ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেই সরকারী নির্দেশনা

পর্যটকের বেপরোয়া বিচরণে শ্রীহীন চরবিজয়

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

পর্যটকের বেপরোয়া বিচরণে শ্রীহীন চরবিজয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, ৫ ডিসেম্বর ॥ লাখ লাখ লাল কাঁকড়ার বিচরণের মনকাড়া দৃশ্য ও পাখিদের অভয়ারণ্যখ্যাত সদ্য জেগে ওঠা চন্দ্রাকৃতির চর বিজয়ে পর্যটকের বেপরোয়া বিচরণে মাত্র দুই বছরেই শ্রীহীন হয়ে যাচ্ছে। কমে গেছে লাল কাঁকড়া অর্ধেকেরও বেশি। পাখিরাও স্বস্তিতে বিচরণ করতে পারছে না চরটিতে। প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্যের পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য রক্ষায় এ চরটিতে পর্যটকের ভ্রমণে সরকারী কোন নির্দেশনা নেই। নেই কোন বিধি-নিষেধ। ফলে অঙ্কুরেই প্রকৃতির আরেক সৌন্দর্য চর বিজয়ের নৈসর্গিক দৃশ্য হারাতে বসেছে দক্ষিণের মানুষ। পর্যটকরা চরটিতে গিয়ে সৃষ্টি করছে এক ধরনের উন্মাদনার। ধাওয়া করছে কাঁকড়া ধরার জন্য। ফলে কাঁকড়া মারা পড়ছে। আর পাখিরা নির্বিঘেœ বিচরণ কিংবা অবস্থান করতে না পারায় চর বিজয়ের অপূর্ব দৃশ্য হুমকির মুখে। ২০১৭ সালে থেকে জেগে ওঠা কুয়াকাটা থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে সাগর অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্ন এ চরটির আবিষ্কার করেন জেলেরা। তারা কেউ কেউ হাইরের চর বলে জানতেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিজয়ের মাসে এ চরটিতে গিয়ে নামকরণ করেন চর বিজয়। স্থানীয়দের দাবি এ নামকরণ তারা করেছেন। এরপর থেকে চরটিতে কুয়াকাটার ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণে নিয়ে যেতে শুরু করেন। এ কারণে লাল কাঁকড়ায় পরিপূর্ণ চরটির কাঁকড়া এখন আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। মারা পড়ছে কিংবা পর্যটকের ধাওয়ায় হারিয়ে গেছে। পাখিরাও নিরাপদ মনে করছে না এখানে। হাজার হাজার পাখি তাদের নিজের মতো করে চরটিতে বিচরণ করত। দূর থেকে না দেখে কাছে গিয়ে দেখা, ছবি তোলার চেষ্টার কারণে বিরক্ত কিংবা ভয়ে পাখির বিচরণও কমে গেছে অর্ধেক। আর লাল কাঁকড়ার মিছিলও কমে গেছে। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে এসব জীববৈচিত্র্য উপভোগ করার বিধি নিষেধ না থাকায় এমনটি হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতামত পাখি কিংবা কাঁকড়া তাদের মতো স্বাধীনভাবে বিচরণ করবে। তাদের বিরক্ত করা ঠিক নয়। তাদের মতো করে থাকতে দিতে হবে। এছাড়া কিছু কিছু ট্যুরিস্ট নিয়ে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী ওই বিচ্ছিন্ন চরে রাত্রিযাপনে উৎসাহ যোগাচ্ছে। যেখানে যদি অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনার শিকার হয় তার দায় সরকারকে নিতে হবে। ফ্রি-স্টাইলে পর্যটক-দর্শনার্থীকে নিয়ে রাখা খুবই বিপজ্জনক। সরকার পরিকল্পিতভাবে ট্যুরিস্ট ভ্রমণের উপযোগী হিসেবে ঘোষণার আগেই বেসরকারী ব্যক্তি উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা পর্যটককে সেখানে নিয়ে বিপদের সম্মুখীন করলে এর দায় কে নেবে; এটি এখন শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সাগরের অথৈ জলরাশি। তারই মাঝখানে নয়ন ভোলানো এই বিশাল চর। চারদিকেই সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে অনবরত। চরটি চন্দ্রাকৃতির। পশ্চিম দিকটায় হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত থাকত। আর গোটা চরটিতে ছিল লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ির এক স্মৃতিময় মনকাড়া সুন্দরের দৃশ্য। আবার মানুষের পদচারণায় মুহূর্তেই কাঁকড়াদের গর্তে লুকানো। যেন না দেখলে বোঝানো যায় না। আনুমানিক দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এবং তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ চরটি। প্রায় ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তন। রয়েছে সংযুক্ত ডুবোচর। পর্যটকের পদচারণা রয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এখন আর নেই ওই মনোলোভা দৃশ্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রণিবিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মনির জানান, এচরটিতে পাখি, লাল কাঁকড়াসহ পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় পরিবেশবাদীদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ইকোট্যুরিজমের আওতায় এটির সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, এ চরটিতে পর্যটকদের অতি সাবধানে বিচরণ করতে হবে। কারণ পরিবেশ-প্রতিবেশ অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়ার বিচরণ কোন কিছুর ক্ষতি করা যাবে না। রাতে কেউ যাতে ওখানে অবস্থান করতে না পারে এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে জেলেদের শঙ্কা ওই চরটি দিনের বেলা ছাড়া ভ্রমণ করা ঠিক না। কারণ নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। চরটির আশপাশে জলদস্যুরা রাতে কিংবা যে কোন সময় বহুবার জেলে ট্রলারে হামলা লুটপাট চালিয়েছে। এ কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করে পর্যটকের বিচরণ করার অনুমতি দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ চরটি ঘিরে কুয়াকাটা-গঙ্গামতির মতো সম্ভাবনা গড়ে উঠছে। আর বেড়েছে সমুদ্রের মধ্যে বাংলাদেশের চর এলাকা।
×