ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নয় বছরের শিরোপাখরা ঘোঁচাতে দৃঢ়প্রত্যয়ী জামাল ভুঁইয়ারা

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২১ নভেম্বর ২০১৯

 নয় বছরের শিরোপাখরা ঘোঁচাতে দৃঢ়প্রত্যয়ী জামাল ভুঁইয়ারা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯৮৪ থেকে ২০১৬। সময়ের হিসেবে ৩২ বছর। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর এবং দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত সাউথ এশিয়ান গেমস (এসএ গেমস) অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২ বার। প্রতিটি আসরেই ফুটবল ইভেন্টটি ছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশ ফুটবল দল শিরোপা জিতেছে মাত্র দুবার! প্রথমবার ১৯৯৯ সালে, দ্বিতীয় ও সর্বশেষ ২০১০ সালে। দীর্ঘ নয় বছর ধরে তারা শিরোপাবঞ্চিত। যদিও এই সময়ে এসএ গেমসের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র একবার। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত একাদশতম সেই আসরে ফুটবলে বাংলাদেশ অর্জন করেছিল তাম্রপদক। দুবার স্বর্ণপদক জেতার পাশাপাশি বাংলাদেশ জিতেছে ৪টি রৌপ্যপদক এবং ২টি তাম্রপদক। রানার্সআপ হয় ১৯৮৪ কাঠমান্ডু (নেপালের কাছে ৪-২ গোলে হার), ১৯৮৫ ঢাকা (ভারতের কাছে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র ছিল), ১৯৮৯ ইসলামাবাদ (পাকিস্তানের কাছে ১-০) এবং ১৯৯৫ মাদ্রাজ (ভারতের কাছে ১-০) আসরে। এছাড়া দু’বার তাম্রপদকও জিতেছিল লাল-সবুজ বাহিনী। ১৯৯১ কলম্বো গেমসে নেপালকে ২-০ গোলে এবং সর্বশেষ ২০১৬ গুয়াহাটি মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে ৫-৪ (২-২) গোলে হারিয়ে এসেছিল স্বান্তনার এই সাফল্য। ফুটবলামোদীরা এখনও আক্ষেপ করেন এই চারটি ফাইনালে যদি বাংলাদেশ জিততে পারতো, তাহলে এসএ গেমস ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল হতো বাংলাদেশই! এই আসরে বাংলাদেশ এবং ভারতই সবচেয়ে বেশি ৬ বার ফাইনাল খেলেছে। এই আসরে সবচেয়ে সফল দলটির নাম শুনলে অবাকই হতে হবে পাঠককে। না, পরাক্রমশালী ভারত নয়, সবচেয়ে বেশিবার স্বর্ণজয়ী দেশটির নাম হচ্ছে পাকিস্তান! তারা জিতেছে চারটি স্বর্ণপদক-১৯৮৯, ১৯৯১, ২০০৪, ২০০৬ সালে। এর মধ্যে প্রথম শিরোপাটি তারা জিতেছিল বাংলাদেশকে হারিয়ে। দ্বিতীয় সফল দল হচ্ছে ভারত। তারা জিতেছে ৩টি স্বর্ণ- ১৯৮৫, ১৯৮৭ ও ১৯৯৫ সালে। এর মধ্যে তারা প্রথম ও তৃতীয় শিরোপাটি করায়ত্ত্ব করেছিল বাংলাদেশকে হারিয়ে। নেপালও জিতেছে ভারতের সমান শিরোপা। ১৯৮৪, ১৯৯৩ ও ২০১৬ সালে। প্রথম শিরোপাটি তারা অর্জন করেছিল বাংলাদেশকে পরাভূত করে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান একবার করে ফাইনালে উঠলেও এখনও তারা কোন শিরোপা জিততে পারেনি। এর মধ্যে আফগানিস্তান এখন আর এএ গেমস থেকে বের হয়ে গেছে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এই ইভেন্টে সিনিয়র জাতীয় দলগুলোই অংশ নিতো। তবে ২০০৪ আসর থেকে নিয়ম হয় অ-২৩ বা যুব দল খেলবে, তবে প্রতি দলই তিনজন করে সিনিয়র ফুটবলার খেলাতে পারবে। আসন্ন এসএ গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের শিরোপা জেতার ভালো সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। কেননা এই প্রথমবারের মতো এই আসরে ভারত ফুটবল ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে না। কারণ একটাই-এখন ভারত সাফ অঞ্চলের ফুটবল নিয়ে আগ্রহী নয়। তারা মাথা ঘামাচ্ছে এশিয়ান গেমস এবং অলিম্পিক ফুটবল নিয়ে। ভারতের অনুপস্থিতি বাংলাদেশকে বিরাট সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন সবাই। তবে অনেকেই আবার মনে করেন, ভারতের অনুপস্থিতিতেও যদি বাংলাদেশ এবার নয় বছরের শিরোপাখরা ঘোঁচাতে না পারে, তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে ভালমতোই অবগত আছেন বাংলাদেশ দলে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। তিনি কোন চাপ নিতে চান না। তবে বলেছেন, ‘ভারত খেলুক আর না খেলুক, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি না। প্রতিটি দলই সমান শক্তিশালী। