বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই এক জায়গায়। সেটা হলো বিএনপির মুখের ওপর। ওদের যে মুখের ভাষা, ওদের মিথ্যাচার-অপপ্রচারের ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিএনপি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে। শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তুতি ও মঞ্চ পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক পরিবহন নিয়ে যে সমস্যা ছিল আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সব ধরনের যান চলছে। কোথাও সমস্যা থাকলে আজ (শুক্রবার) থেকে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের দিন আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সম্মেলন ছাড়া কমিটি ঘোষণা হবে না। কাউন্সিলের পর মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের কমিটির ব্যবস্থা করবে যুবলীগের নতুন কমিটি। তিনি বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাই কাউন্সিলররা ঠিক করবেন। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। তাদের সম্মতিতে পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব বাছাই কাউন্সিলররা করবে। তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। তাদের সম্মতিতে পরবর্তী নেতৃত্ব আসবে। এখানে অবশ্যই আমাদের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মূল্যবান পরামর্শ আমরা নেব। তিনি আরও বলেন, কে নেতা হবেন এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। কাউন্সিল সেশনে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম আসবে। অধিক প্রার্থী থাকলে তাদের সমঝোতার মাধ্যমে এক হওয়ার জন্য সময় দেব। সেই সময় সীমার মধ্যে সমঝোতা না হলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের সর্বোপরি নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে নতুন কমিটির চেয়ারম্যান-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতা-কর্মীরা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির রক্তের উত্তরাধিকার কাউকে যুবলীগের নেতৃত্বে চাইতেই পারে, সেটি যুবলীগের অধিকার আছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম, সদস্য সচিব ও বর্তমান যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে অধ্যাপক অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিতর্কিতদের প্রার্থী হয়ে লাভ হবে না
এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে বিতর্কিতদের প্রার্থী হয়ে কোন লাভ হবে না। যিনি অপকর্ম করেছেন তিনি নেতৃত্ব থেকে বাদ যাবেন। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
আগামী ৩০ নবেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ বর্ধিত সভায় ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, একাধিক প্রার্থী হলে যদি সমঝোতা না হয়, তখন আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা করে উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। যেদিন সম্মেলন ওইদিনই নতুন কমিটি নির্বাচন করা হবে। কার কী অবস্থা, কী অপকর্ম আছে- সব জানা আছে। তাই বিতর্কিতদের প্রার্থী হয়ে কোন লাভ হবে না।
দলের দুই মহানগরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্মেলনের ফরমেট নেত্রীর নির্দেশ মতো আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি। সম্মেলনে কে সভাপতিত্ব করবেন, কে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সেটা ঠিক করা হয়েছে। কেউ কারও বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না। প্রতিযোগিতা থাকবে, প্রার্থী হতে পারবে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার চালাবেন না। মনে রাখবেন, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগে আমরা কেউ অপরিহার্র্য না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে কেউ বাদ পড়ে না, নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়। যিনি অপকর্ম করেছেন তিনি নেতৃত্ব থেকে বাদ যাবেন। যারা ক্লিন ইমেজের তারা তো বাদ যাবে না। রাজনীতিতে ধৈর্য্যহারা হলে হবে না। ত্যাগ স্বীকার করলে আজ হোক, কাল হোক আওয়ামী লীগে মূল্যায়ন হবেই।
ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে কোন দলে যদি অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র থাকে তাহলে সেটা আওয়ামী লীগেই আছে। আমরাই সময় মতো সম্মেলন করি। আজ বিএনপির নেতারা এত বড় বড় কথা বলেন কই তাদের দলের তো সম্মেলনের কোন খবর নেই। নিজেদের দলেই তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজেদের দলে গণতন্ত্র নেই। তারা আবার দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে। নিজের ঘরে গণতন্ত্র নেই, তারা আবার দেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।