ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন ১০ শতাংশ বেশি ;###;জেনম থেকে উদ্ভাবিত প্রথম পাটবীজ মাঠে

চাষীদের মন কাড়ল রবি-১

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

চাষীদের মন কাড়ল রবি-১

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ পাটের জীবন রহস্য উদঘাটনের পর তা থেকে উদ্ভাবিত পাটবীজ রবি-১ যশোরে কৃষক পর্যায়ে এই প্রথম আবাদ হলো। চাষীরা বলছেন, অন্য পাটের বীজের তুলনায় রবি-১ এর উৎপাদন ভাল। কৃষি বিভাগ বলছে, অন্য পাটের তুলনায় এর উৎপাদন ১০ শতাংশ বেশি। পাটের আঁশও অন্য পাটের তুলনায় শক্ত এবং মজবুত। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর তা থেকে গবেষণা করে জিন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রবি-১ নামে পাটের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের চারটি গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে এই পাটবীজ চাষ করে দেখা গেছে এর ফলন ভাল। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বীজ বোর্ড এই বীজের প্রত্যয়নপত্র দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের প্রায় সকল এলাকায় এই পাট চাষ করা সম্ভব। আর তাই এই বছর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের ৩টি জেলায় রবি-১ পাটবীজ কৃষকের হাতে তুলে দেয়। যশোরে ৯০ জন কৃষককে এই বীজ দেয়া হয়। এরমধ্যে যশোর সদেরর ৯জন কৃষক এবার এই বীজে পাট চাষ করেছেন। সকল কৃষককে জমিতে পাট চাষ করার জন্য এই বীজ দেয়া হয়। যশোর সদরের কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, রবি-১ পাটবীজ এবার মাঠে দেয়া হয়েছে কৃষকদের। এই পাটের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন এই পাটের স্বাভাবিক গড় উচ্চতা অন্য জাতের চেয়ে ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার বেশি, গাছের গোড়া এবং আগার ব্যাসের পার্থক্য অপেক্ষাকৃত কম, গাছের ছালে ফাইবার বান্ডেলের ঘনত্ব বেশি, পাটের অঁাঁশ উজ্জ্বল বেশি। পাটের কা- মসৃণ, লালচে এবং দ্রুত বর্ধনশীল। যশোর সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সদুল্যাপুর গ্রামের চাষী বাবুল পাল বলেন, এবার কৃষি বিভাগ থেকে বীজ পেয়েছিলাম নতুন পাট রবি-১ এর। কৃষি বিভাগ বলেছিল, মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এই বীজ বপন করা যাবে। আমি এপ্রিলের মাঝামাঝি বীজ বপন করেছিলাম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সার, কীটনাশক দিয়েছিলাম। সদরের গোপালপুর গ্রামের কৃষক আসলাম হোসেন জানান, নতুন এই পাটে রোগ বালাই আমার ক্ষেতে প্রায় লাগেনি। কৃষি বিভাগও বলেছিল, এই পাটে রোগ বালাই কম হয়। আমি পাট কেটে ছিলাম ৩ মাস ১০ দিন পর। আগে ভারতের পাটবীজ ব্যবহার করতাম। এবারও করেছিল অন্য জমিতে। ওই পাট গাছের চেয়ে এই পাট গাছ একটু বড় হয় বেশি। এছাড়া পাট গাছ পূর্ণ বয়স্ক হলে দেখা যায় পাট গাছের আগা গোড়া সমান। তাই ফলন ভাল হয়। যশোর সদরের নরসিংহকাটি গ্রামের মিলন হাসান বলেন, নতুন পাটে আমার ফলন ভাল হয়েছে। পাট কাটার পর হিসাব করে দেখলাম এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এই পাট চাষ করলে ১০ থেকে ১২ মণ পাট হবে। অথচ ভারতের পাটবীজে আমাদের জমিতে ৮ মণের বেশি পাট হয়না। আগামীতে এই পাট চাষ করার ইচ্ছা আছে। ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ‘পাটের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী উদ্ভাবিত রবি-১ জাতের এ পাট শুধু ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগর ও চৌশালা গ্রামের তিন কৃষকের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকনগরের কৃষক লক্ষ্মণ সেনের ৪৮ শতাংশ, চৌশালা গ্রামের ছেকেন শেখের ৩৬, একই গ্রামের নইমুদ্দিনের ৩০ শতাংশসহ মোট ১ একর ১৪ শতাংশ জমিতে এ পাট রোপণ করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ আরও জানান, শুধু পাট চাষ নয়, এই পাটের বীজও উৎপাদন হচ্ছে যশোর অঞ্চলে। তিনি বলেন, আঁশ ফসলের জন্য বপনকৃত গাছের বয়স ১০০-১২০ দিন হলে সুস্থ ও সতেজ গাছের উপরের অংশ থেকে প্রায় ৩০-৪০ সেন্টিমিটার পরিমাণ কেটে নিয়ে প্রতিটিকে এমনভাবে ২-৩ টুকরা করতে হবে যেন প্রতি টুকরায় ২টি পর্ব বা গিট থাকে। কাটিংগুলোকে পর্যাপ্ত রস সমৃদ্ধ মাটিতে ৪৫ ডিগ্রী কাত করে পুঁতে দিতে হবে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ সকল কাটিংস হতে প্রচুর ডালপালা বের হয়, যা থেকে ভাল মানের বীজ উৎপাদিত হয়। এছাড়া জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতাহীন উঁচু জমিতে প্রতি হেক্টরে ৫ কেজি বীজ বপন করে ডিসেম্বর মাসে বীজ সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরও জানান, যশোর অঞ্চলে বেশ কিছু কৃষকের মাধ্যমে রবি-১ পাটের বীজের প্লট করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে সেখান থেকে বীজ পাওয়া যাবে। আগামী কয়েক বছর পর আমাদের আর ভারত থেকে বেশি বীজ আমদানি করতে হবে না।
×