ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এসএ গেমসে পদক জিতলে আকর্ষণীয় আর্থিক প্রণোদনা দেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

এসএ গেমসে পদক জিতলে আকর্ষণীয় আর্থিক প্রণোদনা দেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গত আসরের চেয়েও এবার ভাল ফলাফল হবে বলে আশা করি ... কথাগুলো জাহিদ আহসান রাসেল এমপির। বৃহস্পতিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় এমনটাই বলেন এই যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। আসন্ন এসএ গেমস উপলক্ষ্যে এদিন সাংবাদিকদের মত বিনিময় করার জন্য তাদের সম্মেলন কক্ষে ডেকেছিলেন তিনি। এখানে তিনি বিশেষ একটি ঘোষণা দেন। সেটা এসএ গেমসে ভাল ফল করা নিয়ে আর্থিক প্রণোদনা সংক্রান্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সেটা হচ্ছে এসএ গেমসে ভাল ফল করা ক্রীড়াবিদদের দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হবে। ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং তাম্রপদক জিততে পারলে তাকে দেয়া হবে যথাক্রমে ৬, ৩ এবং ১ লাখ টাকা। আর দলীয়ভাবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্রপদক জিতলে সেই দলের খেলোয়াড়সহ প্রতিটি কোচিং স্টাফদের জনপ্রতি দেয়া হবে যথাক্রমে ১ লাখ, ৫০ হাজার এবং ৩০ হাজার টাকা করে। এসএ গেমস উপলক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মোট ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এর মধ্যে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা অংশগ্রহণ খাতে এবং বাকি ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রশিক্ষণ খাতে। কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, গেমস উপলক্ষ্যে আমাদের বাজেটের চাহিদা ছিল ৩০ কোটি টাকা। ট্রেনিংয়ের জন্য ১৫ কোটি এবং পার্টিসিেিপটের জন্য ১৫ কোটি। অথচ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মাত্র এর অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি এখনও পাইনি! এ নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দেরি হলেও পুরো টাকাই দেয়া হয়েছে। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসের সময় বাংলাদেশ ক্রীড়া দল প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছিল পুরো এক বছর। এর সুফলও তারা পেয়েছিল গেমসে ১৮টি সোনা জিতে, যা গেমসের এক আসরে তাদের সেরা সাফল্য। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৬ শিলং ও গুয়াহাটি এসএ গেমসের সময় বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ক্যাম্পের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৫ মাস। ফলাফল? আগের ১৮ সোনা থেকে সেবার সোনার পদকের সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ৪-এ! ২০১৯ কাঠমান্ডু ও পোখরা এসএ গেমসের বেলায় এসে দেখা গেছে সেই একই চিত্র। এবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ক্যাম্পের আয়ুস্কাল আরও কম, মাত্র সাড়ে ৪ মাস! তাহলে এত অল্প সময়ের প্রশিক্ষণ-অনুশীলন সম্বল করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কিভাবে আশা করে এবার বাংলাদেশের সাফল্য আগের আসরকেও ছাপিয়ে যাবে? এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, এটা ঠিক এবার ক্যাম্প বেশিদিন হয়নি। তবে এর কিছু কারণ আছে। যেমন তিন-তিনবার আসরের তারিখ বদলেছে। একপর্যায়ে তো গেমস অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়েই সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। এজন্যই যথাসময়ে ক্যাম্প শুরু করা যায়নি। শুরু করার পরও তারিখ নিযে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তখন আমরা এই ভেবে ক্যাম্প বন্ধ না করে তা চালিয়ে গেছি, এসএ গেমস না হলেও এই ক্যাম্প চবে এবং এখান থেকেই আমরা বাংলাদেশ গেমস আয়োজন করবো। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এসএ গেমসের পদকজয়ীদের আর্থিক প্রণোদনা দেবে, খুব ভাল কথা। কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, তা হলো-বিভিন্ন ফেডারেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, মাঠ সমস্যার সমাধান করা, উন্নতমানের বিদেশী কোচ এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ... এরকম বহু বছরের পুরনো সমস্যাগুলো কেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সমাধান করে না? আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার চেয়ে এগুলোই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? আরেকটি বিতর্কিত বিষয় নিয়েও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় মত বিনিময় সভায়। অতীতে অনেকবারই দেখা গেছে বিদেশে কোন আসরে খেলতে গেলে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের সুযোগ্য কর্মকর্তারা প্রমোদ-ভ্রমণে ব্যস্ত থাকেন। সেই ব্যস্ততার মাত্রা এতটাই বেশি থাকে যে, তারা ঠিকমতো কোন ভেন্যুতেই যান না, ক্রীড়াবিদদের খোঁজ-খবর নেন না, তাদের কোন সমস্যা হলে সেগুলোর সমাধান করতে সচেষ্ট হন না। তারা শশব্যস্ত থাকেন ঘোরাঘুরিতে এবং শপিংয়ে। একবার তো এক কর্মকর্তা টিমি মিটিং এবং ম্যানেজার্স মিটিংয়েই গরহাজির ছিলেন। এর ফলে সেই ইভেন্টে বাংলাদেশের এক এ্যাথলেট অংশই নিতে পারেননি! অথচ সেই কর্মকর্তাকে তেমন কোন শাস্তিই দেয়া হয়নি। এবারের এসএ গেমসেও যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে, তাহলে কি এবারও দোষীদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হবে? রাসেল বলেন, মোটেও না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে। সাবেক এক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলকে তাদের দুটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার জন্য দু'দফায় ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ মহিলা ফুটবল দল আজ পর্যন্ত একটি টাকাও পায়নি। এ নিয়ে বর্তমান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কি ভাবছে? রাসেলের জবাব, যিনি এই কাজটা করেছেন, তিনি ঠিক কাজ করেননি। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোন আলাপ-আলোচনা না করে তিনি এমন কোন ঘোষণা দিতে পারেন না। এর দায়ভার সম্পূর্ণ তার। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নেব। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ২০২০ সাল মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী ব্যাপক ক্রীড়াযজ্ঞের আয়োজন করবো। মোট ৯২টি ক্রীড়া ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এসএ গেমস বাদে বাংলাদেশ ক্রীড়া দলের সার্বিক প্রস্তুতির জন্য আমরা ১০ কোটি বরাদ্দের ব্যবস্থা করবো।
×