেত্রে যমুনা ব্যাংক ঢাকা প্লাটুন, খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালস নিয়েছে ১০ জন করে, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, সিলেট থান্ডার, রংপুর রেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স নিয়েছে ৯ জন করে। অর্থাৎ ৭ দলে সবমিলিয়ে এখনও ১১ দেশী খেলোয়াড়ের সুযোগ আছে দল পাওয়ার। ইতোমধ্যে দল না পাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় কয়েকটি বড় নাম বাদ পড়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ আশরাফুল, নাফিস, এবাদত, খালেদ, রাজ্জাক, তুষার, নাঈম ইসলাম, জিয়া, ইলিয়াস, লিখনরা। দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকলে শেষ পর্যন্ত বিপিএল শুরুর আগেই তারাও দল পেয়ে যেতে পারেন। গত বিপিএলে এভাবেই দল পেয়েছিলেন আশরাফুল ও নাফিস। তাই সুযোগটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আবার বিদেশী ক্রিকেটার নেয়ার ক্ষেত্রেও পুরো কোটা পূরণ করেনি কোন দল। এবার ড্রাফট তালিকা থেকে অবিক্রিতদের মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিদেশী কিংবা এর বাইরে থেকেও স্বীয় দলের স্পন্সররা নিজেদের পছন্দমাফিক সর্বোচ্চ ২ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে পারবে বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে। এবার বিপিএল আসরটি বিশেষভাবে আয়োজন করছে বিসিবি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। দুটি দল পুরোপুরিই পরিচালনা করবে তারা। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও রংপুর রেঞ্জার্স পুরোপুরি বিসিবির নিয়ন্ত্রণাধীন। বাকি ৫টি দল স্পন্সর হিসেবে মালিকানা নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে সেই দলগুলোও বিসিবির নিয়োগকৃত টিম ডিরেক্টরদের দ্বারাই পরিচালিত হবে। বিসিবির অধীনে থাকা দুই দলের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ঘোষণা করেছে বিসিবি। কুমিল্লার হয়ে এ দায়িত্ব মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর আর রংপুরের হয়ে হাবিবুল বাশার সুমনের। সব দলের টিম ডিরেক্টর থাকছেন বিসিবির পরিচালকরা। তারা হচ্ছেনÑ ঢাকা প্লাটুনে গাজী গোলাম মোর্তজা, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে জালাল ইউনুস, রাজশাহী রয়্যালসে এনায়েত হোসেন সিরাজ, রংপুর রেঞ্জার্সে আকরাম খান, সিলেট থান্ডারে তানজিল চৌধুরী, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সে নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং খুলনা টাইগার্সে টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করবেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তবে এবারও বিদেশী ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশী ক্রিকেটারদের মূল্যের তারতম্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিদেশী ‘এ+’ গ্রেডে থাকায় আফগান দুই ক্রিকেটার নবি ও মুজিব যেখানে পাবেন প্রায় ৮৪ লাখ টাকা, সেখানে মুশফিক, মাশরাফি, তামিম ও রিয়াদের মতো দেশসেরা ৪ ক্রিকেটার পাবেন ৫০ লাখ টাকা করে। এছাড়া লঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরারও মূল্য ৮৪ লাখ। এমনকি ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার রবি বোপারা, পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার শাই হোপ, পাক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজরা পাবেন প্রায় ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা করে। সেখানে মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজদের পারিশ্রমিক থাকবে মাত্র ২৫ লাখ টাকা! আর বিদেশীদের সঙ্গে তারকা মূল্য বিচারে অনেক এগিয়ে থাকার পরেও দেশী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগেও ক্রিকেটাররা ধর্মঘটে উল্লেখ করেছিলেন। এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ এই বিপিএল আসরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারতম্যটা চোখে লাগার মতোই।
×