ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন দল নিয়ে মোহামেডানের লক্ষ্য সেরা তিনে থাকা

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

নতুন দল নিয়ে মোহামেডানের  লক্ষ্য সেরা তিনে থাকা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার। বিকেলের প্রারম্ভই বলা চলে, কারণ সময়টা সাড়ে ৩টা। মতিঝিল পাড়া। হাল্কা শীতল হাওয়া বইছে। তবে একটু পরেই আবহাওয়া উষ্ণ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলো একটি ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা এবং তাদের ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীরা। এই ক্লাবটিকে নিয়েই সবার মধ্যে কৌতুহল ছিল একটি বিশেষ কারণে। কারণটি না বললেও ক্লাবের নাম বললেই পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে ফেলবেন। ক্লাবটির নাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড! তারা কিন্তু বাফুফে ভবনে নিছকই সাদামাটাভাবে ঢোকেনি। ঢোকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে, একেবারে মহাসমারোহে। রীতিমতো ৫টি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিকেলের দিকে বাফুফে ভবনে ঢোকে মোহামেডান ক্লাবের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা। সঙ্গে জনাদশেকের ব্যান্ডপার্টির দল। বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন জাগরণের স্বপ্ন নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো বাহিনী এদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের বহুর আলোচিত দলবদলের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এছাড়া এদিন দলবদল সেরে নেয় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড, বসুন্ধরা কিংস এবং নবাগত বাংলাদেশ পুলিস ফুটবল ক্লাব। আজ বুধবার দলবদলের শেষদিন। এদিন বাকি ৯টি ক্লাবেরও দলবদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা। `জাগো মোহামেডান’ ব্যানারে ব্যান্ডপার্টির তালে তালে ডিজে সাউন্ড সিস্টেম প্রয়োগ করে, কেক কেটে, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিকেলের প্রারম্ভে নিজেদের ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে যাত্রা শুরু করে মোহামেডান বাহিনী। বেশিদূর না, হেঁটে গেলে মিনিট পাঁচেক লাগে বাফুফে ভবনে যেতে। মোহামেডান দলের সঙ্গে ছিলেন ৬০ ও ৭০ দশকের খ্যাতনামা ফুটবলার এবং বর্তমান ও সাবেক তারকা ফুটবল সংগঠকরা। সমর্থকদের নিয়ে মোহামেডান বাহিনীর বহরে ছিল প্রায় হাজারখানেক মানুষ! শোভাযাত্রার আগে ছিল মোহামেডান ক্রিকেট একাডেমির ক্ষুদে ক্রিকেটাররা। বিশাল এই শোভাযাত্রায় ছিলেন জহুরুল হক,বশির আহমেদ, জাকারিয়া পিন্টু, গোলাম সারোয়ার টিপু, নওশের, মালা, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ছাইদ হাসান কানন,রিয়াজ উদ্দিন, নিজাম মজুমদার, আব্দুল গাফ্ফার, বাদল রায়, রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, জসিম উদ্দিন জোসি, কায়সার হামিদ,হকি তারকা রাসেল মাহমুদ জিমি, আরিফুল হক প্রিন্স, বাপ্পীসহ সাবেক তারকা খেলোয়াড়। সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন বর্ষীয়ান মনিরুল হক চৌধুরী, মোস্তাকুর রহমান, রেজাউর রহমান সোহাগ, সারোয়ার হোসেন, আবু হাসান চৌধুরী, প্রিন্স, মাহমুদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, সাজেদ এ আদেল, ফজলুর রহমান বাবুল প্রমুখ। মোহামেডানের এই নবজাগরণের মূল উদ্দ্যেক্তা ক্লাবটির সাবেক পরিচালক ও বর্তমান সদস্য মোজাম্মেল হক বাবু। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ছিল মোহামেডানের সাবেক ফুটবলারদের পরনে ছিল কলারযুক্ত ৬০ দশকের সাদা-কালো টি-শাট বা জার্র্সি। বাদল রায় বলেন এই জাগরণের মূল উদ্দোক্তা মোজাম্মেল হক বাবু। তার কল্যাণেই আমরা মোহামেডানের দলবদলকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করেছি। সাবেক সংগঠকদের সহযোগিতায় আমরা মোহামেডানের একটি দল গড়তে সক্ষম হয়েছি।’ মোজাম্মেল বাবু বলেন, আপনারা জানেন দীর্ঘদিন পর মোহামেডানে প্রাণ ফিরে এসেছে। আজ মোহামেডানের জাগরণের দিন। মোহামেডান-আবাহনী ছাড়া দেশের খেলাধুলা নিস্ক্রিয়। আমি মনে করি এবার মোহামেডানের সঙ্গে সঙ্গে সব ঐতিহ্যবাহী দলগুলো জেগে উঠবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই,তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোকে কলুষমুক্ত করার যে উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তার জন্যই এখন ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ বাবু আরও যোগ করেন, আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী। আমি মনে করি আগামী বছর মোহামেডানেরও সাফল্যের বছর হবে। আবার স্টেডিয়াম জেগে উঠবে মোহামেডানের জাগরণে। ক্যাসিনো ব্যবসায় নাম ওঠার পরই দলবদল নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়ে যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুইয়া গ্রেফতারের পর এলোমেলো হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। একসময় যারা ক্লাবে আসতেন সাবেক ফুটবলার থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সবাই এক সঙ্গে কাজ শুরু করেন। অনেকটা তারুণ্য নির্ভর দলগঠন করা মোহামেডান গতকাল খেলোয়াড় নিবন্ধন সম্পন্ন করে। ফুল দিয়ে সাজানো চারটি ঘোড়ার গাড়িতে করে দলবদল করতে আসে মোহামেডান। মোহামেডানের অনেক কিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। আমিরুল ইসলাম বাবুর জায়গায় ক্লাবের নতুন ম্যানেজার করা হয়েছে ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবকে। দলের ব্রিটিশ কোচ শন লেন বলেছেন, আমার লক্ষ্য আসন্ন লিগে সেরা তিনের মধ্যে মোহামেডানকে রাখতে চেষ্টা করা।’ এবারের দলবদল আলোচিত হচ্ছে অন্য একটি কারণে। কারণটির নাম ক্যাসিনো’! আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা ও মোহামেডান ... এই তিনটি ক্লাব ত্রাসিনো কাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপরও মোহামেডান যে ধাক্কা সামলে একটি মাঝারি শক্তির দল গড়তে পেরেছে, সেটি প্রশংসাই পাচ্ছে ফুটবলামোদীদের কাছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরাও এসেছিল কয়েক’শ সমর্থক নিয়ে। বাফুফে ভবনের সামনে থাকা মাঠে বসে ছিল কিংস সমর্থকরা। ভেতরে খেলোয়াড়দের নিয়ে দলবদল সম্পন্ন করেন ক্লাব কর্মকর্তারা। প্রথম আসরে স্বাধীনতা কাপ ও প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জিতেছিল কিংস। এবার ট্রফি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তাদের। জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের সঙ্গে আগেই চুক্তি করেছিল ক্লাবটি। বিপলু-রবিউলদের সঙ্গে আছে ভালমানের বিদেশি। ফিনল্যান্ডে খেলা কাজী তারিক রায়হানের সঙ্গে আছেন আখতাম নাজারোভ। এছাড়া রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিনড্রেস তো আছেনই। সবমিলিয়ে এবারও সব শিরোপা জিততে চায় বসুন্ধরা। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে র‌্যালি করে দলবদল করতে আসে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। রালির সামনে ছিল বিশাল ঘোড়া, এর পিছনে ব্যান্ড পার্টি। জমকালোভাবে দলবদল শেষ করা নবাগত এই ক্লাবটির লক্ষ্য ভাল খেলা। ক্যাসিনো ব্যবসায় নাম ওঠার পরই দলবদল নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়ে যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভুইয়া গ্রেফতারের পর এলোমেলো হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। একসময় যারা ক্লাবে আসতেন সাবেক ফুটবলার থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সবাই এক সঙ্গে কাজ শুরু করেন। অনেকটা তারুণ্যনির্ভর দলগঠন করা মোহামেডান গতকাল খেলোয়াড় নিবন্ধন সম্পন্ন করে। অনেকটা নবজাগরন হয়েছে মোহামেডানের।অনেক কিছুতেই এসেছে পরিবর্তন। আমিরুল ইসলাম বাবুর জায়গায় ক্লাবের নতুন ম্যানেজার করা হয়েছে ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবকে।
×