ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমতলে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সমতলে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেগুনবাগিচার এক খ- সমতল ভূমি পরিণত হয়েছে পাহাড়ী উপত্যকায়। চারপাশে দৃশ্যমান হয়েছে পর্বতবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনচিত্র। বৈভব ছড়িয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার উৎপাদিত বিবিধ ফসল থেকে বৈচিত্র্যময় কারুপণ্যসম্ভার। শতাধিক স্টলে ঠাঁই পেয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তৈরি পোশাক থেকে খাদ্য পণ্যের সমাহার। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে বিশেষভাবে নজর কাড়ে লালচে বর্ণের সূর্যমুখী কলা। বাঁশপাতায় মোড়ানো পিঠার স্বাদ নিয়ে দর্শনার্থীরা ঘুরেফিরে কিনে নিচ্ছে পছন্দের পণ্যটি। বৃত্তাকার মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ে উৎপাদিত বিন্নি ধান থেকে শুরু করে ভেজালহীন নানা ফলমূল। বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় দেখা মেলে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকার শিল্পীদের নৃত্য-গীতের সংস্কৃতির পরিবেশনা। এভাবেই সুন্দরের ছবি এঁকে বৃহস্পতিবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় শুরু হলো পার্বত্য মেলা। চার দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে দেশের পার্বত্য অঞ্চল। সেখানকার মানুষেরা আগের চেয়ে বেশি উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে এখনও নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে ভূমির বিষয়ে। এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে পার্বত্য এলাকা আরও বেশি উন্নত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য মেলা পাহাড়ী ও সমতলের বাঙালীদের সমন্বয়ে সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। একটা সময় ছিল পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পারত না। বিকেলের পর ঘর থেকে বের হতে পারত না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সেই পার্বত্য এলাকায় এখন শান্তি বিরাজ করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ। উদ্বোধনী আয়োজন শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুরুতেই ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটি গেয়ে শোনান কয়েল চাকমা। এরপর পরিবেশিত হয় চাকমাদের জুম নৃত্য। ‘গেংকুলী’ ও ‘চেংগে মেইনি কাচালাং’ গেয়ে শোনান কয়েল চাকমা, পার্কি চাকমা গেয়ে শোনান ‘হোচপানা হারে হয়’, তিশা দেওয়ান গেয়ে শোনান ‘মেঘ চাপা উড়ি যাদন’, জুনাকি ত্রিপুরা কণ্ঠে শোনান যান ত্রিপুরার গান ‘মাইসা খানু মাই খাং’ ও বাপ্পী দেওয়ান গেয়ে শোনান ‘ও মোর সোনার দেশচান’। ছিল দলীয় নৃত্য পরিবেশনা। ‘হিল্লো মিলোবী’ গানের সঙ্গে চাকমাদের জুম নৃত্য, ‘সাংগ্লাই মা লা লা’ গানের সঙ্গে মারমাদের ছাতা নৃত্য, ‘এক বছর পর ও বিঝু’ গানের সঙ্গে তঞ্চংগ্যা নৃত্য, ত্রিপুরাদের বাতল নৃত্য, রাখাইনদের প্রদীপ নৃত্য। রাঙ্গামাটি পার্বত জেলার বসবাসরত সখর সম্প্রদায়ের শিল্পীদের সমন্বয়ে সম্প্রীতি নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। মেলায় শতাধিক স্টলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জুমের উৎপাদিত কৃষি পণ্য, ফল-ফলাদি ও পাহাড়ী বিভিন্ন খাবার। সে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর ও সংস্থার স্টলও রয়েছে। পোশাক পরিচ্ছদ থেকে ঘর সাজানো পণ্যের সম্ভারে সজ্জিত স্টল ফিনারি। পাহাড়ী নারী উদ্যোক্তা ড চিং চিংয়ের স্টলটিতে রয়েছে রিক্সাচিত্র ওয়াইন বোতল সংগ্রহ করতে দেখা যায় অনেককে। এছাড়াও স্টলটিতে রয়েছে আদিবাসী পয়সার মালা, কানি মালা, মারমা শালের তৈরি পঞ্চ, শাল, উলের কম্বল, পিননের মেয়েদের কোটি, থাবিন কাপড়ের প্লাজো কিংবা থামি। রয়েছে স্বতন্ত্র শৈলিতে গড়া গ্লাস, চশমা, কেটলি, ট্রাঙ্ক, গহনার বাক্স, টিস্যু বক্স, ল্যাম্প, মোবাইল কভার, কানের দুল, চুড়ি, চাবির রিং, স্লিপ বক্স, কার্ড হোল্ডার, মাউস প্যাডসহ নানা পণ্য। হিলস্ বাজার নামের স্টলে মিলছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকের তরতাজা মাছ। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে কিনছিলেন চাপিলা, পামা, টেংরা, চিংড়ি, চেলা, রুই, কাতল, বোয়াল, আইড় ও গজাল মাছ। পাশের স্টলে রয়েছে সুস্বাদু লাল, কালো ও সাদা বিন্নি চাল। আরেক স্টলে ঠাঁই পেয়েছে রকমারি পাহাড়ী পিঠা।
×