ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ প্রিয়নবী (সা)-এর মহান মর্যাদা

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২২ নভেম্বর ২০১৯

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ প্রিয়নবী (সা)-এর মহান মর্যাদা

(গত শুক্রবারের পর) আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তাঁর প্রিয় হাবীবের আলোচনাকে সমুন্নত করেছেন। আল্লাহ্ ছিলেন এক গুপ্ত খাজিনা। তিনি প্রকাশ হওয়ার ইরাদা করে প্রথমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নূর সৃষ্টি করেন। এই নূরই নূরে মুহম্মদী। এই নূর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে তাবত মখ্লুক। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : হযরত আদম (আ) যখন পানি ও মাটির মধ্যখানে ছিলেন তখন আমি খাতামুন্নাবিয়িন বা নবীগণের সমাপ্তি হিসেবে বিদ্যমান ছিলাম। একজন সাহাবী প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ্, আপনাকে কখন নবী করা হয়েছে? উত্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমার নিকট হতে যখন নবুওয়তের মীসাক (অঙ্গীকার) নেয়া হয় তখন আদম রুহ ও দেহের মধ্যখানে ছিলেন। হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম আল্লাহর নির্দেশে যখন কাবা ঘরের দেয়াল তুলছিলেন, তখন আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর দরবারে এই বলে দোয়া করেছিলেন : হে আমাদের রব্! আমাদের দু’জনকে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার এক অনুগত উম্মত সৃষ্টি কর। আমাদের ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব্! তাদের মধ্য হতে তাদের নিকট এক রসূল প্রেরণ কর যে তোমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদের পবিত্র করবে। তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সূরা বাকারা : আয়াত ১২৮-১২৯)। হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম বনী ইসরাঈলের নিকট প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে : আর যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম বলেছিল : হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তওরাত আছে তার আমি সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা (সূরা সাফ্ফ : আয়াত ৬)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু এতই ভালবাসেন যে, তিনি তার নাম ধরে ডাকেননি। কুরআন মজিদে ইয়া আদাম! ইয়া মুসা ইত্যাদিভাবে নবীগণকে সম্বোধন করা হয়েছে, সেখানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে এভাবে- ইয়া আইয়োহান্নাবী, ইয়া ইইয়োহাল মুদ্দাছ্ ছির, ইয়া আইয়োহাল মুয্যাম্মিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মহিমা ও গুণ-মাধুর্য জগতজুড়ে সৌরভ বিলিয়ে আসছে। পৃথিবীর নানা ভাষায় তাঁর জীবনচরিত রচিত হয়েছে। বিভিন্নকালের জ্ঞানী-গুণী মনীষীগণ তাঁর প্রশংসায় মুখরিত হয়েছেন। জেএইচ ডেনিসন এ্যাজ দ্য বেসিস অব সিভিলাইজেশন গ্রন্থে লেখেন- In the fifth and sixth centuries, the civilsed world stood on the verge of chaos, it seemed then that the great civilisation which it had taken four thousand years to construct ws on the verge of disintegration, and that mankind was likely to return to that condition of barbarism were every tribe and sect wsas against the next, and law and oreder was unknown. The new Sanctions Created by Christanity were working divistion and destruction instead of unity and order. It was among the people (Arabs) that the man was born who was to unite the whole known world of the East and South. পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে, সভ্য জগত উপনীত হয়েছে নৈরাজ্যের তুঙ্গে, তখন এটাই প্রতীয়মান হচ্ছিল যে, চার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বিশাল সভ্যতা বিখ-িত হওয়ার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং মানব জাতি বর্বরতার চরম অবস্থায় যেন ফিরে গিয়েছে, যেখানে প্রতিটা জাতি ও গোত্র পরস্পরের বিরোধী ছিল, আইনশৃঙ্খলা বলতে কোথাও কিছু ছিল না। খ্রিস্টধর্মের দ্বারা নিত্যনতুন নিয়ম-অনুশাসন ঐক্য ও শৃঙ্খলার বদলে বিভেদ এবং ধ্বংসের কাজ করছিল। এই জনগোষ্ঠীর (আরবদের) মধ্যে সেই পুরুষপ্রবর জন্মগ্রহণ করলেন, যিনি পূর্ব ও দক্ষিণের সমগ্র জানা দুনিয়াকে একতার বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য আবির্ভূত হলেন। হিরো এ্যান্ড হিরো ওয়ারশিপ-এ স্যার টমাস কারলাইল লিখেছেন : A great change, what a change and progress is indicated here in the universal conditions and thought of men... A greater number of Gods creature believe in Muhammads words at this time than in any other word whatever... Islam means in its way denial of self, annihilation of self. This is yet the highest wisdom that’s eaven has refealed to our earth. To the Arab Nation it was a birth from darkness in to light, Arabia first became alive by means of it. সে এক মহাপরিবর্তন, কী এক দারুণ পরিবর্তন ও প্রগতি সূচিত হলো মানবকুলের বিশ্বজনীন অবস্থায় ও চিন্তায়! আজকের যুগে আল্লাহর বৃহত্তর সংখ্যক মখ্লুক অন্য যে কোন বাণীর চেয়ে হযরত মুহম্মদ (সা)-এর বাণী বেশি বিশ্বাস করে।... আত্মত্যাগ ও আত্মসমর্পণের মধ্যেই ইসলামের অর্থ নিহিত রয়েছে। আমাদের এই পৃথিবীতে নাজিলকৃত আসমানী জ্ঞানের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ। আরব জাতির জন্য এটা ছিল অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ! আরব এরই পরশে প্রথমবারের মতো জিন্দা হয়ে উঠল। টমাস কারলাইল অন্যত্র বলেন : These Arabs, the man Mohammad and that one century, is it not as if a spark had fallen, one spark, on a world of what seemed black unnoticeable sand, but to! the sand proves explosive poer, blazes heaven high from Delhi to Granada. এক জাতি, তাঁর নাম আরব, একজন মানুষ নাম তাঁর মুহম্মদ (সা) আর সেই একটা শতাব্দী। এটা কি তাই নয়, যেন একটি স্ফুলিঙ্গ, শুধু একটি স্ফুলিঙ্গ পড়ল এমন এক পৃথিবীর ওপর, যা দেখে মনে হতো তমশাচ্ছন্ন অজ্ঞাত বালুকণা, কিন্তু দেখ! সেই বালুকণা বিস্ফোরিত হলো বারুদের মতো আকাশ সমান আলো করে আর সেই আলোয় আলোকিত হয়ে গেল দিল্লী থেকে গ্রানাডা পর্যন্ত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা সম্পর্কে অমর কবি মাওলানা আবদুর রহমান জামী আরবী-ফার্সী মেশানো ছন্দবদ্ধ চার পঙ্ক্তিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন। সেই সুন্দর পঙ্ক্তিমালার বাংলা অনুবাদ এমন : হে সৌন্দর্যের অধিপতি, হে মানবকুলের সরদার। তোমার চেহারার জ্যোতিতে আলোকিত হয়েছে চন্দ্র/আমার কাছে নেই কোন যোগ্য ভাষা তোমরা প্রশংসা করার/সংক্ষিপ্ত সারকথা হলো আল্লাহর পরেই তোমার মর্যাদা। (সমাপ্ত) লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ
×