ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রজন্ম ক্ষমা করবে না

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রজন্ম ক্ষমা করবে না

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৫-এ যোগদান করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে যা বলেছেন জোরালো কণ্ঠে, তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা। এটি মানবজাতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ সর্বোপরি বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে না। মানবজাতি ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। তা হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। সেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। যা করার সে সবই করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। প্রকৃতপক্ষে এই সত্য ও সাহসী উচ্চারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের ১৮ বছর বয়সী কিশোরী গ্রেটা থুনর্বেগের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরই তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। উল্লেখ্য, গ্রেটা ২০১৮ সালের আগস্টে প্রথম এককভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতৃবৃন্দের অবহেলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও অবরোধের ডাক দেন। একই বছর ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের পর এই আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশসহ ১১২টি দেশের ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণ করে জলবায়ু কর্মসূচীর বিক্ষোভে। দুঃখজনক হলো, এর পরও বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও সম্মেলন বয়কট করেছেন। বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে অর্থ দিতেও অস্বীকার করেছেন তিনি। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবার্তা বিশ্ববাসীর প্রতি। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের কারণে বাংলাদেশের পাহাড় ও বন ধ্বংসসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কথাও জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন এই সমস্যার জরুরী সমাধানে। বাংলাদেশ অবশ্য এ বিষয়ে সজাগ ও সচেতন। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী ওয়ান প্লানেট সামিটে যোগ দিয়েছিলেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা নির্ধারণের লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী অর্থায়নে কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই সম্মেলন। ২০১৫ সালে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় বৈশ্বিক তহবিলের বর্তমান অবস্থা এবং তা বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে শেষ হয়েছিল এই সম্মেলন। তবে দুঃখজনক হলো, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত খুব কম সাড়া পাওয়া গেছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশও কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে অবলম্বন করছে ধীরগতি। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জোরপূর্বক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এতে যোগ করেছে বাড়তি ঝুঁকি। এর মাধ্যমেও ঘটেছে সমূহ পরিবেশ বিপর্যয়। ধরিত্রীকে রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক ধরিত্রী সম্মেলন। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বোধোদয়সহ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যাশিত। তা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ক্ষমা করবে না কোনদিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী বছর ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তার পক্ষে আরও ইতিবাচক অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
×