ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ব্যয় প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ব্যয় প্রকল্প

যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ পুনর্গঠনে যে অর্থ ব্যয় করেছে তার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে আফগানিস্তানে। এ প্রচেষ্টা এক মিশ্র রেকর্ডের সৃষ্টি করেছে যা ভবিষ্যত রাষ্ট্র গঠন উদ্যোগে রূপ নেবে। ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর। ২০০৩ সালের শেষের দিকে এক রোদ ছড়ানো শীতের ভোরে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বেগুনি-লাল ভেলভেট কিংখাব পোশাক পরিহিত ও মাথায় লাল কমলা রঙের স্কার্ফ জড়ানো এক স্কুল শিক্ষার্থী মেয়ের ধরে রাখা ট্রে থেকে একজোড়া কাঁটি তুলে নেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কাবুল-কান্দাহার মহাসড়কের সংস্কার কাজ উদ্বোধনের জন্য রেশমি ফিতা কাটেন। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আফগানিস্তানে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ। শীতের বরফ পড়া শুরু হওয়ার আগে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি এ্যাসফল্টের প্রথম লেয়ারে আবৃত করার জন্য প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তাকে যে ফোন করেছেন একদিন পর তিনি তা উল্লেখ করেন তার বক্তব্যে। স্থানীয় আফগানরা আজও গুরুত্বপূর্ণ ৩শ’ মাইল দীর্ঘ মহাসড়কটিকে ‘মি. বুশ প্রজেক্ট’ বলে অভিহিত করে থাকে। কয়েক দশকের যুদ্ধের পর এবং ৯/১১-এর হামলা পরবর্তীতে ২০০১-এর নবেম্বরে চরম রক্ষণশীল তালেবান ও আল-কায়েদাকে উচ্ছেদে মার্কিন সৈন্যদের সহযোগিতা শুরুর পর আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য আমেরিকার প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে রয়েছে মহাসড়কটি। বুশ ২০০২ সালে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আমেরিকা সে ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে না। উপরন্তু তারা অশুভ কিছু থেকে মুক্ত একটি দেশ গঠন করবে এবং এ দেশটি হবে এক বাসযোগ্য স্থান। মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তানে প্রথম পৌঁছার ১৮ বছর পরও আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘতম যুদ্ধে জড়িত রয়েছে এবং রক্তপাত ও আর্থিক ক্ষতি শীর্ষে উঠেছে। ২০০১ সাল থেকে ২ হাজার ৪শ’র বেশি মার্কিন সামরিক সদস্য জাতিসংঘের হিসাবে নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথম ৯ মাসে বেসামরিক আফগান নিহত হয়েছে ২ হাজার ৫শ’ ৬৩ জন। তালেবান বিদ্রোহীরা বর্তমানে আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে বা তাদের প্রভাবাধীন রেখেছে। তারপরও দেশটির পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বর্তমানে ১শ’ ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। কিন্তু যুদ্ধে ব্যয় হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি, অন্তত ৬ গুণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৬টি ইউরোপীয় দেশ পুনর্গঠনে পুরো মার্শাল প্ল্যানে ব্যয় হয়েছে আজকের ডলার মানে প্রায় ১শ’ বিলিয়ন ডলার। প্রচুর অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও আফগানিস্তানের রাস্তাগুলো সোনায় মোড়ানো নয়। সত্যিকারভাবে পাশ্চাত্য ইউরোপের রাস্তাগুলোর মতো মোটেই নয়। দারিদ্র্য এখানে নিয়মিত, দুর্নীতি দীর্ঘদিনের এবং পুনর্গঠনে অর্থের অনেকটাই হিসাবের বাইরে থাকে। অর্থ ব্যয় হয় অব্যবস্থাপনা বা অবিশ্বাস্য প্রকল্পে।
×