ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন দেড় ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২১ নভেম্বর ২০১৯

রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন দেড় ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার টিকাটুলিতে রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট টানা দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে অন্তত ৬৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত শতাধিক দোকান। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দশ কোটি বলে দাবি করেছেন। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। এ ঘটনায় মার্কেটের চারদিকে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জানান। তবে রাত সাড়ে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি বলে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়। বুধবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে টিকাটুলী ৪৩/১ ও ৪৩/২ শহীদ নজরুল ইসলাম রোডে অবস্থিত রাজধানী সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে। রাজধানী সুপার মার্কেটটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। পূর্ব দিকের ও পশ্চিম দিকের ভবনটি দু’তলা। আর দক্ষিণ দিকের ভবনটি একতলা। দোকান মালিক হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মার্কেটটি তিনটি অংশে নির্মিত। তিনটি অংশে মোট দোকানের পরিমাণ এক হাজার ৭শ’ ৮৮টি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য দিনের মতোই মার্কেটের দোকানগুলোতে বেচাকেনা চলছিল। বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে আচমকা মার্কেটের পশ্চিম অংশের দু’তলা ভবনের মাঝামাঝি জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই মার্কেটের মাঝামাঝি জায়গায় থাকা দোকানগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মার্কেটের পশ্চিম অংশের দ্বিতীয় তলার মাঝামাঝি জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, সেখানে একটি বেডিং স্টোর অর্থাৎ দরজা জানালার পর্দার দোকান আছে। মূলত পর্দার দোকানটি থেকেই আগুন লাগে। দোকানের পাশেই একটি ফোমের দোকান আছে। আগুন পর্দার কাপড় থেকে দ্রুত পাশে থাকা ফোমের দোকানে লেগে যায়। ফোমের দোকানে লাগার পর আগুন দ্রুত ছড়াতে থাকে। মুহূর্তেই পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এ সময় দোকানি ও ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে যার মত হুড়োহুড়ি করে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত সিঁড়ি থাকায় মানুষের নামতে কোন অসুবিধা হয়নি। অনেকেই তাদের মালপত্রও নিয়ে নেমেছেন। মার্কেটের মায়ের দোয়া বেডিং স্টোর নামের একটি দোকানের মালিক সাজ্জাত বলছিলেন, পশ্চিমের দ্বিতীয় তলায় যে দোকানগুলো ছিল তার কোনটি নেই। কমপক্ষে শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের আরেক দোকানদার আব্দুল অজিজ খান বলেন, যা পুড়েছে তার মধ্যে ৬৫টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ভস্মীভূত শুধু ৬৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১০ কোটি টাকা হবে। এদিকে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তারা মার্কেটের চারদিকে অবস্থান নেয়। এরমধ্যে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে তারা মার্কেটের ভেতরে পানি দিতে থাকে। ফারায় সার্ভিসের ১৮০ জন কর্মী, রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ, র‌্যাব ও জনতা আগুন নেভাতে সহায়তা করে। ফায়ার সার্ভিসের টিটিএল যন্ত্র দিয়ে অনেক ওপর থেকে ঠিক যে জায়গায় আগুন লেগেছিল সেখানেই প্রথমে পানি দেয়। এরপর তার আশপাশে পানি দেয়। যন্ত্রটি চারদিকে ঘুরে ঘুরে পানি দিতে থাকে। যন্ত্রটি কমপক্ষে ১৬ তলা ওপর পর্যন্ত আগুন নেভানোর ক্ষমতা রাখে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানান, ৬টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সম্পূর্ণ নির্বাপণের কাজ চলছে। পশ্চিম পূর্ব এবং দক্ষিণের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট যুক্ত হয় এই আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে মার্কেটের চারদিকে ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের কেউ কেনাকাটা করতে যাওয়া স্বজনদের খবর নিচ্ছিলেন। আবার কেউ ভেতরে থাকা দোকানের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তবে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে আশপাশের ভবনে যেন আগুন ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য পাশের ভবনগুলোতেও পানি দিয়ে ঠা-া করে ফায়ার সার্ভিস। তবে ভবনে কোন রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্ক ছিল না বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। টিনশেড ভবনগুলোতে টিনের চাল ফুটো করে ভেতরে পানি দেয়া হয়। ভেতরে প্লাস্টিক জাতীয় খেলনাসামগ্রী থাকায় সহজে নেভানো যাচ্ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছিলেন। এদিকে, সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের কারণে অভিসার সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মার্কেট থেকে চারদিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেন পুলিশ ও র‌্যাব। মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড়ে, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তানসহ আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত সাড়ে আটটায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাজধানী সুপার মার্কেটটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মার্কেটে নিত্যদিনের ব্যবহার্য হাঁড়ি পাতিল, কসমেটিক্স, কাপড়, স্যান্ডেল, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ব্যাগ, ঘর সাজানোর জন্য বেড শীট, বালিশের কাভার, পর্দার কাপড়, সোফার ফোম, ইমিটেশন সামগ্রী, শিশুদের খেলনা, গিফট সামগ্রীসহ দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল প্রকার পণ্য এই মার্কেটে বিক্রি হতো। মার্কেটটির দ্বিতীয় তলায় থাকা এসব দোকানই পুড়েছে। নিচে থাকা কোন দোকানে আগুন লাগেনি। তবে পানি দেয়ার কারণে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাত আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মার্কেটটির আরও কোথাও আগুন লাগার সম্ভাবনা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। এজন্য ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনই জানা সম্ভব হবে না। তবে আগুন কোথা থেকে কিভাবে লেগেছে তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। কমিটির রিপোর্টেই বিস্তারিত জানা যাবে। আগুনে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫টি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একমাস দশদিন আগে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে রাজধানী মার্কেটে মহড়া দেয়া হয়েছিল। সে সময় মার্কেটের বৈদ্যুতিক তারসহ আরও কিছু দুর্বলতা পাওয়া যায়। এসব ত্রুটি সারাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একমাস সময় দেয়া হয়। মার্কেট কর্তৃপক্ষ দুই মাস সময় চেয়েছিল। তার আগেই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল। এই মার্কেটের পাশেই র‌্যাব-৩ এর অফিস রয়েছে। তবে র‌্যাবের ওই অফিসে কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে উপস্থিত র‌্যাব কর্মকর্তার জানান।
×