ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

কঠিন সময়ে আজারেঙ্কা

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

কঠিন সময়ে আজারেঙ্কা

আরও একটি বছরের সমাপ্তি। এ মৌসুমের পুরোটা সময়ই কোর্টে লড়াই করেছেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। কখনও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কখনওবা লড়াই করেছেন ইনজুরির সঙ্গে। এই লড়াইয়ের শেষে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার সাফল্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তরটা খুবই হতাশার। ২০১৯ সালে সুপার ফ্লপ ছিলেন বেলারুশ সুন্দরী। গ্র্যান্ডস্লাম জয় তো দূরের কথা আজারেঙ্কার সেরা ফলাফল এবার তৃতীয় রাউন্ড। সিমোনা হ্যালেপের কাছে হেরে উইম্বলডনের তৃতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫০ নম্বরে থাকা এই তারকা। এ মৌসুমের সূচনাতেই ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশ করেন আজারেঙ্কা। মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন তিনি। তাও আবার অখ্যাত লারা সিগেমুন্ডের কাছে হেরে। মৌসুমের তৃতীয় মেজর টুর্নামেন্ট উইম্বলডনের তৃতীয় পর্বে হেরেছিলেন সিমোনা হ্যালেপের কাছে। শেষ পর্যন্ত এই রোমানিয়ান তারকাই শিরোপা জিতেন উইম্বলডনের। গ্র্যান্ডস্লাম ছাড়া তার সেরা সাফল্য মনটেরির ফাইনালের টিকিট কাটা। সেই পথে এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা এবং জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবারকেও হারান তিনি। কিন্তু ফাইনালে গারবিন মুগুরুজার বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় সেটে ইনজুরির কারণে নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন বেলারুশ তারকা। এককে পুরোপুরি ব্যর্থ হলেও দ্বৈতে আশা জাগিয়েছিলেন আজারেঙ্কা। আকাপুলকোতে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এই টুর্নামেন্টে জুটি বেঁধেছিলেন ঝেং সাইসাইয়ের সঙ্গে। এছাড়া ইউএস ওপেনের ডাবলসেও ফাইনালের টিকিট কাটেন আজারেঙ্কা। মৌসুমের শেষ মেজর এই আসরে তিনি জুটি বেঁধেছিলেন বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকা এ্যাশলে বার্টির সঙ্গে। তথাপি শিরোপা জিতে মৌসুম শেষ করতে ব্যর্থ হন সাবেক ও বর্তমানের দুই শীর্ষ তারকা। অথচ, বিশ্ব টেনিসে অভিজ্ঞ এক খেলোয়াড়ের নাম আজারেঙ্কা। বয়সে ত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ২০১২-১৩ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে টেনিস বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন বেলারুশ সুন্দরী। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সন্তান জন্মের কারণে অনেকটা সময় টেনিস কোর্টের বাইরে ছিটকে পড়েন আজারেঙ্কা। কোর্টে ফেরার পরও পারিবারিক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে সময় পার করেন অনেকটা। তবে বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই এ মৌসুমে টেনিস কোর্টে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। বেলারুশ তারকার জন্ম ১৯৮৯ সালে। ২০০৩ সালে ইসরাইলে অনুষ্ঠিত আইটিএফ জুনিয়র ট্যুরে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক হয় আজারেঙ্কার। পরের বছর উইম্বলডনে বালিকা বিভাগের প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে পৌঁছলেও আনা ইভানোভিচের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেন তিনি। ম্যাক্স মির্নিকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৭ সালের ইউএস ওপেনের মিশ্র দ্বৈতে শিরোপা লাভ করেন আজারেঙ্কা। পরের বছর বব ব্রায়ানকে সঙ্গী করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের মিশ্র দ্বৈতেও সফলতা লাভ করেন তিনি। এরপর ২০১১ সালে লেখাপড়ার কারণে টেনিস ছেড়ে দেবার ঘোষণা দেন এই তারকা। তবে পরিবারের অনুপ্রেরণায় আবারও কোর্টে ফেরেন তিনি। আর ফিরেই চমকে দেন গোটা টেনিস দুনিয়াকে। প্রথম বেলারুশীয় হিসেবে পরপর দুবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। সেই সময়টাই ছিল তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী সময়। কিন্তু সেই সময়টা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেননি বেলারুশিয়ান। ইনজুরি, পারিবারিক ঝামেলা আর ফর্মহীনতার কারণে যেন হারিয়েই গেছেন টেনিস থেকে। তারপরও হাল ছাড়ছেন না আজারেঙ্কা। নতুন বছরেও নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কোর্টে নামবেন তিনি। তবে পারবেন কী স্বরূপে ফিরতে? অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। শুধু আজারেঙ্কাই নন, ২০১৯ সালে ব্যর্থ ছিলেন মারিয়া শারাপোভা, ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, ভেনাস উইলিয়ামস, এ্যাঞ্জেলিক কারবার, গারবিন মুগুরুজা, পেত্রা কেভিতোভা কিংবা সেরেনা উইলিয়ামসের মতো তারকা খেলোয়াড়ও। এ মৌসুমে মেজর কোন শিরোপার দেখা পাননি তাদের কেউ। আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস এবং চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভা অবশ্য গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন। বাকিরা ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রোভ। বিশেষ করে মারিয়া শারাপোভা আর ভেনাস উইলিয়ামস যেন হারিয়েই যাচ্ছেন টেনিস থেকে। তারপরও হাল ছাড়ছেন না। নতুন মৌসুমে নতুন করে জ্বলে ওঠার প্রত্যয় শোনা যাচ্ছে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কণ্ঠে। ২০১৯ সালে পুরুষ এককে দেখা গেছে কেবল রাফায়েল নাদাল আর নোভাক জোকোভিচের দাপট। চার গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট সমান দুটি করে ভাগ করে নিয়েছেন এই দুজন। পক্ষান্তরে হতাশ করেছেন রজার ফেদেরার। এ মৌসুমে মেজর কোন শিরোপার দেখা পাননি তিনি। যার ফলে ২০১৮ সালে জেতা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনই তার ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম। বয়সে আটত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন। পারফর্মেন্সেও নেই সেই ধার। যে কারণেই প্রশ্নটা এখন উঠছে ফেদেরারকে নিয়ে। কখন অবসরে যাবেন সুইস তারকা? ফেদেরার নিজেই জানিয়ে দিচ্ছেন তা। তবে ফেদেরার এখন থামছেন না। বরং জানালেন, শরীর যত দিন দেবে, তত দিন খেলে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার। নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার অবসরের পুরো ভাবনাটাই নির্ভর করছে আমার শারীরিক অবস্থার ওপর। এই মুহূর্তে আমি থেমে যাওয়ার কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না।’ চলতি মৌসুম শেষ হওয়ার পর বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনে রয়েছেন ফেদেরার। রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচের পর। ফেড এক্সপ্রেস বলেন, ‘আমার যত দূর মনে পড়ছে, ২০০৯ সালে প্রথমবার আমাকে অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার পর দশ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও টেনিস সার্কিটে আমি থেকে গেছি। এই বয়সে যেখানে থাকা দরকার, আমি ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি।’
×