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা। ১৯৯৯ সালে ফুটবলে প্রথম সোনার পদক জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবার স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল লাল-সবুজরা। এরপর ২০১০ সালে নিজেদের মাঠে আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সাফল্য পেয়েছিল আমিনুল-এমিলিরা। এসএ গেমসের এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। তাই এই ডিসিপ্লিনে স্বর্ণপদক জয়ের দায়িত্ব বর্তেছে ছেলেদের কাঁধে। ইতোমধ্যেই ২০ জনের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। অনুর্ধ-২৩ বছর বয়সীদের নিয়ে হওয়া এই ইভেন্টে তিন সিনিয়র খেলোয়াড় খেলানোর সুযোগ আছে। এ কোটায়দলে সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলের তিন সিনিয়র জামাল ভুঁইয়া, ইয়াসিন খান ও নাবিব নেওয়াজ জীবন। জামালকে দেয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। দলে নতুন মুখ ৪ জন। গোলরক্ষক পাপ্পু হাসান ও মাহফুজ হাসান প্রীতম, আক্রমণভাগে আল আমিন ও রকিব হোসেন। বিকেল চারটায় অনুশীলন ছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক ফুটবল দলের। কোচ ও কয়েকজন খেলোয়াড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত হলো না অনুশীলন। কারণ ২০ জনের মধ্যে আট জন বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের ফুটবলার। বসুন্ধরা তাদের ফুটবলারদের ছাড়েনি জাতীয় দলের ক্যাম্পের জন্য। বসুন্ধরা ফুটবলার না ছাড়ায় অলস সময় কাটাতে হয়েছে কোচকে। এর আগে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব জাতীয় দলের ক্যাম্পের সময় এমন ঘটনা কয়েকবার ঘটিয়েছে। তবে বসুন্ধরা আগেই বাফুফেকে চিঠি দিয়েছিল। তাদের চিঠির ভাষ্য, ফিফার নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের ৭২ ঘন্টা আগে ক্লাব খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য। আমরা ফিফার নিয়ম অনুসরণ করব। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, আমরা ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করার জন্য তাদেরকে আরেকবার অনুরোধ করেছি। তাদের চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের আগে খেলোয়াড় ছাড়তে চান না। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। অলিম্পিক দলের নেপাল যাত্রা হওয়ার কথা ২৬ নভেম্বর। বসুন্ধরার চিঠি অনুযায়ী সেক্ষেত্রে হয়তো তাদের ফুটবলাররা সরাসরি নেপাল যেতে পারেন। জেমি ডে ১১ জন ফুটবলার নিয়ে অনুশীলন শুরু করবেন কি না, এই বিষয়ে এখনও জানা যায়নি। এদিকে জামাল ছুটি নিয়েছেন। রবিবার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা তার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নেপালের উচ্চতার বিষয়টি মাথায় রেখে ২৬ নভেম্বর দেশটিতে যাওয়ার পরিকল্পনাও সেরে রেখেছেন এই ইংলিশ কোচ। তিনি বলেন, এসএ গেমসে পদক জেতা নিয়ে ছেলেদের ওপর কোন প্রত্যাশার চাপ দিচ্ছি না। তাদের বলেছি, যদি আমরা ভালো খেলতে পারি, তাহলে আমাদের পদক জয়ের সুযোগ থাকবে। জেমি আরও যোগ করেন, নেপালের উচ্চতা নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে। এ কারণে ফেডারেশনকে বলেছি, আমাদের ২৬ তারিখে নেপালে পাঠাতে। যাতে করে আমরা এই সমস্যার সঙ্গে আগে থেকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারি। ফুটবলে ভারতের অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে জেমির ভাষ্য, যেহেতু ভারত খেলছে না, সেহেতু আমাদের জন্য এটা ভাল সুযোগ। স্বর্ণপদক জয়ের জন্য আমাদের দল এবং খেলোয়াড়রা যথেষ্ট উপযুক্ত। যদি ভাল খেলতে পারি, তাহলে আমাদের ফাইনালে ওঠার ভাল সুযোগ আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অন্যরাও ফাইনাল খেলতে চাইবে। দলের আবাসিক ক্যাম্প বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার পল্টনের একটি হোটেলে শুরু হয়েছে। ডাক পাওয়া খেলোয়াড়দের তাদের খেলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে বেলা ১২টায় ওই হোটেলে গিয়ে দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপুর কাছে রিপোর্ট করেন। এখন দেখার বিষয়, ভারতের অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ নয় বছরের শিরোপাখরা ঘুঁচিয়ে ফুটবলে তৃতীয় স্বর্ণপদক অর্জন করতে পারে কি না জামাল ভুঁইয়ারা।
×