ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্পেসওয়াক করল দুই তরুণী

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

স্পেসওয়াক করল দুই তরুণী

অতনু রায় প্রথমবারের মতো ‘স্পেসওয়াক’ করল নাসার মহিলা দল। মহাকাশচারীর পোশাকে থাকা বিশেষ আলোতে দেখা যাচ্ছে এই সময়ের সাহসী দুই তরুণীকে। সেটা ধরে মহাশূন্যে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে ক্রিস্টিনা কোখ ও জেসিকা মেয়ার নামে নাসার দুই নভোচর নারী। সেই দৃশ্য লাইভ-স্ট্রিমিং করেছে নাসা। মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায় আরও এক মহিলাকে । অনেকেই জানতে চান, তিনি কে। পরে নাসা টুইট করে, মহিলা কণ্ঠটি ছিল মহাকাশচারী স্টেফানি উইলসনের। ইতোমধ্যে যিনি ৪২ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এসেছেন। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা বাসযোগ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’-এ কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে, সেখানে থাকা গবেষকরাই তা মেরামত করেন। মহাকাশচারীর পোশাক পরে স্পেস স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে মহাশূন্যে নেমে যন্ত্রপাতি সারাতে হয়। মহাশূন্যে এই হাঁটাকেই বলে ‘স্পেসওয়াক’। গত অর্ধশতকে এমন অন্তত ৪২০টি স্পেসওয়াক হয়েছে। কিন্তু সব অভিযাত্রীদলেই ছিলেন পুরুষ নভোচারী। এবারই প্রথম এর ব্যত্যয় ঘটল ৪২১তম স্পেসওয়াকে এসে। নাসার মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের ব্যাটারি চার্জার বা বিসিডিইউ-এর একাংশ বিকল হয়ে গিয়েছিল। স্টেশনের সৌর প্যানেল থেকে কতটা বিদ্যুত ব্যাটারি ইউনিটে যাবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে এই অংশটি। বিকল অংশ সারাতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছে দুজনের। এর আগে এই ইউনিটে গোলমাল হলে ‘রোবোটিক আর্ম’-এর সাহায্যে সারানো হয়েছে। কিন্তু এ বারে যেখানে ত্রুটি ধরা পড়েছিল, সেটি এমন জায়গায় যে, যন্ত্রের সাহায্যে সারানো সম্ভব হয়নি। এর আগের সপ্তাহে ক্রিস্টিনা ও তার এক পুরুষ সহকর্মী ওই ইউনিটেই নতুন ব্যাটারি লাগান। কিন্তু আরও কিছু বদলের প্রয়োজন ছিল। তখনই নাসা সিদ্ধান্ত নেয়, পূর্বপরিকল্পিত মহিলা-দলের স্পেসওয়াক এবারই হবে। সেই মুহূর্তে স্পেস স্টেশনের বাসিন্দা চার পুরুষ বিজ্ঞানী কেন্দ্রের ভেতরে থাকবেন। ব্যাটারি চার্জার ইউনিট সারাতে স্পেসওয়াক করবেন দুই মহিলা। ক্রিস্টিনার এটি চতুর্থ স্পেসওয়াক, আর জেসিকার প্রথম। সাত মাস আগে মহিলা-দলের স্পেসওয়াকের পরিকল্পনা করেছিল নাসা। তারা ঘোষণাও করে দিয়েছিল। সংবাদপত্রে ‘ফার্স্ট অল-ওম্যান স্পেসওয়াক’ শিরোনামে খবরও প্রকাশিত হয়ে যায় ‘উইমেন’স হিস্ট্রি মান্থ’-এ নজির গড়বেন ক্রিস্টিনা কোখ ও অ্যান ম্যাক্লেন। কিন্তু এর পরেই নাসার ঘোষণা করলো তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ মহিলা নভোচরের পোশাক কম পড়েছে। দুজনেরই ‘মিডিয়াম’ মাপের পোশাক প্রয়োজন। এ সময়ে হিলারি ক্লিনটন টুইট করেছিলেন, ‘তা হলে পোশাক তৈরি করা হোক।’ প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি ও ডেমোক্র্যাট নেত্রীর কথাই রেখেছে নাসা। মহিলা নভোচরদের উপযোগী পোশাক তৈরি করেছে তারা। এর আগে ৪২০ বার স্পেসওয়াক হয়েছে। ৫৬০ জনেরও বেশি মানুষ মহাকাশে গিয়েছেন। অর্ধ শতক ধরে স্পেসওয়াক হচ্ছে। কিন্তু নারীরা এর পূর্বে মহাকাশে গেলেও স্পেসওয়াকের মতো দুঃসাহসিক কাজে অংশ নেয়নি। কেন এত বছরে এই প্রথম কোন মহিলা-দল স্পেসওয়াক করল? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুরুষ ও মহিলাদের ঘাম হওয়ার তফাত রয়েছে। কোন সুস্থ মহিলার তুলনায় পুরুষেরা ঘামেন বেশি। মহাশূন্যে নভোচরদের দেহ ঠা-া রাখতে পোশাকে ‘ভেন্টিলেশন’ ও ‘কুলিং সিস্টেম’ থাকে। এই পোশাকগুলো পুরুষদের দেহের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়। তাই স্পেসওয়াকের সিদ্ধান্ত আগে থেকে নেয়া হলেও মহিলা নভোচরের পোশাক কম পড়েছিল বলে তাদের স্পেসওয়াকের বাস্তবায়নে সাত মাসের বিলম্ব ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হলো। তরুণীরাও এ থেকে উদ্বুদ্ধ হবে।
×