ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় অবৈধ  স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতরের বিরুদ্ধে। এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে পাহাড়তলী বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা মহসীনের কলোনির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায়। এছাড়াও পাহাড়তলী রেল গেটের বিপরীত পার্শ্বে ৪০ বছর ধরে বিদ্যমান থাকা স’মিলসহ শতাধিক স্থাপনা। সেগুন বাগান এলাকায় থাকা এ/১ বাংলো সংলগ্ন স্থাপনা, মাস্টারলেনে থাকা সমাজকল্যাণ কার্যালয়, আকবরশাহ মাজারের সামনে ১০ বছর ধরে বিদ্যমান ৫৫৫ নং কোয়ার্টারের পার্শ্ববর্তী জনতা কিন্ডারগার্টেন। ফিরোজশাহ রেল গেট এলাকায় রেললাইন ঘেঁষেই প্রায় দুই একর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল মোটর গ্যারেজ, গাড়ির শোরুম ও স্টোন ক্রাশিং জোন। আবার অভিযোগ উঠেছে মতিঝর্ণা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করতে রেলের ডিজি বরাবর লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন স্থানীয় সাংসদ ডাঃ আফসারুল আমীন। তিনি এই অনুরোধের অনুলিপি প্রেরণ করেছেন বিভিন্ন দফতরে। অভিযোগ উঠেছে খুলশী থানাধীন মতিঝর্ণা এলাকা জামায়াত, বিএনপি ও বর্তমান সরকারের নেতাকর্মীদের দখলে রয়েছে। ফলে তিনটি দলের মধ্যে এক্ষেত্রে সমঝোতার অভিযোগও রয়েছে। অপরদিকে, পারিবারিক প্রয়োজনে রেলের বরাদ্দকৃত ঘরের পাশে খালি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে অভিযান টিম। এদিকে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজেন বেকারিতে জঙ্গী হামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত ছিল ২৭ নবেম্বর এবং ২৮ নবেম্বর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার রায় ঘোষণার ধার্য ছিল ফলে পাহাড়তলীর মাস্টারলেন ও পাঞ্জাবীলেন এলাকার উচ্ছেদে পুলিশ বরাদ্দ না পাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ছিল বুধ ও বৃহস্পতিবার। এদিকে, হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পরিবেশ ভবন সংলগ্ন ৮৫৫/এবিসি কোয়ার্টারের সীমানা প্রাচীরের বাহিরে থাকা খালি জায়গার ওপর। কিন্তু হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রেলের প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী আতিকুর রহমান প্রকাশ মোল্লা দেওয়াল ভেঙ্গে ওই স্থানে প্রবেশের পথ খুলেছে। এমনকি এর আগে আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ওই জায়গা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, ২০১৭ সালে প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট হলেও মোহাম্মদ শাহদাত হোসেন (বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত) এই আতিকুর রহমানের পক্ষে রেলের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে ডিভিশনাল এস্টেট অফিসার/পূর্ব এর দফতরে কর্মরতদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, পাঞ্জাবীলেন খ্যাত শহীদলেনে ৫৫৫/বি- নং কোয়ার্টারের পার্শ্বে জনতা কিন্ডারগার্টেন নির্মাণ করেছে রহিমা বেগম প্রকাশ লিলি। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট ও ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সেলিমের বোন। ২০০৯ সাল থেকে ১০ বছর ধরে এ ধরনের অবৈধ স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সাইনবোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এলাকায়। অপরদিকে, মাস্টারলেনে ই/৪৭ কোয়ার্টারের পার্শ্বে দোকান গড়ে তুলে ভাড়া দিয়েছে রেল কর্মচারী শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নিজাম (ওয়েম্যান/সীতাকু-)। এমনও অভিযোগ রয়েছে, এই ওয়েম্যানের কর্মস্থল সীতাকু- স্টেশন হলেও স্টেশন মাস্টারকে ম্যানেজ করে রেলের জায়গায় দোকান নির্মাণ করেছে। রেলের পক্ষ থেকে দু’দফায় এসব দোকান উচ্ছেদ করা হলেও রাতের আঁধারে আবারও নির্মাণ করেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, গত ৩ নবেম্বর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সেগুন বাগান মোড়ে ছাড় দিয়েছে অভিযান টিম। রেলের বর্তমানে স্টোর বিভাগের আওতায় থাকা কর্মচারী জাকির আহসান সেগুন বাগানের এ/১ দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ভবনের সিসি বিম ভেঙ্গে ২০১৭ সালে প্রাইভেট গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করলেও তা উচ্ছেদ করেনি অভিযান টিম। এছাড়াও পুরো ভবন ঘিরে খালি জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। যেখানে রয়েছে মাদকের ও অসামাজিক কাজের রমরমা বাণিজ্য। আরও অভিযোগ রয়েছে, রেলে কর্মরত অবস্থায় থেকে তিনি চাকরি ফাঁকি দিয়ে রেলে নামে বেনামে ব্যবসাও পরিচালনা করে আসছেন তিনি। স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান খুলে অফিস সময়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। রেলের সাপ্লাইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের ভোটার তালিকায় তার নামও রয়েছে স্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে। এছাড়াও বরাদ্দকৃত বাংলোর আশপাশে মাদকের আস্তানা গড়ে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসলেও প্রকৌশল বিভাগ কিছুই বলছে না মাসোয়ারার কারণে। এ ব্যাপারে রেলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম জনকণ্ঠকে জানান, কিছু কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে আমাদের ভুল তথ্য দিচ্ছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় এসব স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করব। ধুলাদূষণ কমাতে ডিএসসিসির ক্র্যাশ প্রোগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকা দিন দিন দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। কোন মৌসুমেই নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারে না। বর্ষাকালে রাজধানীবাসীকে ভুগতে হয় জলাবদ্ধতায় আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোর দুর্ভোগ। উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীতে ধুলাদূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। এবার শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে ধুলোর বিপদ। রাজধানীতে যে হারে উন্নয়ন কাজের নামে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে তাতে দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় রাজধানীবাসীকে ধুলার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। মূলত ধুলাদূষণকারীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান পরিচালিত হবে। অর্থাৎ যেসব স্থানে উন্নয়নের কাজ চলছে, যেসব স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে কেউ যদি অযথা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ময়লা, বায়ুদূষণের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখেন, তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে খুব শীঘ্রই এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করবে সংস্থাটি। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ মোকাবেলার অংশ হিসেবে ধুলাদূষণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নগরীতে পানি ছিটানোর ‘স্পেশাল ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ সম্প্রতি চালু করেছে ডিএসসিসি। এ প্রোগ্রামে ৯টি গাড়ি দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকায় পানি ছেটানো হবে। এ কার্যক্রমের আওতায় কাকড়াইল হতে মৎস্যভবন, গুলিস্তান রোড পর্যন্ত প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে দুটি ট্রিপে পানি ছেটানো হবে। এ ছাড়া তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, পলাশী, শাহবাগ, কাটাবন, সাতমসজিদ রোড, হাজারীবাগ, জিগাতলা, সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত, হাতিরপুল, মগবাজার, কাকরাইল, শান্তিনগরসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রায় সব এলাকায় সারাদিনে দু-বার পানি ছিটানো হবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব পালন করে পরিবেশ অধিদফতর। কিন্তু নাগরিকদের কথা বিবেচনা করে আমরা একটি বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি। ডিএসসিসির যেসব প্রাইমারি রোড আছে সেগুলোতে আমরা সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং বিকেলে ২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুই বেলা পানি ছিটিয়ে ধুলা এবং বায়ুদূষণ রোধ করার চেষ্টা করব। অহেতুক ও ইচ্ছাকৃত খোঁড়াখুঁড়ি, ধুলাদূষণের পরিবেশের ভোগান্তি এড়াতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
×