ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সান্তনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সান্তনা

সময়টা ২০০৫ সাল সান্তনা রানী রায় তখন পড়াশোনা করছেন রংপুর সরকারী কলেজে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে। সেই সময়ে রংপুর বিয়াম কলেজের শিক্ষক এ বি বাবেল তাঁকে কারাতে দো শেখার সুযোগ দেন। এরপর ২০১০ সালের মাঝামাঝি রাজশাহী সরকারী কলেজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য ভর্তি হন সান্তনা রানী রায়। সেখানে শিক্ষক এস এম তাহমিদুল হকের তত্ত্বাবধানে তায়কোয়ান্দোর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১১ সালের নবেম্বর মাসে ঢাকায় পরীক্ষা দিয়ে সান্তনা রানী রায় নিজে ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ অর্জন করেন। এর পর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুরের হরিদাস গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে সান্তনা। বাবা সুবাস চন্দ্র রায় কৃষক, মা যমুনা রানী রায় গৃহিণী। কুড়িগ্রামের একটি বেসরকারী সংস্থায় মাঠ সংগঠকের চাকরি করেন সান্তনা। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ছোটবেলার থেকেই সান্তনার স্বপ্ন ছিল একদিন না একদিন মা বাবার কষ্ট ঘোচাবেন। সেই প্রত্যয়ে পথচলা আমাদের সান্তনার। ছোটবেলায় স্কুলে দেখতেন বড় দিদিরা মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেই থেকেই তার আগ্রহ মার্শাল আর্ট (তায়কোয়ান্দো) এর প্রতি। তাই যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই নিয়েছেন প্রশিক্ষণ। দরিদ্রতা কখনও তার পথরোধ করতে পারেনি। সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই মার্শাল আর্ট (তায়কোয়ান্দো) প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ একজন মার্শাল আর্ট কন্যা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। বর্তমানে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে এলএলবি শেষ করছেন। লালমনিরহাট জেলার প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন সান্তনা রানী রায়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় আইটিএফ তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম হয়েছিলেন। বিদেশের মাটিতেও তাঁর সাফল্য এসেছে ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে সপ্তম এশিয়ান তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম হন সান্তনা রানী রায়। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় আইটিএফ তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়। তার ধারাবাহিকতায় এই বছর উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ২০তম তায়কোয়ান্দো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান সান্তনা। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো এ্যাসোসিয়েশন তাঁর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিমান ভাড়া, অংশগ্রহণ ফি, পোশাক পরিচ্ছদের খরচসহ সান্তনা রানী রায়কে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দেয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু তাঁর পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই। বিষয়টি জেনে লালমনিরহাটে বিভিন্ন ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাঁকে সহায়তা করেন। যে স্বপ্ন দেখত কোন একদিন বড় কোন প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে অংশ নেয়ার। তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল আমাদের সান্তনা অংশগ্রহণ করল ২০তম তায়কোয়ান্দো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায়। চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ে ২০তম তায়কোয়ান্দো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রতিযোগীকে হারিয়ে আমাদের সান্তনা রানী রায় বাংলাদেশের পক্ষে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। ৭৫ কেজি ওজন বিভাগের এ খেলায় উত্তর কোরিয়া সোনা এবং রাশিয়া রুপা জেতে।
×