ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুর্শিদ রাজীব

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা!

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা!

শরতের বিদায় ঘণ্টা বাজতেই শীতের আমেজ নিয়ে চলে আসে সোনালি ঋতু হেমন্ত। পেঁজা তুলোর মতন মেঘের সারি নিয়ে শরত পাড়ি জমায় ফের কোন্ এক সবুজের দেশে। আর বাংলার মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ হতে থাকে ঘন নীল, আরও নীল। ঠিক সেই সময়ে কোন এক শিশির ভেজা সকালে উত্তরের ঘন নীল আকাশ দখল করে নেয় হিমালয়ের বরফি রাজপুত্তুর, শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। বলছি হিমালয়কন্যা পঞ্চগড় জেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের কথা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! সর্বোত্তরের এই জেলা থেকে হিমালয়ের পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ উপভোগ করা যায়। এমনকি দার্জিলিংয়ের সবুজে ঘেরা পাহাড় শ্রেণীরও স্পষ্ট দেখা মেলে এখান থেকে। রাত হলে পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা শহরের আলোও ঠিকরে আসে। জোছনা রাতে যখন চারদিক উদ্ভাসিত হয়, তখন শাদা বরফ থেকে চাঁদের মৃদু আলো প্রতিফলিত হয়ে ছুঁয়ে যায় দর্শনার্থীর হৃদয়। প্রথমবার কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখা যেন অনেকটা জীবনে প্রথম প্রেমে পড়ার মতো, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি! এমনটাই বললেন পঞ্চগড় থেকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী কাজী মনিকা। তিনি বলেন, ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে দর্শকের চোখ জুড়িয়ে রাখে বহুরূপী কাঞ্চনজঙ্ঘা। ঊষালগ্নে মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার শাদা বরফ কাঁচা সোনায় ছেয়ে গেছে। বেলা বাড়লে কাঁচা সোনা শরতের মেঘের বসন নেয়। দিনের মধ্যভাগে মনে হয় যেন এক খ- প্রকা- মেঘ উত্তরের আকাশটা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিনে কোন নড়চড় নেই। বিকেলে যেন বরফ লজ্জায় রাঙ্গা হতে শুরু করে। আর গোধূলি বেলায় পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা আবীরখেলায় মেতে ওঠে চপল কিশোরীর মতো। সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও চোখ ক্লান্ত হয় না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাগর রহমান বলেন, শুনেছি জোছনা রাতে কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র বরফে চাঁদের রুপালি আলোর প্রতিফলিত স্বর্গীয় শোভা দেখে সৌন্দর্য পিপাসীরা ‘হিমু’ বনে যান! একদিন এক জোছনা রাতে দেখতে যাব সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। স্থানীয়রা জানান, বছরে গোটা নবেম্বর মাসে হিমালয়ের পাদদেশের এই জেলা থেকে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। আকাশের মেজাজ-মর্জি ভাল থাকলে অক্টোবরের শুরু থেকে ডিসেম্বরের প্রথম হপ্তা অবধিও দেখা যায় লাজুক কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। চলতি বছরে গত ৩০ অক্টোবর থেকে নিয়মিত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীরা। গোটা জেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও, সবচেয়ে ভাল দৃশ্যপট পাওয়া যায় সর্বস্তরের উপজেলায় তেঁতুলিয়া থেকে। পঞ্চগড় জেলা কেবল কাঞ্চনজঙ্ঘার জন্যই বিখ্যাত নয়, স্বল্পখ্যাত এই জেলায় দেখবার আরও অনেক কিছুই আছে। পুরো জেলার মাইল কে মাইল জুড়ে রয়েছে সমতল ভূমির চা বাগান। এ ছাড়াও রয়েছে দেশের একমাত্র রক্স মিউজিয়াম, ভিতরগড় দূর্গনগরী, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, মহানন্দা পারের ডাকবাংলো, কাজলা দিদির ‘কাজলদিঘী’, বার আউলিয়ার মাজার, শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী মন্দির, জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি ইত্যাদি। এখানে দেখা মেলে এশিয়ার মহাবিপন্ন পাখি শেখ ফরিদ বা কালো তিতিরের। কাঞ্চনজঙ্ঘার টানে প্রতিবছর এই জেলায় ছুটে আসেন অসংখ্য পর্যটক। ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের পর্যটন রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠছে পঞ্চগড় জেলা। এতে পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও অর্জিত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা, যাতায়াত ও থাকার সুব্যবস্থার ফলে এখন আগের চেয়ে পর্যটক অনেক বেড়েছে। ফলে এখানকার মানুষদের জীবিকায় পর্যটন খাতটি ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও স্থলবন্দরটি চালু হবার পর থেকে এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করেছে। তিনি জানান, দেশের যে কান প্রান্ত থেকে খুব সহজেই ট্রেন ও বাসযোগে পঞ্চগড়ে আসা যায়। থাকা ও খাওয়ার জন্য পঞ্চগড়ে সস্তায় অনেক হোটেল রয়েছে। তেঁতুলিয়া শহরেই সরকারী ডাকবাংলো, ‘কাজী ব্রাদার্স’সহ বেশ কিছু ভাল মানের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। সীমিত অর্থে দুই দিনেই গোটা জেলা ঘুরে দেখা সম্ভব।
×