ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

পর্দায় পানিপথের যুদ্ধ...

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

পর্দায় পানিপথের যুদ্ধ...

সেলুলয়েডে ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরার ব্যাপারটি বলিউডে নতুন নয়। ঐতিহাসিক ঘটনাকে এবং ঐতিহাসিক বিখ্যাত চরিত্রগুলোকে উপজীব্য করে বলিউডে হরদম সিনেমা তৈরি হচ্ছে। শাহজাদা সেলিম এবং আনারকলির ঐতিহাসিক প্রেম কাহিনীনির্ভর সিনেমা ‘মুঘল ই আজম’ ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি মাস্টারপিস ক্ল্যাসিক মুভি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। ‘তাজমহল’, ‘গান্ধী’, ‘মাই ফাদার’, ‘রাজিয়া সুলতান’, ‘আনারকলি’, ‘নেতাজী সুভাষ বসু’, ‘লাগান’, ‘যোধা আকবর’, ‘বাঁধি কি রানী’, ‘অশোকা’, ‘দ্য লিজেন্ড অব ভগত সিং’, ‘পদ্মাবত’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’ প্রভৃতি পিরিয়ড ড্রামা ধাঁচের সিনেমাগুলো বিভিন্ন সময়ে দর্শকদের আলোড়িত করেছে। আগে ঐতিহাসিক ঘটনানির্ভর সিনেমা নির্মাণে ততটা সিরিয়াস না হলেও আজকাল এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ অনেকটাই সিরিয়াস বলিউডের চলচ্চিত্রকাররা। এখন একেকটি ঐতিহাসিক সিনেমা নির্মাণে ততটা সিরিয়াস না হলেও আজকাল এ ধরনের সিনেমা নির্মাতার পেছনে অনেক বড় অঙ্কের বাজেট রাখা হয়। নামী-দামী প্রতিষ্ঠিত ব্যানার, বিখ্যাত প্রযোজক পরিচালক এসব সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন। ফলে অনেক যতœ নিয়ে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় মনোগ্রাহী করে তোলা হয় ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ। সাম্প্রতিক গুণী ‘চিত্রনির্মাতা সঞ্জয় লীলা বানসালি পর পর কয়েকটি সুপার ডুপার হিট ঐতিহাসিক সিনেমা নির্মাণের সুবাদে এ ক্ষেত্রে আলাদা সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। বলিউডের আরও একজন খ্যাতিমান নির্মাতা আশুতোষ গোয়ারিকার ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে দারুণ সফল সিনেমা নির্মাতা চমক সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে ‘লাগান’ এবং যোধা আকবর ছবি দুটির কথা বলা যায়। দুটি সিনেমাই ব্লকবাস্টার হিট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বক্স অফিসে। আশুতোষ গোয়ারিকার ঐতিহাসিক ঘটনানির্ভর সিনেমা নির্মাণে তার মেধা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। এবার তিনি নির্মাণ করেছেন আরও একটি ঐতিহাসিক সিনেমা ‘পানিপথ’। এর আগে ‘মহেঞ্জোদারো’ ছবিটি নির্মাণ করে ভরাডুবির শিকার হয়েছিলেন গোয়ারিকার। তিনি ‘অপারেশন কুকরি’ নামে একটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘স্বদেশ’ ছবির পর এই নির্মাতার ‘অপারেশন কুকরিতে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত হয়ে যায়। এ ছবির কাজ বাদ দিয়ে তিনি ঐতিহাসিক সিনেমা ‘পানি পথ’-এর কাজে হাত দেন। পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে আফগান মারাঠা লড়াইয়ের ভেতরে গল্প উঠে এসেছে নতুন এই চলচ্চিত্রে। আশুতোষ গোয়ারিকার বলেন, ঐতিহাসিক গল্পগুলো সব সময় আমাকে মুগ্ধ করে। ‘পানি পথ’ ছবিতে পানি পথের তৃতীয় লড়াইয়ের কারণ তুলে ধরা হয়েছে এ ছবির মূল কাহিনী অনেকেরই জানা। ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তরে একটা বিস্তীর্ণ এলাকার নাম ‘পানি পথ’ যা মারাঠা সা¤্রাজ্যের অধীনে ছিল। তিন তিনটি বড় যুদ্ধ এই জায়গায় সংঘটিত হয়েছিল। নৃশংসতার দিক থেকে পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধই ছিল ভয়াবহ যার ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল মারাঠা সাম্রাজ্য ও আফগান শক্তির সঙ্গে। আফগানদের নেতৃত্বে ছিলেন আফগান সা¤্রাজ্যের তৎকালীন রাজা আহমদ শাহ আবদালি ইতিহাসে কোন যুদ্ধে এক দিনের মধ্যে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা বিরল। বলা বাহুল্য যে যুদ্ধে আফগানরা জয়ী হয়েছিল। আফগানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে পানি পথের যুদ্ধে পরাজিত হলেও বীরত্বের প্রকাশ ঘটিয়ে ছিল মারাঠিরা। আফগানরা বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে সেই যুদ্ধে জয়ী হয়। তারা কাপুরুষতার প্রমাণ দেয়। যুদ্ধের এ রকম পরিণতির কারণ বা বিশ্বাসঘাতকতা জানতে হলে দেখতে হবে। ‘পানি পথ’ ছবিটি। এ ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন কাপুর, সঞ্জয় দত্ত, কৃতি শ্যানন, জিনাত আমান, পদ্মিনী কোলাপুরে, মোহনিশ বাহেল প্রমুখ। ‘পানি পথ ছবিতে সদাশিব রাও ভাও চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন কাপুর। এ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মাথা ন্যাড়া করতে দ্বিধা করেননি অর্জুন। সঞ্জয় দত্তকে দেখা যাবে আফগান রাজ আহমদ শাহ আবদালির ভূমিকায়। দীর্ঘদিন পর রুপালি পর্দায় আবার দেখা যাবে জিনাত আমান ও পদ্মিনী কোলাপুরেকে। সব মিলিয়ে বড় আয়োজনের ছবিটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক জমে উঠেছে। সাধারণত ঐতিহাসিক ঘটনানির্ভর সিনেমাগুলোকে কেন্দ্র করে এমন বিতর্ক সমালোচনা-আলোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়। যা প্রকারান্তরে ছবিটির প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করে। ‘পানি পথ’ ছবিটিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। আফগানদের দাবি ‘পানি পথ’ ছবিতে আফগানদের নির্মম, বিশ্বাসঘাতক এবং মিথ্যাবাদী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এটা তাদের জাতীয় মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। ‘পানি পথ’ ছবিতে পার্বতী বাঈরূপে দেখা যাবে এই সময়ের সুন্দরী গ্ল্যামারাস আবেদনময় ইমেজের তন্বী অভিনেত্রী কৃতি শ্যাননকে। পর্দার বাইরের কৃতির সঙ্গে পার্বতী বাঈয়ের কতটা মিল এমন প্রশ্ন করা হলে কৃতি বলেন আমি পার্বতী বাঈয়ের মতো মানসিকভাবে শক্ত একজন মেয়ে। তবে তার মনের জোর আমার চেয়েও অনেক শক্তিশালী। পার্বতী বাঈ সেই সময়ের নারী হয়েও প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রে অনেক সাহসী ছিলেন। এ ব্যাপারে অবশ্য আমি অনেক পিছিয়ে, আমি নিজের ভালবাসার কথা তার মতো করে বলতে পারব না।
×