ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বিগ্ন হংকংবাসী ॥ ৬ মাসে ১০ হাজার রাউন্ড গ্যাস নিক্ষেপ

টিয়ারগ্যাসে বসবাস

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

টিয়ারগ্যাসে বসবাস

হংকংয়ের সাধারণ মানুষকে এখন টিয়ারগ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব সইতে হচ্ছে। ৪২৮ বর্র্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলটিতে ৬ মাস ধরে চলছে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন। এশীয় অর্থনীতির অন্যতম এই প্রাণকেন্দ্র বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ছোট্ট আয়তনের হংকংয়ে প্রায় ৭৪ লাখ লোকের বাস। সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে হংকংয়ের বিক্ষোভ দমাতে চীনপন্থী প্রশাসন ১০ হাজার রাউন্ডের বেশি টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। হংকংয়ে অতিরিক্ত মাত্রার টিয়ারগ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, সাবওয়ে স্টেশন, হোটেল ও মার্কেট সব জায়গাতেই শক্তিশালী টিয়ারগ্যাস ছোড়া হচ্ছে। টিয়ারগ্যাস মূলত সিএস গ্যাস নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের গুঁড়ো। তাপ পেলে এই গুঁড়ো সক্রিয় হয়। এই গ্যাসের প্রভাবে চোখ ও নাক দিয়ে ঝড়ঝড় করে পানি পড়ে। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, শরীর জ্বালাপোড়া করে, বমি ও প্রচ- মাথাব্যথা হয়। অব্যাহতভাবে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে হংকংবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মা তার শিশু বাচ্চা নিয়ে বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক বাবা-মা প্রয়োজনে বাচ্চা নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলেও দ্রুত বাসায় ফিরছেন। শিশুরা দিনের পর দিন ঘরে বন্দী থাকায় তাদের মধ্যে একপ্রকার হতাশা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হংকং পুলিশ এই ধোঁয়া বোমা ছুড়ছে। এতে থাকা ডাইঅক্সিন নামক এক ধরনের পদার্থ শিশুর শরীরে ১১ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সেস বলেছে, টিয়ারগ্যাসের প্রভাবে শিশুর উচ্চতা কমে যাওয়া ও বয়স্ক নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসাসহ শরীরের হরমোন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, হংকং বিক্ষোভের শুরুতে চীন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে তৈরি টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করত। এখন নিজেদের তৈরি টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করছে বেজিং। এসব টিয়ারগ্যাসে অত্যধিক মাত্রায় ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে হংকংয়ের জণগণ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ব্রিটেনের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এরিক জর্ড বলেন, অব্যাহত টিয়ারগ্যাস জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। হংকংয়ের চায়নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড হুই বলেন, টিয়ারগ্যাস ছোড়ার আগে সঠিক তাপ পেলে এখান থেকে ডাইঅক্সিন তৈরি হয় না। এ কারণে ডেভিড হুই চীনে তৈরি টিয়ারগ্যাসে ঠিক কি ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে-তা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। হংকংয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোফিয়া চ্যাং ডেভিড হুইয়ের এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। টিয়ারগ্যাসে ক্ষতিকর পদার্থের খবর উড়িয়ে দিয়ে হংকং পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভের সময় বরঞ্চ বিক্ষোভকারীরাই পরিবেশ দূষণ করছে। তারা ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দিলে চারদিকে ক্ষতিকর ধোঁয়া ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে।
×