ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

কবিতা

তোমাকে ভালোবাসি নাসরীন নঈম ভাষা হার মেনে যায় শোনো পিতা তোমাকে কী করে জানাই আমরা আজও তোমাকে চাই। তুমি কি বুঝতে পার সেই না বলা কথার আড়াল দুঃখের কুসুম থেকে পরাগের দেনা চামড়ার স্যুটকেসে তুলে রেখে তালা খুঁজে পাই নাই। সমস্ত শরীর বেয়ে উথলে ওঠে পিঙ্গল অগ্নিপাঠ খাক্ হয়ে যাওয়া জীবন তোমাকে খোঁজে অযথাই। অন্য জন্মের এক রেলগাড়ি অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য ¯œায়ু ও সঙ্কেতের খেলা অপূর্ব রোশনাই। নীলাভ অভ্রের মতো জ্বলে ওঠে লোহিত সাগর আমরা বাঙালী সব ছুটে যাই তোমাকে ছোঁয়ার আশায়। আদম সুমারি অনুযায়ী যত গুলো মানুষ এ সমাজে উকিল, অন্ধ, প্রতিবন্ধি, গ্রাজুয়েট, ডাক্তার আমি ছাড়া দ্বিতীয় প্রেমিক নাই তোমাকে ভালোবাসার। ** একটা কবিতা ফারুক আফিনদী একটা কবিতাকে পানি ভরা কাঁসার গামলায় তুলে উদামÑ বারান্দায়Ñ দাঁড়িয়ে দেখছি, জোছনার সুললিত ঝরনার নিচেÑ মৃত হয়ে পড়ে আছে, úলকহীন চোখে আঙুলের তলে কেটে ছেনে ছড়িয়ে দিই নানা ভঙ্গি ও রঙের বিচিত্র কলা ট্যানারির চামড়ার মতো ঝুলে থাকে হৃদয়ের...। এবং হৃদয়ের রোদের ভেতরে বের হয়ে আসে হাড়ের দ্যোতিÑ সাদা বক পাখিÑ হয়ে চলে যায় রাতের আকাশে এর পরÑ চাঁদ এসে দেখিয়ে দেয়Ñ এই খানেÑ এ একটা বুকÑ উদাম শর্ষে ক্ষেতের মতো ভরা আগুনÑ একটা কবিতাÑ। একটা কবিতাÑ থাকে নিঃসঙ্গ বারান্দায়Ñ জোছনায়Ñ চাঁদেÑ ** ছায়াগাছ ফারুখ সিদ্ধার্থ সুগার কম লিকার বেশি এক কাপ চা-র অর্ডার দিতেই টি-স্টল সংলগ্ন এক ছায়াগাছ মাথার ওপর মেলে ধরে হাজার পাতার ঘনিষ্ঠতায় একটি প্রগাঢ় স্বস্তির ছাতা! ফুল তার নবজাতকের বদ্ধমুষ্ঠি, তেমনই রঙিন, সুগন্ধী ঝুর ঝুর পাতাগুলো হলদে প্রজাপতি; অঘ্রাণ-বাতাসে তার উড়ে-উড়ে আমাকেই ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিয়ে যায় সুখের শয্যায়! তাদের নিবিড় বন্ধনেÑ মায়াময় ইন্দ্রজালে ধরা পড়ে আমিও কখন ঘুমিয়ে যাইÑ পাতা হয়ে হারিয়ে যাই পাতার রাজ্যে; প্রতিটি পাতায়Ñ শিরায়-উপশিরায় পড়ি নিজেরই নাম! বিরাট ওয়াজ মাহফিল... এনার্জি বাল্বের বিজ্ঞাপন, আর হাইড্রোলিক হর্নে ফিরে দেখি: ঠা-া হয়ে আছে সবটুকু চা। ** সুরের সাম্পান (সদ্য প্রয়াত ওস্তাদ মোবারক হোসেন খাঁ স্মরণে) আমির হোসেন তপোবনে শ্যামের বাঁশির সুরেই বেজে উঠেছিল তোমার সুরবাহার প্রভাতের সূর্যালোকে তিতাসের বিভায় ফুটিয়েছো শত নক্ষত্রের ফুল ইন্দ্রজাল সৃষ্টিতে তুমিও ধ্যানের মনু বেহালা-চন্দ্রসারং-মন্দ্রনাদ যন্ত্রগুলি বেজে উঠেছিল তোমারই মন্ত্রবলে আলাউদ্দিন খাঁ’র সুর-তরঙ্গ নদীতে সঙ্গীতের চালান নিয়ে তুমিও ভাসিয়ে গেছো সুরের সাম্পান। ** ভাবনা বনাম বিবেচ্য সাহিনা মিতা পক্ষান্তরে যে মিত্রের সাথে সঙ্গমের ভাবনায় বিভোর হই আলো ফুটলে তাকিয়ে দেখি সে ভাবনার গায়ে অসংখ্য কালো তিল, আর দিনের আকাশে তখনও দিপ্যমান জ্বলজ্বলে শুকতারা। নিষিদ্ধ গান্ধারেও থাকে সুন্দরে টেনেআনার এক অলৌকিক সক্ষমতা, তাৎক্ষণিক প্রয়োগসমূহ পরিণতির তলানিঅব্দি যাওয়ার সুযোগ পায় না! ক্ষুধার্থ বাঘের মতো আপন সাবক ভক্ষণের পূর্বেও সতর্ক করে না ‘বোধ’! শেষঅবধি ঘণ্টা বাজলে সর্বস্ব মিলিয়ে যায় পশ্চিমাকাশে। খালি চোখে দৈনন্দিন হাটবাজার আর সমূহ কার্যতালিকা বড় বেশি সনাতন, কেবল হলুদ আর নির্জনতার দিকে ধাবমান। এ কেমন বৈপরিত্য তালের সাথে সুর ও শব্দের, বিধি ও বয়ানের!! ** জাতিস্মর হাসান ইকবাল মেয়াদোত্তীর্ণ অষুধের মতোই কোনো একদিন হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে আমার সমস্ত গুণাগুণ, অকেজো হয়ে যাবো এই আমি; হয়তো তৃষ্ণার ত্রিবেণী শুকিয়ে যাবে পরিশুদ্ধ পানপাত্রে রাতের জলতেষ্টায় জ্বলে উঠবে প্রজ্বলিত পরাগ। সময়ের সরণিতে তবু বেঁচে থাকার অনিমেষ আবেদন ল্যাম্পপোস্টের লাল আলোয় এবার তবে উন্মোচিত হোক জাতিসত্তার পূর্ণ পরিচয়, পূর্ব পুরুষের পিদিম; প্রস্ফুটিত হোক পূর্ণতার পুঁথি, সোঁদা মাটির স্বত্ব নীলকান্তমণির স্পর্শেই দূর হোক বেদনা ও বৈষম্য।
×