ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনুপ্রেরণার আরেক নাম তুষার কবির

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  অনুপ্রেরণার আরেক নাম তুষার কবির

মনেপ্রাণে তার বাংলাদেশ। দেশ, মা, মাটি মানুষের প্রতি তার অসম্ভব টান। থাকেন সুদূর লেবানন। তাতে কি? সেখানে বসেই দেশের সব ভাল দিক তুলে ধরেন। সোশ্যাল মিডিয়ার তার পোস্টগুলো দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদের অনুপ্রেরণা দেয়। প্রয়োজনীয় তথ্য সরবারহ করে। দেশের কারও কোন ভাল উদ্যোগ, সফলতা যেটাই হোক। কিছুই তার চোখ এড়ায় না। খুঁজে বের করে তুলে ধরেন। পোস্ট শেয়ার করেন। বিশ্ব পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী এর কথাই ধরা যাক। তাকে সর্বপ্রথম ফেসবুকে তুলে ধরেছে সে। এলিজা বলছিলেন, আমি নিজেকে নিয়ে এত সচেতন ছিলাম না। আমার ৪১ দেশ ভ্রমণের পর সে আমাকে নিয়ে প্রথম ফেসবুকে পোস্ট দেয়। দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ ট্রাভেল নিয়ে সে প্রথম পোস্ট দেয়। আমি তাকে চিনতাম না, ফেসবুকে সে আমাকে খুঁজে বের করে সব কাজ করেছে। অনেক বড় মনের মানুষ। সে ছোট-বড় সবাইকে অনুপ্রেরণা দেয়। পরপোকারী মানুষ। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন জুবায়ের কবির তুষার। ফেসবুকে তার আইডির নাম তুষার কবির ডিএইচকে। কনস্যুলর সহকারী, বাংলাদেশ হাই কশিশন, বৈরুত, লেবানন হিসেবে বাংলাদেশ দূতাবাস বৈরুতে কর্মরত আছেন তিনি। তাও প্রায় পাচ বছর। ফেসবুকে তুষারের ফলোয়ার আছেন প্রায় দুই হাজার। বন্ধু আছেন পাচ হাজার। ইতিবাচক, পজেটিভ সব কিছুতেই তুষারের আগ্রহ। অসম্ভব রকম আশাবাদী একজন মানুষ। ফেসবুক ইনফোতে তিনি লিখেছেন- পরাজয়ে ডরে না বীর, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়ো। বুকে থাকুক বাংলাদেশ। প্রতিদিনই বাংলাদেশের পজেটিভ সংবাদগুলো তিনি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। তার চিন্তা-চেতনায় এক টুকরো পজেটিভ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের খেলা। একবলে দশ রান দরকার। জেতার আশা নেই বললেই চলে। তখন দেখা যাবে তুষার লিখলেন, বাংলাদেশ জিতবে। অনেকগুলো উইকেট পড়ে গেছে। ও কিছু না। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতবে। এমন সব আশাবাদী কথা তুষার লিখে পোস্ট দেন। কোন সময়ই তাকে নৈরাশ্যবাদী, নেগেটিভ পোস্ট দিতে দেখা যায় না। দেশ বিদেশে যাই ঘটুক। অনেক সময় তুষার এর পোস্টে তা দ্রুত জানা যায়। অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে তার জুড়ি নেই। যারা একদম হতাশ। কোন কিছুতেই আশা খুঁজে পান না। তারা তুষারের পোস্টে আশা খুঁজে পান। এ রকমই একজন ইভা রহমান। তিনি বলেন, তুষার ভাই এর পোস্টগুলো পজেটিভ তো বটেই। পাশপাশি মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। তার পোস্ট পড়ে অনুপ্রাণিত হই। নিজে প্রবাসী বলেই নয়। প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট তুষারকে ছুঁয়ে যায়। সে কারণেই বিভিন্ন সময় প্রবাসীর দুঃখ-কষ্টের কথাও তার পোস্টে পাওয়া যায়। শুধু রাষ্ট্র, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের ভাল পজেটিভ কাজ নয়। ব্যক্তির ভাল কাজও তুষায় সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেন। এমন খোলা মনের মানুষ বিরল। ভালটাই যিনি দেখেন। সে যেই হোক। এমন মতামত সামাজিক মাধ্যমে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী হানিফ হাসানের। সামসুন্নাহার সুমা। সভাপতি হিমু পরিবহন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়, তুষার কবির এর পোস্ট বিষয়ে বলেন, দিন দিন আমরা মানুষ হিসেবে খুব জটিল হয়ে যাচ্ছি। খারাপ চিন্তাটাই আগে মাথায় চলে আসে। সেখানে তুষার ভাই মানুষ হিসেবে খুবই পজিটিভ। যে কোন ব্যাপার সেটা কাজ বা অন্য কিছু হোক একদম শূন্য আশা থেকে একটা সফল গল্পে পরিণত করতে পারেন তিনি। আশা দিতে পারেন, ভরসা হতে পারেন এমন একটা মানুষ হলেন তুষার ভাই। হুমায়ূন ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহন। ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই। টগবগে তরুণ জুবায়ের কবির তুষারের হাত ধরে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। জুবায়েরের সঙ্গে তখন ছিলেন সৈয়দ মুনির, আসলাম হোসেন, হুর এ জান্নাত প্রমুখ। লেখকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশ পল্লাীতে জড়ো হয়েছিলেন তারা, সেখানেই তুষার হিমু পরিবহন গঠনের কথা তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই তার সঙ্গে একমত হন। ফেসবুকে পেজ খোলা হয়। এভাবেই শুরু হিমুদের হিমু পরিবহনের। বিদেশে থেকে তুষার হিমু পবিহনের কাজে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা যোগান। বিখ্যাত ভ্রমণকন্যা সমাজকর্মী সাকিয়া হক বলেন, তুষার ভাই একজন অনুপ্রেরণা। সে ট্রাভেলসের কমিটি মেম্বার। আমাদের ভ্রমণকন্যা সংগঠন শুরুর পেছনে তার অনেক মোটিভেশন ছিল। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে শিখান। স্তন ক্যান্সার সচেতনতায় কাজ করছেন সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী। তিনি বলেন, তুষার ভাই হলেন এমন একজন মানুষ যিনি বিদেশে বসে থেকেও বাংলাদেশের মানুষকে ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করার জন্য আমার প্রধান অনুপ্রেরণাকারী মানুষ তুষার ভাই। যে কোন পরামর্শ জন্য ভাইকে ইনবক্সে নক করি। সঠিক পরামর্শ দেন। যে কোন ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি একজন ইতিবাচক মানুষ। নিজের প্রচার, প্রসার একদমই অপছন্দ তুষারের। আত্মপ্রচারে সে বিশ্বাসী না। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি নিজের বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছিলেন না। তার কথা হলো, আমি তেমন কিছু নই। আমি কিছু না। তবে অনেক কিছু করতে চাই। হতাশ, নেতিয়ে পড়া তরুণদের জন্য তুষার এক উদাহরণ। তারা তুষারকে কে দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে। এমনটাই অনেকে মনে করেন।
×