ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেড় বছরেও ধরা পড়েনি দুই ধর্ষক, নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

দেড় বছরেও ধরা পড়েনি দুই ধর্ষক, নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ ॥ উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে শিশু ধর্ষণের ঘটনার দেড় বছর পার হলেও ধরা পড়েনি অভিযুক্ত দুই ধর্ষক। এদিকে ১৩ বছরের ওই শিশুটি অন্ত:সত্তা হয়ে পড়লে গত ৬ জুন ঈদের দিন শিশুটির গর্ভে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে রুহান (৭ মাস)। এদিকে ওই নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং ঘটনার দেড় বছর পরও মূল দুই অভিযুক্ত রাকিব (১৭) ও মোবারককে (১৮) পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় শঙ্কিত ধর্ষিতার পরিবার। এই ঘটনায় শিশুটির বাবা ধর্ষণের বিচার চেয়ে এলাকার ইউপি সদস্য সহ মাতাব্বরদের কাছে ধরনা দেওয়ার পরও সালিশকারিরা কালক্ষেপণ করে ধর্ষকের আলামত নষ্ট করেছে। পরে ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ সহ গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হলে পুলিশ তৎপর হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ শিশুর বাবাকে থানায় এনে মামলা করান। কিন্তু ধর্ষণের সাথে জড়িত মামলার মূল অভিযুক্তরা এখনো ধরা না পরায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পরিবারটি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী ধর্ষিত শিশুটির বয়স ছিল ১৩ বছর। যে বয়সে হেসে খেলে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেই বয়সে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছে। এখন ধর্ষণের বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবারের লোকজন। ধর্ষিত শিশুর মা বলেন, মামলার পর প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হচ্ছি। ঘটনার পর সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। কোন জায়গায় বিচার চেয়েও পাচ্ছি না। তারা কেউ (দুই ধর্ষক) এখনো ধরা পড়েনি। এই অবস্থায় মরণ ছাড়া কোন গতি দেখছি না। যারা আমার মেয়ের জীবনে কালি লেপে দিল তাদের কি বিচার হবে না? আর নবজাতক রুহানের ভবিষৎই কি হবে। আমরা তো গরিব মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাশের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে ধর্ষিত হয় শিশুটি। এ ঘটনার পর গ্রামে জনপ্রতিনিধি সহ মাতাব্বরদের কাছে বিচারের দাবি জানালেও তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে বাধ্য হয়েই কিশোরীর বাবা গত ২৫ এপ্রিল বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নান্দাইল থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রতিবেশি আকরাম মিয়ার পুত্র রাকিব ও চান মিয়ার পুত্র মোবারক হোসেন নামে দুই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সালিশের নামে কালক্ষেপণ ও ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার অভিযোগে পুলিশ মামলায় ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ২০১/৩৪ ধারা যুক্ত করে বর্তমান ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম, সালিশকারি ছলেম উদ্দিন, তাহের উদ্দিন, লাল মিয়া, রুবেল, আজিম উদ্দিন ও বাচ্চু মিয়াকে অভিযুক্ত করে। এই মামলায় পুলিশ ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম ও সালিশকারি লাল মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠালে এক সপ্তাহ পর তারা জামিনে বেড়িয়ে আসে। অন্য আসামিরাও আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন লাভ করেছে। কিন্তু পুলিশ দুই ধর্ষককে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসেম বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে আট জন আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। ধর্ষণের সাথে জড়ির দুই অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে। আমরা আশাবাদি দ্রুতই তাদের (ধর্ষক) গ্রেফতার করতে পারবো।
×