ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কীর্তনখোলায় শঙ্কা বাড়াচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

কীর্তনখোলায় শঙ্কা বাড়াচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর মধ্যে স্রোতবহা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত কীর্তনখোলা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এ নদীটির ওপর নির্ভর করে মৎস্যজীবীরা যেমন জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনি এই নদী ব্যবহার করেই পণ্য ও যাত্রীবাহীসহ সব ধরনের নৌযান দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা-চাঁদপুরসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। কীর্তনখোলা অন্য সব নদীর মতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মে গতিপথ পরিবর্তন করছে এখন। ফলে নদীর পাড় ভাঙ্গা-গড়ার খেলা অব্যাহত রয়েছে। তবে সস্প্রতি কীর্তনখোলায় শঙ্কা বাড়াচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বর্জ্য। নদীর পানি দূষিত হওয়াসহ গতিধারায় প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা থেকে পরিত্রাণ পেতে এখনই সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। জানা গেছে, মোট ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কীর্তনখোলা নদীর বৃহৎ একটি অংশ বরিশাল শহর ঘেঁষে রয়েছে। শহরের গোটা ড্রেনেজ ব্যবস্থার বর্জ্যযুক্ত পানি নগরের বিভিন্ন খাল হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে যাচ্ছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম নদীবন্দর বরিশালে অবস্থিত। যে নদীবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাও সরাসরি নদীতে হওয়ায় দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলার পানি। বরিশাল নদীবন্দর এলাকা ঘিরে বিপুল সংখ্যক মানুষের আনোগোনা ও ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পল্টুন সংলগ্ন এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন সামগ্রী লঞ্চে কিংবা পল্টুনে বসেই সরাসরি নদীতে ফেলছে। এমনকি লঞ্চগুলোকে পরিষ্কারের নামে এর স্টাফরাও সরাসরি নদীতে ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে ফেলছে। ফলে সেসব ময়লা আবর্জনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এবং নদীবন্দর সংলগ্ন এলাকায় আলাদা একটি স্তর তৈরি করছে। সস্প্রতি সময়ে বরিশাল নদীবন্দর সংলগ্ন এলাকায় নাব্য ফিরিয়ে আনতে চলমান ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে খনন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তবে এর থেকেও অদূর ভবিষ্যতে প্রাণিকুলসহ বড় সমস্যায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে কীর্তনখোলা। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা খনন কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। বরিশাল নদীবন্দর এলাকাতে সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট এক নাগারে ড্রেজিং করেছি। কিন্তু সস্প্রতি নদীবন্দরে অহেতুক লঞ্চগুলোকে নোঙ্গর করে রাখা এবং ড্রেজিং মেশিনের কাটারের সঙ্গে বার বার পলিথিনসহ প্লাস্টিক সামগ্রী আটকে যাওয়ায় ৫-৬ ঘণ্টার বেশি খনন কাজ চালানো সম্ভব হয়না। তিনি আরও বলেন, নদীবন্দরের পল্টুন সংলগ্ন এলাকায় খনন করতে গিয়ে বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে যে প্রতি আধঘণ্টা পরপর কাটার ব্লেড পরিষ্কার করতে হয় এবং একবার পরিষ্কার করতে ২০-২৫ মিনিট সময় লেগে যায়। ফলে খনন কাজে ধীরগতি চলে এসেছে। তাই যে কাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হতো, তা শেষ করতে এখন অনেক বেশি সময় লাগছে। তিনি বলেন, পলিথিনের পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা ড্রেজিং মেশিনের কাটার ব্লেড পরিষ্কার করে যে পলিথিন পাই, তাতে কোন কোন দিন ৩-৪ বার ট্রলার ভর্তি হয়ে যায়। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, নদীতে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য লঞ্চ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করেছি।
×