ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৪২ টাকার পেঁয়াজ কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

৪২ টাকার পেঁয়াজ কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানিকৃত প্রতিকেজি ৪২ টাকার পেঁয়াজ কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মানবিক মূল্যবোধ না থাকার কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে নতুন সঙ্কট তৈরি হয়। তবে এই সঙ্কট দূর করতে আগামী ৪০ দিনের মধ্যে আরও ১ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে আনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপের পেঁয়াজ বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের ব্যয় ৪২ টাকা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ফারস হোটেলে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আব্দুস ছাত্তার। মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এদিকে, যৌক্তিক লাভ রেখে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তে ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, সিটি বা মেঘনা গ্রুপ যে পেঁয়াজ দিচ্ছে, এর বাইরেও ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আনছেন। এই পেঁয়াজের মূল্যও কিন্তু কোনো অবস্থায় ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারা তো বিক্রি করছে কয়েকগুন বেশি দামে। তাহলে আপনাদের সেই মানবিক মুল্যবোধটা কোথায়? বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটাই পথ সেটি হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করে এই ধরনের মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দেয়া। যারা দুর্ভিক্ষের সামনে, ক্রাইসিসের সামনেও নিজেদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে না, তারা ব্যবসায়ী হতে পারে না। দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে, ক্রাইসিসে রেখে আপনারা মুনাফা করেন সমস্যা নাই, লজিক্যাল মুনাফা করেন। ৫ টাকা লাভ রেখে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়েন। এরপরও বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকা হবে। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি শুধু প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করছে। দীর্ঘ লাইন ধরে ভোক্তাদের এসব পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত প্রতিকেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ১৬০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। এদিকে, বিদেশ থেকে ৪০-৪২ টাকায় পেঁয়াজ এনে তা কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ওই ব্যবসায়ীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দরকার হলে আমাগী ৪০ দিনের মধ্যে এক লক্ষ টন পেঁয়াজ আমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে আসব। গত ছয় দিন ধরে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ ঢুকতে শুরু করেছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ-তারা বলেছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টন মাল দেবে। সবচেয়ে আনন্দের কথা তারা বলেছে, তারা এক টাকাও প্রফিট করবে না। যত কোটি টাকা লাগে ইনভেস্ট করবে। গত তিন দিন ধরে তারা টিসিবিকে যা দিয়েছে সেটা সর্বমূল্যে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪২ টাকা। সেই দামের কস্ট প্রাইসের কাগজ পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। তবে সমস্যাটা হয়েছে এই পরিমাণ যথেষ্ট নয় আমাদের বাজার সার্ভ করার জন্য। আমাদের আরও পেঁয়াজ দরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর যখন ভারত পেঁয়াজ বন্ধ করে দিল, সেদিন সন্ধ্যার সময়ে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। পেঁয়াজ তো তখন স্টকে ছিল, কোনো কোনো ব্যবসায়ী সাথে সাথে সেই সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে। আমাকে বহুবার বলা হয়েছে জেলে দেন, ক্রসফায়ারে দেন। কোথাও বলেছে, বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না পদত্যাগ করতে। কোনো সমস্যা নাই আমার। তাতে দেশের সবকিছু বিশেষ করে পেঁয়াজের দাম যদি ঠিক যেত, তাহলে আমার তো কিছু যায় আসে না। এই মন্ত্রিত্ব কাজ করার জন্য, জব করার জন্য। ভবিষ্যতে পেঁয়াজ সংকট সমাধানে আগামী তিন বছরের মধ্যে এই পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরিকল্পনা জানান টিপু মুনশি। তিনি বলেন, এই সমস্যা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের ওভারকাম হতে হলে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকব, আর ভারত যখন খুশি বন্ধ করে দেবে, তাহলে আমরা কীভাবে পেঁয়াজের বাজার ঠিক রাখব? বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উপায় একটাই, আমাদের এই পণ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। সেদিন আমি এবং প্রধানমন্ত্রী বসেছিলাম, পেঁয়াজ নিয়ে কথা হচ্ছিল.। তিনি বলেছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আমাদের যেভাবে হোক আত্মনির্ভরশীল হতেই হবে। এবার সরকারের শিক্ষা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ক্রাইসিস আমাদের আছে, তবে এই ক্রাইসিস সব সময় থাকবে না। পেঁয়াজ ডাবল-ট্রিপল দামে কিনে আমরা মরে যাব না। আমাদের শিক্ষা হয়েছে, কথায় আছে, কখনও কখনও বিপদ সম্পদে রূপান্তর হয়। ক্রাইসিস আমরা ফেস করব, ওভারকামও করব। তিনি বলেন, পেঁয়াজ চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একটাই পথ-আমাদের উৎপাদক, কৃষক যেন দামটা পায়। কারও মুখের দিকে তাকাতে হবে না, তারা চ্যাম্পিয়ন পিপল। তারা যখন পেঁয়াজ উঠায় ১০ থেকে ১৫ টাকা পায়। সেই সময়ে আমরা যদি তাদের ৩০ টাকা দিতে পারি, এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের ১০ টাকায় পেঁয়াজ খাওয়াতে হবে-ইটস নট লজিকাল। তিনি বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার যখন পেঁয়াজ উঠবে তখন কোনো ধরনের আমদানি করতে দেয়া হবে না। উৎপাদকদের দাম পেতে হবে। তারা যদি ভালো দাম পায় তাহলে কারও দরকার হবে না। আগামী তিন বছরে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×