ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

নাম তার তোজেংমা

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

নাম তার তোজেংমা

নাম তার তোজেংমা। আর দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের পাগলারা -প্রকৃতির টানেই ঘর ছাড়তে পছন্দ করে। ঢাকা থেকে রাতের বাসে ছুটি রূপনগরী খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা। ভোর সাড়ে চারটায় পৌঁছাই। গেস্ট হাউসের রুমে গিয়ে গাইডের অপেক্ষায় কিছুটা সময় চিৎ কাত হয়ে শুয়ে নেই বিশ্রাম। অতঃপর সকাল ৯টায় রুম থেকে বের হয়ে নাশতা শেষে বাইকে ছুটি আলমগীর টিলা। মাত্র বিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছাই। এবার ভরসা দু’পা। সকাল ১০টায় হাটা শুরু। উঁচু-নিচু টিলা-পাহাড়-ঝিরি-ঝোপঝাড়, জঙ্গল দিয়ে শুধু হাঁটছি। গাইড নিজেও ঠিকমতো চিনে না। শুধু লোকেশন নির্ভর করে এমন নিঝুম-বুনো পাহাড়ী জংলি পথে হাইকিং, ট্র্যাকিং সত্যিই অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। নৈঃশব্দের বুনো পরিবেশে একটা সময় পথ হারিয়ে ফেলি। ভুল পথে উঠে যাই উঁচু এক পাহাড়ে। কি আর করা নামতে হবে আবারও তবে বাড়তি পাওনা চূড়া থেকে দেখা চার পাশের অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। মনের আনন্দে দুপুর অব্দি হেঁটেই চলছি- যেথায় হারিয়েছিলাম পথ সেথায় এসে এবার ঝিরি পথ ধরি। দুপাশে গভীর জঙ্গল, সূর্যের রশ্মিও হার মেনেছে। সেই রকম পথেই এগিয়ে যাই। ঝিরির বয়ে যাওয়া পানির তীব্রতাই বলে দেয় আর বেশি দূরে নয় লুকিয়ে থাকা বুনো সৌন্দর্য তোজেংমা ঝর্ণা। ঠিক ঠিকই আধা ঘণ্টার মধ্যেই রিমঝিম ছন্দ তোলা পানির শব্দ ভেসে আসে কানে। পানির উৎস ধরে এগুতেই সামনে পড়ে ইয়া উঁচু এক পাহাড়। প্রকৃতির আপন খেয়ালেই পাহাড়টি দুই ভাগ হয়ে সেই কল্পকাহিনীর আলী বাবার চিচিং ফাঁক দুর্গের রুপ ধারণ করে আছে। এসবই প্রকৃতির লীলা-খেলা। পিচ্ছিল পাথর টপকিয়ে সুড়ঙ্গর ভিতরে ঢুকতেই চোখ উঠে কপালে। আরে এ যে সত্যি সত্যি বাস্তবের ধন-দৌলতের দুর্গ। ভাগ হয়ে যাওয়া দুই পাহাড়ের দুই পাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম পানির ধারা। আহ্ কি শান্তি। নির্জনতায় জঙ্গলী পরিবেশে গুহা আকৃতির দুই পাহাড়ের ওপর থেকে দুটো ঝর্নার সফেদ সাদা পানি তীব্র গতিতে ছুটে এসে, আলিঙ্গন করে একই বিন্দুতে। পানির ক্ষিপ্ততায় সৃষ্টি হওয়া প্রাকৃতিক বাথ টাবে সাঁতার কাটা যাবে অনায়াসে। ঝর্না দুটোর উচ্চতা খুব বেশি উঁচু নয় তবে তোজেংমার রয়েছে ভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য আর উদ্ভূত আকৃতির নজর কাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঝর্ণার আছড়ে পড়া পানির তীব্রতাও বেশ। আশে পাশে নেই কোন বসতি তাই তোজেংমা নামের আভিধানিক অর্থ কি তা এবারের জন্য আড়ালেই রয়ে গেল। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম প্রকৃতির মোলাটে সাজানো রূপবতী-গুণবতী-লজ্জাবতী পাহাড়ের কোলে নিজেকে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব ভাল লাগার তোজেংমার শুভ্র পানিতে প্রায় ঘণ্টা খানেক ভিজে ফেরার পথ ধরি। গুহা মুখে এসে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠি বিদায় তোজেংমা বিদায়। কি ভাবে যাবেন : ঢাকার গাবতলী-ফকিরাপুল-সায়েদাবাদ হতে দিনে রাতে প্রতিদিন খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা বিভিন্ন পরিবহনের এসি/নন এসি বাস ছেড়ে যায়। দীঘিনালা বাজার হতে মোটরবাইকে আলমগীর টিলা। কোথায় থাকবেন : দীঘিনালা বাজারে বিভিন্ন গেস্ট হাউস রয়েছে। ভাড়া সাধ্যের মধ্যেই। খাবেন কোথায় : গেস্ট হাউসগুলোর পাশেই বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে। খরচাপাতি : খরচ জনপ্রতি এক রাত দুই দিনের জন্য ২৫০০/= টাকা হলেই যথেষ্ট। অবশ্য খরচটা নির্ভর করে অনেকটা নিজেদের সামর্থের ওপর। গাইড : আরমগীর টিলা হতে স্থানীয়দের সাহায্য নিন। সারা দিনের জন্য এক হাজার টাকা দিলেই হবে। টপস্ঃ- তোজেংমা ঝর্ণা এখনো লোক চক্ষুর অন্তরালে সুতরাং টিমে অন্তত ছয়/সাতজন হলে ভাল হবে # এর অবস্থান দুর্গমে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, স্যালাইন, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিন # সঙ্গে চটের ব্যাগ রাখুন সেখানেই বর্জ্য ফেলুন # মনে রাখবেন তোজেংমার পথ এখনও বুনো আর জংলী সুতরাং আপনার অতি উচ্ছ্বাস যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়।
×