ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চারুকলার ছাত্রী প্রিয়া যখন স্বর্ণজয়ী কারাতেকা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

চারুকলার ছাত্রী প্রিয়া যখন স্বর্ণজয়ী কারাতেকা

স্পোর্টস রিপোর্টার, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে ॥ পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে। দেখলেই বোঝা যায় মেয়েটি খুবই শান্ত-শিষ্ট। কিন্তু অবাক হবেন তখনই, যখন শুনবেন ১৯ বছর বয়সী সুদর্শনা এই মেয়েটি মারামারিতে বেশ পটু। এমনই পটু যে, এসএ গেমসে সোনার পদকই জিতে ফেললেন! মঙ্গলবার মেয়েদের কারাতেতে ব্যক্তিগত কুমিতে মাইনাস ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে সোনা জিতেছেন বাংলাদেশের মারজান আক্তার প্রিয়া। এবারের আসরে প্রথম বাংলাদেশি নারী এ্যাথলেট হিসেবে সোনা জেতেন তিনি। ফাইনালে তিনি হারান পাকিস্তানের কৌসারা সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে। স্বর্ণসাফল্য কুড়িয়ে নেয়ার পর প্রিয়া বলেন, ‘গতকালের রেজাল্টে আমরা সবাই হতাশ ছিলাম। তাই আজ সোনা জিততে পারব কিনা, তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। প্রথম যখন বাংলাদেশ সোনা পায়, তখন মনে হয়েছে আমিও পারব। আমারও সুযোগ আছে। তখন আমার মধ্যে একটা বিশ্বাস জন্মেছিল একটু চেষ্টা করলে পারবো। এরপর সবার সমর্থনে বিশেষ করে আমার বাবা-মায়ের দোয়ায় আজ পর্যন্ত আমি এখানে আসতে পেরেছি। স্বর্ণজয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সাড়ে তিন বছর ধরে কারাতে খেলা প্রিয়া। ২০১৬ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছিলেন প্রথমবারের মতো। এরপর ২০১৮ আসরে টিম কাতায় স্বর্ণ জেতেন। মজার ব্যাপার-গত ৪ নভেম্বর ঢাকায় সাউথ এশিয়ান কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের মানিশ চৌধুরীর কাছে হেরে রূপা জিতেছিলেন প্রিয়া। এবার সেমিতে তাকে ২-১ পয়েন্টে হারিয়েই ফাইনালে ওঠেন প্রিয়া! বাবা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান পুলিশের এসআই আর গৃহিণী মা নূরজাহানের সমর্থনে এগিয়ে চলা প্রিয়া ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতেন। এ্যাথলেটিক্স, লং জাম্প আর হাইজ্যাম্প খেলতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে জাতীয় স্পোর্টস কমপ্লেক্সে যাই। ওখানে ছোটখানো ক্লাব গেম হয়, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন গেমে অংশগ্রহণ করার পর কোচদের নজরে আসি। এরপর আনসার টিমের হয়ে খেলি। ওখান থেকে আমার ন্যাশনালে ঢোকা। ছোটবেলা টিভিতে মুভি দেখতাম জ্যাকি চ্যানের। আমি তার বিশাল ফ্যান। আর ব্রুসলির নাম নিতেই হবে। ওদের মার্শাল আর্টগুলো দেখে ভাবতাম বাংলাদেশে এসব খেলাধুলা কোথাও আছে কিনা তা খুঁজতাম। জানতাম কোথাও না কোথায়ও আছে। ওই যে কথায় বলে না যে চাইলে আল্লাহ সবকিছু মিলিয়ে দেয়। ঠিক এইভাবেই একটু একটু করে এই পর্যায়ে এসেছি। রূপালি পর্দার মারামারি আর বাস্তবের মারামারির মধ্যে অনেক তফাত আছে বলে মনে করেন প্রিয়া, রুপালি পর্দার মারামারি তো শুধু একটা শো। ওখানে কোন ইনজুরি, প্র্যাকটিস, ঘাম ও দিনের পর দিন সাধনা থাকে না। কিন্তু এখানে অনেক শ্রম, অনেক সাধনা। অনেক আত্মবিশ্বাস থাকতে হয়, সবার সাপোর্ট থাকতে হয়। যদিও প্রথমদিকে কারাতেতে আসার আগে নিজ পরিবারেরই কোন সমর্থন পাননি প্রিয়া। অনেক বকা শুনেছি। বকা শুনে ওটাকে জেদ হিসেবে নিয়েছি ফেনীর দাগনভুইয়ার মেয়ে প্রিয়া তার জেতা স্বর্ণপদক তার বাবাকে উৎসর্গ করেছেন। হেসে বলেন, আশা করি দেশের জন্য সোনা জেতার পর থেকে আমার পরিবার আমাকে আর কারাতে খেলতে বাধা দেবে না! মঙ্গলবার ফাইনালে খেলার সময় প্রথম রাউন্ডে অনেক কেঁদেছিলেন প্রিয়া,পারব কি না, এটা নিয়ে কেবল ভাবছি। কারণ তখন পর্যন্ত কোন মেয়ের স্বর্ণ আসেনি। স্বর্ণ যখন আসলো একমাত্র আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। তখন অনেক কেঁদেছিলাম।
×