ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর মুক্তদিবস আজ

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

যশোর মুক্তদিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ আজ ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক যশোর মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই যশোর জেলা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। এদিন বিকেলে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্যখচিত গাঢ় সবুজ পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম জানান, ৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পর্যদস্তু পাক বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে। যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। পলায়নকালে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচ- লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় পাক হানাদাররা। বিকেলে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খ- খ- আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ। এর আগে ৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে শহরের রাজপথে বের হয় জঙ্গী মিছিল। যশোরবাসী শপথ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের। এই মিছিলে হানাদার বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই যশোরের প্রথম শহীদ। এরপর থেকেই যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মশিয়ূর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ফেনী নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, ৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয় ফেনী। সেদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনীরা দিশেহারা হয়ে একগ্রুপ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি দিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে আরেকগ্রুপ বতর্মান পুরাতন চট্টগ্রাম রোডের শুভপুর ব্রিজ দিয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। হানাদার বাহিনী ফেনী দখল করে টানা ৮ মাস ফেনীকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করে। এসব হত্যাযজ্ঞের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় একাধিক বধ্যভূমি। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কালের স্বাক্ষী ৫টি বদ্যভূমিকে স্থানীয় বাসিন্দারা চিহ্নিত করলেও অনেকগুলো রয়েছে অরক্ষিত। আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন ফেনীবাসী। বাংলাদেশের লাইফ লাইন যা ঢাকা ও চট্টগ্রামের নাভি হিসেবে পরিচিত ফেনী ভৌগোলিক দিক দিয়ে গুরুত্ব অপরিসীম। সে হিসেবে ৬ ডিসেম্বর ফেনী হানাদার মুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তৎকালীন সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ১০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ফেনীতে হানাদার বাহিণীর ঘাঁটির ওপর হামলা চালাতে থাকে। মেহেরপুর সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, আজ ৬ ডিসেম্বর, মেহেরপুর মুক্ত দিবস। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে দাঁড়াতে না পেরে ৫ ডিসেম্বর রাতারাতি হানাদার বাহিনী মেহেরপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। আনন্দ আর উল্লাস করতে করতে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এই দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে স্বাধীনতার সুতিকাগার মুজিবনগর তথা মেহেরপুরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তৎকালীন এসডিও তৌফিক এলাহির সক্রিয় ভূমিকায় আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। ভারতের শিকারপুরে প্রশিক্ষণ শেষে এ বাহিনী মেহেরপুর প্রবেশ করে। একই দিনে মেহেরপুর মুক্ত করার জন্য চারদিক থেকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পাক বাহিনী আগেই এ খবর জানতে পেরে ৫ ডিসেম্বর রাতে মেহেরপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। লালমনিরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট থেকে জানান, ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট, মুক্ত দিবস। মুক্ত দিবস উপলক্ষে সরকারী, বেসরকারী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়। এই দিন ভারতীয় মিত্র বাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট জেলা শহর (তৎকালীন মহকুমা শহর) চারদিক দিয়ে অবরোধ করে ফেলে। নিরুপায় হয়ে পাকিস্তানী সেনারা লালমনিরহাট রেল স্টেশনে জমায়েত হয়। একটি বিশেষ ট্রেনে পাকিস্তানী সেনা ও বিহারীদের নিয়ে সন্ধ্যায় পালিয়ে যায়। লালমনিরহাট শহরে পাহারায় রেখে যায় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীকে। বিশেষ ট্রেনটি তিস্তা রেলওয়ে সেতুতে পৌঁছলে বিশেষ ট্রেনটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়।
×